প্রায় ৩ বছর ধরে নিজ সন্তানকে পায়ে লোহার শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে বন্দী করে রেখেছেন অসহায় পিতামাতা। কোনমতে নুন-ভাতে কাটে তাঁদের জীবন। ছেলেদের চিকিৎসার চিন্তা তাঁদের বিলাসিতার সমান। সন্তানদের চিকিৎসা দরিদ্র পিতার জন্য বিরাট পাহাড়ের মতো হলেও স্নেহের কমতি নেই তার সন্তানদের প্রতি। তাদের ২ ছেলে প্রতিবন্ধি। তাদের চোখ বুজলে ছেলেদের কী হবে? মানিক হোসেন (২১)। সে জন্ম থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন ও বাকপ্রতিবন্ধি। তাকে প্রায় ৩ বছর ধরে পায়ে লোহার শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এ ঘটনাটি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের খামার সাতনালা গ্রামের বেরুবাড়িতে ঘটেছে। মানিক হোসেন বেরুবাড়ির আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
এলাকাবাসী ও তার পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, মানিক হোসেন জন্ম থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন ও বাকপ্রতিবন্ধি। প্রায় ৩ বছর ধরে পায়ে লোহার শিকলবন্দী জীবন কাটছে তার। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে আর দশটা শিশুর মতো প্রাণোচ্ছল শৈশব পায়নি সে। অর্থাভাবে তার চিকিৎসাও বন্ধ রয়েছে। বড় ২ সন্তানের দুশ্চিন্তায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় দিন কাটছে পিতামাতার।
মানিক হোসেনের পিতা আনোয়ার হোসেন জানান, তার বৃদ্ধামাতা, স্বামী-স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে পরিবারে ৮জন সদস্য। সে টিউবওয়েলের মিস্ত্রির সহকারি হিসেবে কাজ করেন। তিনিই একমাত্র সংসারের উপার্জনকারী ব্যক্তি। সম্পদ বলতে ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। তার আয়-রোজগারেই চলে ৮ জনের সংসারের যাবতীয় খরচ। মানিক সবার বড়। তার আরেক ছোটভাই মাহফুজুুর রহমান (১৪)। সেও শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধি। বর্তমানে কাজ-কর্মও তেমন নেই। তাই বাধ্য হয়ে ছেলের চিকিৎসা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সরজমিনে দেখা গেছে, মানিককে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে তালা মেরে ঘরের মধ্যে বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। কখনো সে দাঁড়িয়ে থাকছে, কখনো সে বসে সময় কাটাচ্ছে। চিৎকার-চেঁচামেচি আর হাসি-কান্নার মধ্যদিয়েই কাটছে তার জীবন।
তার মাতা মরিয়ম বেগম জাগো২৪.নেট-কে জানান, বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার-কবিরাজের নিকট চিকিৎসা করিয়েও তার অবস্থার উন্নতি করা যায়নি। চিকিৎসা করালে সে কিছুটা সুস্থ থাকে। বর্তমানে অর্থাভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে সে এদিক-সেদিক চলে যায়। বাড়ি থেকে সে মাঝে-মধ্যে নিখোঁজ হয়ে যেত। এ পর্যন্ত সে ৩ বার নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। তাকে অনেক খোঁজাখুজি করে বাড়িতে আনা হতো। সর্বশেষ তাকে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থেকে ১ মাস ১০ দিন পর উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তিনি আরো বলেন, কেউ আমার ছেলের চিকিৎসায় যদি এগিয়ে আসতেন, তবে সে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতো। তার মাসহ কয়েকজন প্রতিবেশি জানান, মানিক যেকোন লোকজনকে কামড় দিয়ে আঘাত করে থাকে। তাই আমরা নিরুপায় হয়ে গত ৩ বছর ধরে পায়ে লোহার শিকলে তালা মেরে বেঁধে রাখছি তাকে। আনোয়ারের পরিবারের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকার মানুষের।
মো. রফিকুল ইসলাম, করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) 


















