মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

দাবদাহে ভোগান্তিতে নিম্নআয়ের মানুষ

মো. রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর)
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪
ছবি: প্রতিকী

মো. রফিকুল ইসলাম: কামের জন্য বাইর না হইলে হয়। হামরা দিনমজুর একদিন কাম না কইরলে খামো কি? সংসার চলিবে ক্যামন করি? কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার গ্রামীণ শহর রানীরবন্দর বাসস্ট্যান্ডে উপজেলার ২নং সাতনালা ইউনিয়নের খামার সাতনালা গ্রামের রিকশাভ্যান চালক মো. আব্দুল মান্নান (৬২)। তিনি জানান, এই গরমের কারণে মানুষ আমাদের রিকশাভ্যানে উঠতে চান না। এতে করে আমাদের আগের মতো আর আয়-রোজগারও হচ্ছে না। আগে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয়-রোজগার হলেও এখন তা হচ্ছে না। বর্তমানে সারাদিন মিলে ৩০০-৩৫০ টাকা আয় হচ্ছে। যা দিয়ে সংসার চালানো খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে।

সারাদেশের ন্যায় গত কয়েকদিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত গরম বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘর থেকে বাইরে বের হলেই শরীর রোদে পুড়ে যায় এমন অবস্থা। কিন্তু প্রচন্ড গরমের মধ্যেও বের হতে হয় নিম্নআয়ের মানুষদের। চলমান তীব্র তাপদাহ আর কড়া রোদে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে মাঠে রোদে পুড়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। আম-লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে।চলমান তীব্র দাবদাহের কারণে পেটের পীড়া, সর্দিকাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশুন্যতা, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলার ১নং নশরতপুর ইউনিয়নের বালাপাড়ার রিকশাভ্যানচালক রবিউল ইসলাম (৪০) জাগো২৪.নেট-কে জানান, আমি ১০-১২ বছরের বেশি সময় ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রিকশাভ্যান চালাই। তিনি বলেন, প্রতিবছর এসময় রিকশাভ্যান চালাতে কষ্ট হয় তার। তবে এ বছর তীব্র দাবদাহের কারণে রিকশাভ্যান চালানো আরও বেশি কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তারপরেও পেটের ক্ষুধার কারণে কাঠফাটা রোদের মধ্যে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে অর্থ উপার্জন করতে হচ্ছে তাকে। তা-না হলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

একই অবস্থা ইজিবাইক চালকসহ শ্রমজীবী নিম্নআয়ের সকল মানুষের। উপজেলার ১১নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শাহপাড়ার ইজিবাইক চালক হাবিবুর রহমান (৩৫) জানান, এ গরমে লোকজন নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে কোথাও যাচ্ছেন। এতে করে আগের মতো রোজগার হচ্ছে। আগে দৈনিক ১ হাজার -১ হাজার ২০০ টাকা রোজগার হতো। এতে সংসারের খরচ চলতো। কিন্তু এ গরমের কারণে রাস্তায় তেমন লোকজন না থাকায় দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা আয় হচ্ছে। গাড়ির মালিককে ৪০০ টাকা করে জমা দিতে হয়। মালিককে জমার টাকা দেয়ার পর যে টাকা থাকে তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলছে।

উপজেলার ১০ নং পুনট্টি ইউনিয়নের হরনন্দপুর গ্রামের কৃষি শ্রমিক আরমান আলী (৪৭) ও ইকবাল হোসেন (৪০) জাগো২৪.নেট-কে জানান, তীব্র গরমের কারণে ক্ষেতের মধ্যে ঠিকমতো কাজকাম করা যাচ্ছে। গরমে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরছে। এজন্য মাঝে-মধ্যে বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে। তারপরেও পরিবারের সদস্যদের মুখের দিকে তাঁকিয়ে কষ্ট করে হলেও আমাদের ক্ষেত-খামারে কাজ-কাম করতে হচ্ছে। তা-না হলে আমাদের যে না খেয়ে উপোস থাকতে হবে। না খেয়েই বা কয়দিন থাকা যায়। দাবদাহ এসব মানুষের কষ্টের জীবনকে আরও কষ্টকর করে তুলেছে। গত কয়েকদিন ধরে দিনাজপুরে ৩৫-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে বিরাজ করছে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন