শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০২:৫৯ অপরাহ্ন

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: এখনও থামেনি হতাহতের স্বজনদের কান্না-আতঙ্ক

তোফায়েল/শামীম. জাগো২৪.নেট
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

তোফায়েল/শামীম: আজকের এইদিনে সাভারের রানা প্লাজা হয়ে উঠেছিলো দুঃখ-বেদনার এক শোকগাঁথা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে ধসে পড়েছিল রানা প্লাজা নামের নয়তলা ভবনটি। এর মধ্যে গাইবান্ধা জেলার প্রায় অর্ধশত শ্রমিক হতাহত হয়। আরও নিখোঁজ আছেন  বেশ কয়েকজন। দীর্ঘ ১১ বছর আগের হৃদয় বিদারক এই ঘটনায় আজও কান্না-আতঙ্ক থামেনি ওইসব পরিবারের স্বজনদের।

সম্প্রতি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে শোনা গেল হতাহত ও নিখোঁজ স্বজনদের দুঃখ-বেদনার এক শোকগাঁথ গল্প। বেদনাবিধুর স্মৃতিতে হাউমাউ কের কেদে ওঠেন তারা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দামোদরপুর ইউনিয়নের মধ্য ভাঙ্গামোড় গ্রামের ওয়াহেদ আলী ও মনজিলা বেগম দম্পতির ছেলে সবুজ মিয়া (২০) নামের এক পোশাক শ্রমিক রানা প্লাজা ধসে  নিহত হয়। এছাড়া এই পরিবারের নিখোঁজ হয়েছেন আব্দুল বারি ও আনজুয়ারা দম্পতির মেয়ে বিথি খাতুন (২০) নিখোঁজের ১১ বছরেও  তাকে খুঁজে পাইনি স্বজনরা। আর বিথির ছোট বোন ফাইমা খাতুন (১৮) ধ্বংসস্তুপের নিচে পড়ে প্রাণে রক্ষা করেছেন উদ্ধার কর্মীরা। আজও বিথির সন্ধানে ছবি বুকে নিয়ে অঝড়ে কাঁদছেন আনজুয়ারা বেগম। এ ঘটনার ১১ বছর অতিবাহিত হলেও, আজও কান্না থামেনি ছেলে হারা মা মনজিলা বেগমের। যেনো ছেলে হারা শোকে বাকরুদ্ধ অবস্থা তার।

কিশামত দশলিয়া গ্রামের ভূমিহীন পঞ্চনন বাবুর মেয়ে স্মৃতিরাণী (২০)। নিজে জায়গা জমি কিনে ঘরবাড়ি করবেন, এমন স্বপ্নে পাড়ি দিয়েছিলেন ঢাকার সভার এলাকায়। কিন্তু সেখানকার রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারিয়েছে স্মৃতিরানী। চোখেমুখে চরম হতাশার ছাপ নিয়ে এ তথ্য জানালেন নিহত স্মৃতিরাণীর মা সন্ধ্যারাণী। নিহত স্মৃতিরাণীর মা সন্ধ্যারানী জানান, ইচ্ছে ছিল মেয়ের বেতনের টাকা যোগার করে কয়েকশতক জায়গা কিনে ঘরবাড়ি করা হবে কিন্তু সেই ইচ্ছেটুকু পূরণ হওয়ার আগেই স্মৃতিরানীকে প্রাণ দিতে হয়েছে রানা প্লাজা ভবনে। এই মেয়েটির শোক নিয়ে এখনো অন্যের জমিতে বসবাস করতে হচ্ছে।

এ প্লাজাটির ধ্বংসস্তুপ থেকে প্রাণে উদ্ধার হয়েছিলেন সাদুল্লাপুর উপজেলার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান ও মনিফা বেগম নামের দম্পতি। সেই ভয়বহ দুর্ঘটনার আতঙ্ক এখনো কাটেনি এ দম্পতির। ২০১৩ সালেল ২৪ এপ্রিল পৌনে নয়টার দিকে রানা প্লাজাটি ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে। সেইদিন এ ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন তার মাকে, কেউ তার বাবা, কেউ তার ভাই, কেউ বোন, কেউ তার স্ত্রী, কেউ আবার স্বামীকে। আর ইট-কংক্রিটের ধ্বংস্তুপের চিপায় আটকা পড়ছিলেন হাজার হাজার শ্রমিক। এসবের মধ্যে জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী মনিফা বেগমও আটকা পড়ছিলেন। আর ইট-খোয়ার আঘাতে মাথা ফেঁটে যায় জিউয়ার রহমানের। এসময় ভবন ধসে পড়া ছাদের ফাঁকে কোনোমতে শুয়ে ছিলেন তারা। সেখানে বসে থাকার সুযোগ ছিল না। যেন বুকের উপরে লেগে রয়েছে ছাদটি। সকাল থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত এক অন্ধকার অবস্থায় শুয়ে থাকতে হয়েছে তাদেরকে। এরই মধ্যে উদ্ধার কর্মীদলের আওয়াজ শুনতে পান। কর্মীর কথামতে শুয়ে শুয়ে এগুতে থাকে জিউয়ার ও মনিফা। এরপর একটা ফাঁকা যায়গার ভেতর দিয়ে হাত উঠিয়ে দেওয়া হয়। এরমধ্যে উদ্ধার কর্মীরা তাদেরকে টেনে উপরে উঠায়। এভাবে প্রাণে বেঁচে যায় আহত দম্পতি জিয়াউর ও মনিফা।

অপরদিকে ওই ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন কিশামত দশলিয়া গ্রামেমের দিনমজুর সোনা মিয়ার স্ত্রী কামনা বেগম (২৫)। নিখোঁজের ১১ বছরেও  তাকে খুঁজে পাইনি কামনার একমাত্র ছেলে কামরুল ইসলাম। এখন মা হারা হয়ে অতিকষ্টে বড় হচ্ছে দাদির কোলে। আর এই কামনাকে হারানোর শোকে বৃদ্ধা মা মফিজান বেগমের এখনো নির্ঘুম রাত কাটে। 

এ বিষয়ে সাদুল্লাপুরের দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় এ এলাকায় প্রায় ২০ জন শ্রমিক হতাহত এবং আরও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে।পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

 

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন