বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খানসামায় সবুজের বুকে সূর্যমূখীর হাসি

দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঝে এখন শোভা পাচ্ছে নয়নাভিরাম সূর্যমূখীর হলদে ফুলের হাসি। সে হাসিতেই কৃষকের মুখেও ফুটেছে স্বস্তির হাসি। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ জুড়ে চোখ জুড়ানো মনোমুগ্ধকর হলুদের সমারোহ। সবুজ গাছের মাথায় থাকা এসব হলদে ফুল সূর্যের দিকে মুখ করে বাতাসে দুলছে। ফুলে ফুলে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছি-প্রজাপতি। আকৃষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেই দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে কেউবা সেলফি, কেউবা স্বজন নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছবি তুলতে ভিড় করছে সব বয়সের নারী পুরুষ। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করতে ছুটে যাচ্ছেন সূর্যমূখী হলুদ ছড়ানো জমিতে। খানসামা উপজেলায় সবুজ ফসলি মাঠের সূর্যমূখী জমিতে এভাবেই ছুটে আসছেন ছবি তুলতে ও দেখতে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। সত্যিই অপরুপ দৃশ্য। কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার না হলে এবার সূর্যমূখীর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। বাজার ব্যবস্থাপনা, সেচ ব্যবস্থা, ঋন সুবিধা পেলে সূর্যমূখী চাষের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে ধারণা কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের। সূর্যমূখী চাষে উৎকৃষ্টমানের ভোজ্য তেলের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ১২০জন কৃষক ১২০বিঘা জমিতে সূর্যমূখী চাষ করেছেন। সূর্যমুখী চাষে অপার সম্ভাবনা থাকায় কৃৃৃৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে এবং আগামীতে আরো বেশি চাষ হবে বলে কৃষকরা জানায়। সূর্যমুখী চাষে খরচ কম লাভ বেশি। উপজেলার গোয়ালডিহি, গোবিন্দপুর, বালাপাড়া, খামারপাড়া, টংগুয়া, হোসেনপুর, ভান্ডারদহ, দুহশুহ, নেউলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়- রসুন, ধান, ভ‚ট্টা, গম চাষের পাশাপাশি এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সূর্যমুখী চাষ। মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ।

সূর্যমুখী চাষি ভান্ডারদহ গ্রামের নুরল ইসলাম জানান, ধান-পাট চাষে প্রচুর পরিশ্রম এবং খরচ হয় কিন্তু সূর্যমুখী চাষে খরচ কম লাভ বেশি। যে কারণে আগামীতে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকবে। সূর্যমুখীর কান্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও বিক্রি করা যাবে। যা থেকে বাড়তি একটা লাভ মিলবে। চাষে তেমন কোন ঝামেলা নেই। শুধুমাত্র দুটি সেচ দিলে এবং ফুলগুলো একটু পর্যবেক্ষণ করলেই হলো।

নেউলা গ্রামের কৃষক সাফিয়ার রহমান জানান, টেলিভিশনে দেখে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কৃষি অফিসের সহায়তায় এবার প্রথম আমি এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। সার, সেচ ও কীটনাশক মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে ব্যয় হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা। যদি প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয় তাহলে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, সূর্যমুখী চাষ করে এবার যে আনন্দ পাচ্ছি সেটা হচ্ছে, অনেকে আমার জমিতে এসে ছবি তুলছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সূর্যমূখী চাষি সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন জানান, উপজেলায় প্রথমবারের মতো সূর্যমূখী চাষ হচ্ছে। আগে কখনও বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমূখী চাষ হয়নি। আগে অনেকেই বাড়ির শোভাবর্ধনে সূর্যমূখী লাগাতেন। কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। নতুন ফসল সম্পর্কে বালাপাড়া গ্রামের নুরল ইসলাম ও খামারপাড়া গ্রামের ইয়াকুব আলী জানান, আমরা ইতিপূর্বে কখনও সূর্যমূখী চাষ করিনি। কেবল সূর্যমূখী চাষ এবং তেলের কথা শুনেছি। এবার নিজেই চাষ করছি। শুনেছি সূর্যমূখী লাভজনক ফসল। আগামী দুই মাসের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যাবে।

সূর্যমূখী চাষের সম্প্রসারণ ঘটাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপÍর প্রণোদনা হিসেবে উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ১২০জন কৃষককে এক কেজি করে আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমূখী বীজ প্রদান করা হয় এবং ১২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে। বর্তমানে ক্ষেতে ফুল আসায় ফুলের সাথে চাষির মুখেও হাসি ফুটেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় জাগো২৪.নেট-কে জানান, সূর্যমুখী একটি তেল ফসল। সূর্যমূখী মানবদেহের নিরাপদ পুষ্টি চাহিদা পুরণ ও বাজারে থাকা ভোজ্য তেলের বিকল্প হিসেবে চাষ করা হচ্ছে। এটি শরীরের কোলেস্টেরল ঠিক রাখে। চাষিদের এসব ফসল বাজারজাত করতে কৃষি অফিস সার্বিক সহযোগিতা করবে। সূর্যমূখী বীজ থেকে স্থানীয়ভাবে তেল তৈরিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। উপজেলায় নতুন এ ফসলটি সম্প্রসারণ ও উন্নত চাষ পদ্ধতি ব্যবহারে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝে এটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আগামী বছর হাজার বিঘা জমিতে এর চাষ হবে বলে আশাপোষণ করছি।

জনপ্রিয়

খানসামায় সবুজের বুকে সূর্যমূখীর হাসি

প্রকাশের সময়: ০৫:৪৩:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ মার্চ ২০২১

দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঝে এখন শোভা পাচ্ছে নয়নাভিরাম সূর্যমূখীর হলদে ফুলের হাসি। সে হাসিতেই কৃষকের মুখেও ফুটেছে স্বস্তির হাসি। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ জুড়ে চোখ জুড়ানো মনোমুগ্ধকর হলুদের সমারোহ। সবুজ গাছের মাথায় থাকা এসব হলদে ফুল সূর্যের দিকে মুখ করে বাতাসে দুলছে। ফুলে ফুলে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছি-প্রজাপতি। আকৃষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেই দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে কেউবা সেলফি, কেউবা স্বজন নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছবি তুলতে ভিড় করছে সব বয়সের নারী পুরুষ। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করতে ছুটে যাচ্ছেন সূর্যমূখী হলুদ ছড়ানো জমিতে। খানসামা উপজেলায় সবুজ ফসলি মাঠের সূর্যমূখী জমিতে এভাবেই ছুটে আসছেন ছবি তুলতে ও দেখতে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। সত্যিই অপরুপ দৃশ্য। কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার না হলে এবার সূর্যমূখীর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। বাজার ব্যবস্থাপনা, সেচ ব্যবস্থা, ঋন সুবিধা পেলে সূর্যমূখী চাষের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে ধারণা কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের। সূর্যমূখী চাষে উৎকৃষ্টমানের ভোজ্য তেলের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ১২০জন কৃষক ১২০বিঘা জমিতে সূর্যমূখী চাষ করেছেন। সূর্যমুখী চাষে অপার সম্ভাবনা থাকায় কৃৃৃৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে এবং আগামীতে আরো বেশি চাষ হবে বলে কৃষকরা জানায়। সূর্যমুখী চাষে খরচ কম লাভ বেশি। উপজেলার গোয়ালডিহি, গোবিন্দপুর, বালাপাড়া, খামারপাড়া, টংগুয়া, হোসেনপুর, ভান্ডারদহ, দুহশুহ, নেউলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়- রসুন, ধান, ভ‚ট্টা, গম চাষের পাশাপাশি এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সূর্যমুখী চাষ। মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ।

সূর্যমুখী চাষি ভান্ডারদহ গ্রামের নুরল ইসলাম জানান, ধান-পাট চাষে প্রচুর পরিশ্রম এবং খরচ হয় কিন্তু সূর্যমুখী চাষে খরচ কম লাভ বেশি। যে কারণে আগামীতে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকবে। সূর্যমুখীর কান্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও বিক্রি করা যাবে। যা থেকে বাড়তি একটা লাভ মিলবে। চাষে তেমন কোন ঝামেলা নেই। শুধুমাত্র দুটি সেচ দিলে এবং ফুলগুলো একটু পর্যবেক্ষণ করলেই হলো।

নেউলা গ্রামের কৃষক সাফিয়ার রহমান জানান, টেলিভিশনে দেখে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কৃষি অফিসের সহায়তায় এবার প্রথম আমি এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। সার, সেচ ও কীটনাশক মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে ব্যয় হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা। যদি প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয় তাহলে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, সূর্যমুখী চাষ করে এবার যে আনন্দ পাচ্ছি সেটা হচ্ছে, অনেকে আমার জমিতে এসে ছবি তুলছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সূর্যমূখী চাষি সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন জানান, উপজেলায় প্রথমবারের মতো সূর্যমূখী চাষ হচ্ছে। আগে কখনও বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমূখী চাষ হয়নি। আগে অনেকেই বাড়ির শোভাবর্ধনে সূর্যমূখী লাগাতেন। কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। নতুন ফসল সম্পর্কে বালাপাড়া গ্রামের নুরল ইসলাম ও খামারপাড়া গ্রামের ইয়াকুব আলী জানান, আমরা ইতিপূর্বে কখনও সূর্যমূখী চাষ করিনি। কেবল সূর্যমূখী চাষ এবং তেলের কথা শুনেছি। এবার নিজেই চাষ করছি। শুনেছি সূর্যমূখী লাভজনক ফসল। আগামী দুই মাসের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যাবে।

সূর্যমূখী চাষের সম্প্রসারণ ঘটাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপÍর প্রণোদনা হিসেবে উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ১২০জন কৃষককে এক কেজি করে আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমূখী বীজ প্রদান করা হয় এবং ১২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে। বর্তমানে ক্ষেতে ফুল আসায় ফুলের সাথে চাষির মুখেও হাসি ফুটেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় জাগো২৪.নেট-কে জানান, সূর্যমুখী একটি তেল ফসল। সূর্যমূখী মানবদেহের নিরাপদ পুষ্টি চাহিদা পুরণ ও বাজারে থাকা ভোজ্য তেলের বিকল্প হিসেবে চাষ করা হচ্ছে। এটি শরীরের কোলেস্টেরল ঠিক রাখে। চাষিদের এসব ফসল বাজারজাত করতে কৃষি অফিস সার্বিক সহযোগিতা করবে। সূর্যমূখী বীজ থেকে স্থানীয়ভাবে তেল তৈরিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। উপজেলায় নতুন এ ফসলটি সম্প্রসারণ ও উন্নত চাষ পদ্ধতি ব্যবহারে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝে এটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আগামী বছর হাজার বিঘা জমিতে এর চাষ হবে বলে আশাপোষণ করছি।