রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিপুণ হাতে স্বপ্ন বুনছেন একঝাঁক নারী

Digital Camera

বিধবা লাইজু বেগম। বয়স প্রায় ৪০ বছর। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি স্থানীয় নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবেন, এমন স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। সেটির বাস্তবরূপ দিতে এরই মধ্যে শুরু করেছেন কারুশিল্পের কাজ। ইতোমধ্যে এ কাজে যুক্ত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন নারী। তাদের হাতের নিপুণতায় নানা পণ্য তৈরীতে দিনব্যাপী বুনছেন কটন সুতা।

উদ্যোক্তা এই লাইজু বেগমের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের পার আমলাগাছী(খিলিবাড়ী) গ্রামে। স্বামী হাবিবুর রহমান মারা যাবার পর ঢোলভাঙ্গা এলাকা সংলগ্ন এই গ্রামের বাবার বাড়ীতে বসবাস করছেন তিনি।সেখানে শুরু করেছে কারুশিল্পের কার্যক্রম।

সরেজিমেন জানা যায়, গত ২০০৪ সালে লাইজু বেগমের বিয়ে করেন একই উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের গোপীনাথ গ্রামের হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। এ বিয়ের এক বছরের মধ্যে লাইজুর কোলজুড়ে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। আর এ সন্তান জন্মের সাড়ে ৩ বছর পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় স্বামী হাবিবুর। এরপর ৯ বছর ধরে লাইজু বেগম ঠাঁই নিয়েছে বাবার বাড়িতে। এ বাড়িতে দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। আর এই দরিদ্রতাকে বিদায় জানাতে দীর্ঘদিন ধরে নানা স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি।

বিদ্যমান অবস্থায় বিআরডিবি নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কারুশিল্প বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে লাইজু। এ প্রশিক্ষণটি কাজে লাগানোর চেষ্টায় বার বার ব্যর্থ হচ্ছিলেন। কারণ, অস্বচ্ছলতার কষাঘাতে অর্থের যোগান দিতে পারছিলেন না। তবুও মনোবল হারায়নি সংগ্রামী এই নারী লাইজু বেগম। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি এলাকার নারীদেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবেন, এই দৃঢ় মনোবল নিয়ে নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত থাকে তার।

সম্প্রতি ‘গণ উন্নয়ন কেন্দ্র’ (জিইউকে) এর বাস্তবায়নে ‘সিপ’ প্রকল্পের কর্মীরা লাইজুর ইচ্ছেশক্তি দেখে কারুশিল্পের পণ্য তৈরীর কাজ করার সুযোগ করে দেন। সিপ প্রকল্পের সার্বিক সহযোগিতায় ও লাইজুর উদ্যোগে স্থানীয় ১৫ জন নারীকে নিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ছোট-বড় পাপোশ, ঝুট পাপোশ. টেবিল মেট, ওয়াল মেট, জায় নামাজসহ নানা ধরণের পণ্যসামগ্রী। এসব পণ্য তৈরীতে রংপুর কারুপল্লীর আলেয়া বেগম নামের এক নারী প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে একঝাঁক নারী কটন সুতার কারুকার্যে হাতের নিপুণতায় নান্দনিক ভাবে তৈরী করছেন ওইসব পণ্যসাগ্রী। এ কাজ করেই তারা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

এই উৎপাদক দলের সদস্য শাহিনুর আকতার বলেন, সিপ প্রকল্পের আয়োজনে ও লাইজু বেগমের উদ্যোগে কারুশিল্পের কার্যক্রম শুরু করেছি। এ কাজ শিখে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে আনা সম্ভব হতে পারে।

উদ্যোক্তা লাইজু বেগম বলেন, কারুশিল্প বিষয়ে প্রথমে বিআরডিবি নামের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এরপর অর্থাভাবে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান দ্বার করাতে পারিনি। বর্তমানে ‘গণ উন্নয়ন কেন্দ্র’ (জিইউকে) সিপ প্রকল্পের সার্বিক সহযোগিতায় কারুশিল্পের কাজটি শুরু করা হয়েছে। এটি থেকে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে স্বাবলম্বী হওয়া যাবে। এটি অত্যান্ত লাভজনক ব্যবসা।

রংপুর কারুপল্লীর প্রশিক্ষক আলেয়া বেগম জানান, উৎপাদক নামের এই দলটির দক্ষতা উন্নয়নে কারুশিল্পের পণ্য তৈরী কাজ শেখানো হচ্ছে। এখানকার ১৫ জন নারী সবাই মনোযোগ দিয়ে এ কাজটি করছে।

‘গণ উন্নয়ন কেন্দ্র’ (জিইউকে) এর  সিপ প্রকল্পের ফিল্ড ফ্যাসিলিটর পুতুল চক্রবর্তী জানান, কারুশিল্প দ্বারা তৈরিকৃত পণ্য নান্দনিক ও সুন্দর হয়। আধুনিকাতার যুগে সব পরিবারই এসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তাই এ শিল্পের উদ্যোক্তা তৈরী করতে ৩৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণটি শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের এ ব্যবসায় মূলধন করে দেবে সিপ প্রকল্পটি।

তিনি আরো বলেন, গ্রামের নারীরাও দক্ষ, কিন্তু তাদের সঠিক শিক্ষা নেই বলে অবহেলিত এবং অন্য কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাই তাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশের উন্নতিতে এ শিল্প ভূমিকা রাখবে।

 

জনপ্রিয়

নিপুণ হাতে স্বপ্ন বুনছেন একঝাঁক নারী

প্রকাশের সময়: ০৭:০০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মার্চ ২০২১

বিধবা লাইজু বেগম। বয়স প্রায় ৪০ বছর। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি স্থানীয় নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবেন, এমন স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। সেটির বাস্তবরূপ দিতে এরই মধ্যে শুরু করেছেন কারুশিল্পের কাজ। ইতোমধ্যে এ কাজে যুক্ত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন নারী। তাদের হাতের নিপুণতায় নানা পণ্য তৈরীতে দিনব্যাপী বুনছেন কটন সুতা।

উদ্যোক্তা এই লাইজু বেগমের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের পার আমলাগাছী(খিলিবাড়ী) গ্রামে। স্বামী হাবিবুর রহমান মারা যাবার পর ঢোলভাঙ্গা এলাকা সংলগ্ন এই গ্রামের বাবার বাড়ীতে বসবাস করছেন তিনি।সেখানে শুরু করেছে কারুশিল্পের কার্যক্রম।

সরেজিমেন জানা যায়, গত ২০০৪ সালে লাইজু বেগমের বিয়ে করেন একই উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের গোপীনাথ গ্রামের হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। এ বিয়ের এক বছরের মধ্যে লাইজুর কোলজুড়ে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। আর এ সন্তান জন্মের সাড়ে ৩ বছর পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় স্বামী হাবিবুর। এরপর ৯ বছর ধরে লাইজু বেগম ঠাঁই নিয়েছে বাবার বাড়িতে। এ বাড়িতে দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। আর এই দরিদ্রতাকে বিদায় জানাতে দীর্ঘদিন ধরে নানা স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি।

বিদ্যমান অবস্থায় বিআরডিবি নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কারুশিল্প বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে লাইজু। এ প্রশিক্ষণটি কাজে লাগানোর চেষ্টায় বার বার ব্যর্থ হচ্ছিলেন। কারণ, অস্বচ্ছলতার কষাঘাতে অর্থের যোগান দিতে পারছিলেন না। তবুও মনোবল হারায়নি সংগ্রামী এই নারী লাইজু বেগম। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি এলাকার নারীদেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবেন, এই দৃঢ় মনোবল নিয়ে নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত থাকে তার।

সম্প্রতি ‘গণ উন্নয়ন কেন্দ্র’ (জিইউকে) এর বাস্তবায়নে ‘সিপ’ প্রকল্পের কর্মীরা লাইজুর ইচ্ছেশক্তি দেখে কারুশিল্পের পণ্য তৈরীর কাজ করার সুযোগ করে দেন। সিপ প্রকল্পের সার্বিক সহযোগিতায় ও লাইজুর উদ্যোগে স্থানীয় ১৫ জন নারীকে নিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ছোট-বড় পাপোশ, ঝুট পাপোশ. টেবিল মেট, ওয়াল মেট, জায় নামাজসহ নানা ধরণের পণ্যসামগ্রী। এসব পণ্য তৈরীতে রংপুর কারুপল্লীর আলেয়া বেগম নামের এক নারী প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে একঝাঁক নারী কটন সুতার কারুকার্যে হাতের নিপুণতায় নান্দনিক ভাবে তৈরী করছেন ওইসব পণ্যসাগ্রী। এ কাজ করেই তারা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

এই উৎপাদক দলের সদস্য শাহিনুর আকতার বলেন, সিপ প্রকল্পের আয়োজনে ও লাইজু বেগমের উদ্যোগে কারুশিল্পের কার্যক্রম শুরু করেছি। এ কাজ শিখে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে আনা সম্ভব হতে পারে।

উদ্যোক্তা লাইজু বেগম বলেন, কারুশিল্প বিষয়ে প্রথমে বিআরডিবি নামের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এরপর অর্থাভাবে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান দ্বার করাতে পারিনি। বর্তমানে ‘গণ উন্নয়ন কেন্দ্র’ (জিইউকে) সিপ প্রকল্পের সার্বিক সহযোগিতায় কারুশিল্পের কাজটি শুরু করা হয়েছে। এটি থেকে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে স্বাবলম্বী হওয়া যাবে। এটি অত্যান্ত লাভজনক ব্যবসা।

রংপুর কারুপল্লীর প্রশিক্ষক আলেয়া বেগম জানান, উৎপাদক নামের এই দলটির দক্ষতা উন্নয়নে কারুশিল্পের পণ্য তৈরী কাজ শেখানো হচ্ছে। এখানকার ১৫ জন নারী সবাই মনোযোগ দিয়ে এ কাজটি করছে।

‘গণ উন্নয়ন কেন্দ্র’ (জিইউকে) এর  সিপ প্রকল্পের ফিল্ড ফ্যাসিলিটর পুতুল চক্রবর্তী জানান, কারুশিল্প দ্বারা তৈরিকৃত পণ্য নান্দনিক ও সুন্দর হয়। আধুনিকাতার যুগে সব পরিবারই এসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তাই এ শিল্পের উদ্যোক্তা তৈরী করতে ৩৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণটি শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের এ ব্যবসায় মূলধন করে দেবে সিপ প্রকল্পটি।

তিনি আরো বলেন, গ্রামের নারীরাও দক্ষ, কিন্তু তাদের সঠিক শিক্ষা নেই বলে অবহেলিত এবং অন্য কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাই তাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশের উন্নতিতে এ শিল্প ভূমিকা রাখবে।