নদী বিধৌত জেলা গাইবান্ধা। এ জেলার নদ-নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য বালুচর। এসব চরে অনেকে জমি পতিত রাখতো। এখানকার কৃষকরা ফসল ফলিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। এরই মধ্যে চরাঞ্চলের কৃষকদের লাভবান করতে এমফোরসি নামের একটি প্রকল্প শুরু করে কাজ। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় বদলে যাচ্ছে চরাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা।
সোমবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে গাইবান্ধার রাধাকৃষ্ণপুরে এসকেএস ইন্ এর জলধারা মিলনায়তনে এক সম্মেলন এমন তথ্য তুলে ধরা হয়।
এসকেএস ফাউণ্ডেশনের সহযোগিতায় মেকিং মার্কেটস্ ওয়ার্ক ফর দি চরস্ (এমফোরসি) প্রকল্পের উদ্যোগে চরাঞ্চলের ফসল ব্যবসায়ীদের নিয়ে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং সুইজারল্যান্ডের সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশনের আর্থিক সহায়তায় এমফোরসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সুইস কন্টাক্ট বাংলাদেশ ও বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি। এতে সহযোগি সংস্থা হিসেবে কাজ করছে এসকেএস ফাউণ্ডেশন।
সম্মেলনে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলের ২৭ জন ব্যবসায়ী এবং এগ্রো প্রসেসিং কোম্পানি, এসকেএস ফাউণ্ডেশন ও গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এমফোরসি প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. আব্দুল মজিদের সভাপতিত্বে ও এসকেএস-এমফোরসি প্রকল্পের ইন্টারভেনশন স্পেশালিস্ট মো. হাফিজার রহমান শেখের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুইস কন্টাক্ট বাংলাদেশের এমফোরসি প্রকল্পের ইন্টারভেনশন এরিয়া ম্যানেজার মো. রবিউল হাসান।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ও প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. বেলাল উদ্দিন। বিশেষ অতিথি জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন।
আরও বক্তব্য দেন গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম, এসকেএস ফাউণ্ডেশনের মাইক্রোফিন্যান্স কর্মসূচির সমন্বয়কারী এটিএম রোকনুজ্জামান, এসকেএস-এমফোরসি প্রকল্পের সিনিয়র ইন্টারভেনশন কর্মকর্তা চন্দ্রনাথ গুপ্ত এবং চরাঞ্চলের ফসল ব্যবসায়ীর মধ্যে ফুলছড়ির মো. শাহজাহান হোসেন ও হায়দার আলী, কামারজানীর মো. রোস্তম আলী প্রমুখ।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এমফোরসি প্রকল্প শুরুর আগে চরাঞ্চলে যেমন ভালোমানের বীজ ও কীটনাশক ব্যবহার করা হতো না তেমনি ভালো ফলনও পেতনা কৃষক। ফলে কৃষকরা ফসল ফলিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতো। অনেকে জমি পতিত রাখতো। কিন্তু প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে বদলে যেতে থাকে চরাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা। মানুষ এখন জমি পতিত রাখার পরিবর্তে ইজারা নিয়ে চাষাবাদও করছেন। ফলে কৃষকরা এখন ফসল ফলিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। প্রকল্পটির উদ্যোগে উৎপাদিত ফসল ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করার জন্য বাণিজ্যিক সেবাপ্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে দেওয়া হচ্ছে। ফলন বৃদ্ধি করতে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরামর্শ ও কারিগরী সহযোগিতা।
এমফোরসি প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানী ও মোল্লারচর ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জের বেলকা, কাপাশিয়া, হরিপুর ও তারাপুর, ফুলছড়ির গজারিয়া, ফুলছড়ি, ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ী, উড়িয়া ও কঞ্চিপাড়া এবং সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ও হলদিয়া ইউনিয়নের ১২৯টি চরে কাজ করছে। এতে সুবিধাভোগী রয়েছে ওইসব চরের ৫৪ হাজার ২০০ পরিবার। চরাঞ্চলে ধান, পাট, বাদাম, সরিষা, ভুট্টা, মরিচ, মাসকালাই বেশি চাষাবাদ হয়ে থাকে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে চরাঞ্চলে অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া কৃষকরা কৃষি উপকরণ ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাফল্যজনক অবদান রাখছে। এতে চরাঞ্চলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। যা রাষ্ট্রীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, গাইবান্ধা 



















