উচ্চ পুষ্টিগুণে ভরপুর ও মানবদেহের জন্য কার্যকরী বিভিন্ন রোগের ঔষধি গুণসম্পন্ন সুপারসিড হচ্ছে চিয়া। চিয়া শব্দের অর্থ শক্তি। এটি সাধারণত মেক্সিকো, আমেরিকা, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চিলি, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের উন্নত দেশে চাষ হয়। এটি অতিশয় পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন। দেখতে অনেকটা তিল ও রাই সরিষার শস্যদানার মতো। এ নতুন ফসল ‘চিয়া’র প্রথম চাষ হয়েছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায়। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া ‘চিয়া’ চাষে উপযোগী হওয়ায় কৃষকদের মাঝে এক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। দিনাজপুরের সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. নুরল আমিনের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ নতুন ফসলের চাষ করছেন উপজেলার দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের কৃষক মো. ফরহাদ হোসেন, মো. মর্তুজা আলী ও বুলু নামের ৩ জন কৃষক। তারা পরীক্ষামূলকভাবে ১০০ শতক বা ২ বিঘা জমিতে চিয়া চাষ করেছেন। আশানুরূপ ফসলও হয়েছে। বাজারজাত করণে সুবিধা পেলে তারা আগামীতে আরো বেশি জমিতে উচ্চমূল্যের এ ফসল চাষ করবেন।
কৃষক ফরহাদ হোসেন জানান, চিয়া সাধারণত তিল ও রাই সরিষার শস্যদানার মতো। ফসলটি দেশীয় পদ্ধতিতে সারিবদ্ধ কিংবা বীজ ছিটিয়ে চাষ করা যায়। চিয়া সাধারণত একটি রবি মৌসুমের ৩ মাসের ফসল। ডিসেম্বর মাসে বীজ রোপণ করতে হয়। গম বা সরিষার মতো মাড়াই করে চালুনি, মশারীর কাপড়, কুলা ব্যবহার করে বীজ পরিস্কার করা যায়। চিয়া চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। যা বিঘাপ্রতি ফলন হবে ২০০ কেজি। যদি প্রতিকেজি ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা যায় তাহলে প্রতিবিঘায় ২ লাখ টাকার চিয়া হবে। রোগবালাই, পরিচর্যা কম যা অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক।
তিনি আরো জানান, মেক্সিকোসহ ইউরোপের দেশগুলোতে ‘চিয়া’ একটি ঔষধি ফসল হিসেবে চাষ হয়। চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক এবং ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে চিয়া সবধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত। এটি নিয়মিত সেবনে ওজন কমায়। বিভিন্ন ফল ও সবজির তুলনায় চিয়া বীজে বেশি পরিমাণ ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে উপযোগী। পেটের রোগ, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসসহ ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভ‚মিকা রাখে। চিয়ার বীজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইসবগুলের ভ‚ষি যেভাবে পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া হয়, ঠিক সেভাবে চিয়া পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়াও রুটি, পুডিং, কেক বা পাউরুটির সাথেও খাওয়া যায়।
সরজমিনে চিয়াক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, এটি অনেকটা তিল জাতীয় উদ্ভিদের মতো। ৩-৫ ফুট উচ্চতায় এ উদ্ভিদ বীজের ভারে নুইয়ে পড়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এটি কাটা হবে। কৃষক মো. মর্তুজা আলী জানান, জমি প্রস্তুত করে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বীজ ছিটিয়ে বপণ করা হয়। বিঘাপ্রতি ২০০ গ্রাম বীজ লাগে। এটিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম বলে কীটনাশকের তেমন ব্যবহার করতে হয় না। দুই-এক বার সেচ দিলেই হয়। জমি প্রস্তুতের আগে জৈব সার ও বীজবপণের ১৫-২০ দিন পরে সামান্য ইউরিয়া, টিএসটি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। বীজ বের হলেই এটি খাবার উপযোগী হয়।
নশরতপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. খাদেমুল ইসলাম জানান, পুষ্টি গুণসম্পন্ন চিয়া চাষে আগামীতে আরো বেশি কৃষককে উৎসাহিত করা হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জাগো২৪.নেট-কে বলেন, চিয়া হলো দানা জাতীয় খাদ্য এবং তার মধ্যে ১০ প্রকার ঔষধি গুণ বিদ্যমান রয়েছে। যা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস প্রতিরোধসহ হার্ড স্টকের মতো বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উচ্চ পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন নতুন এ ফসলের চাষাবাদ ছড়িয়ে পড়লে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

মো. রফিকুল ইসলাম, করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) 


















