গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পানির স্রোতে ভেসে আসা কচুরিপানার চাপে ভেঙ্গে গেছে তারাপুর ইউনিয়নের নিজামখা গ্রামের তিস্তা শাখা নদীর উপর নির্মিত কাঠের সাঁকো। সে কারণে সপ্তাহ ধরে দুর্ভোগে আছেন নদীর দুই পাশের পনেরো গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষ পথচারী। আর তাঁদের দুর্ভোগ দূর করতে ব্যাতিক্রমি উদ্যোগ নিয়েছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রশাসন ও এলাকাবাসী।
গতকাল শনিবার দুপুর ১ টার দিকে তিস্তার ওই শাখা নদীতে গেলে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
কারো হাতে লাঠি, আবার কারো হাতে কাঁচি। আবার কেউবা নৌকায়। সবাই কচুরিপানা সরাতে ব্যাস্ত। অন্যদিক রান্না করা হচ্ছে খিচুড়ি। আর সবগুলো মনিটরিং করছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো আমিনুল ইসলাম।
কচুরিপানা সরাতে ব্যাস্ত মো. আজিজার রহমান (৬০)। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশে এখানে এসেছি। সকাল ৯ টা থেকে কচুরিপানা সরাতে কাজ করছি। প্রায় দুই আড়াইশো লোক এখানে কাজ করছি। বিকেল ৩ টার মধ্যে কাজ শেষ হবে আশা করছি। বিনিময়ে চেয়ারম্যান সাকোটি মেরামত করে দিবেন এবং দুপুরে আমাদের খাওয়াবেন। চেয়ারম্যান পাশে আছেন, এতেই আমরা খুশি।’
হাতের লাঠি দিয়ে কচুরিপানা ঠেলছেন মো. রেজাউল করিম (৩২)। চেয়ারম্যানের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে যে কাজগুলো করছি এটা বর্ষা আসলেই করতে হয় আমাদের। কিন্তু ওটাতো স্থায়ী সমাধান নয়। সে কারণে এখানে একটি ব্রীজ করার জোর দাবীও জানান তিনি।
খিচুড়ি রান্নার কাজে ব্যাস্ত মো. জালাল মিয়া(৪৩)। তিনি বলেন, সকাল থেকে ৩ জন খিচুড়ি রান্না করছি। পাঁচশো লোকের রান্না হবে এখানে। কচুরিপানা সরাতে যারা কাজ করেছেন তাঁদের খাওয়াতে হবে। চেয়ারম্যান এসবের খরচ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় ইউপি চেয়ারম্যান মো আমিনুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, সংবাদ পেয়ে গত শুক্রবার এখানে এসেছিলাম। কচুরিপানার চাপে সাকোর মধ্যের অংশ ভেঙ্গে গেছে। যাতায়াত বন্ধ আছে। দ্রুত কচুরিপানা না সরালে সাকোর বাকি অংশও ভেঙ্গে যাবে। সে কারণে এ পদক্ষেপ নিয়েছি। তাঁরা কচুরিপানা সরাবে। আর আমি খিচুড়ি খাওয়াবো এবং সাকোটি মেরামত করে দিবো। গ্রামবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণে ভীষণ খুশি হয়েছেন বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস এর সাথে। তিনি চেয়ারম্যানের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, সামনের মিটিং এ চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাবো। জনসাধারণের পাশে দাড়াতে বাকী জনপ্রতিনিধিদের এ ভাবে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি। ইন্জিনিয়ার এর সাথে কথা বলে স্থায়ী ব্যব্স্থা নেয়া আশ্বাসও দেন ইউএনও।’
তথ্যে জানা যায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের নিজামখা গ্রাম ও পাশ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের চর বজরা গ্রামের সংযোগ সড়কের নিজামখা ও চর বজরা গ্রামে তিস্তার শাখা নদীর উপর নির্মিত কাঠের সাঁকোটি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার শাখা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। স্রোতে ভেসে আসে কচুরিপানা। আর সেই কচুরিপানাগুলো আটকে যায় সাকোটির খুটি গুলোতে। এ সময় সাকোটির কংক্রিটের কয়েকটি খুঁটি ভেঙ্গে গেলে সাকোর মধ্য অংশ নদীর পানিতে পড়ে এবং ভেসে যায়। সে কারণে প্রায় সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে নদীর দুই পাশের পনেরো গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের।
জাহিদ. স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট 
























