দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) আসনে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন ঘিরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। খানসামায় বিএনপি’র দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ২৫ ব্যক্তি আহত এবং অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। এ ঘটনাটি শুক্রবার রাতে উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কাচিনীয়া বাজারে ঘটেছে। দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান মিয়া ও কর্ণেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হন এবং ৫০টিরও বেশি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। হামলার পর পুরো এলাকাজজুড়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী এবং ভাবকী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল জলিল শাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিয়নের তিনটি স্থানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা প্রচারের লক্ষ্যে সভা আয়োজনের ঘোষণা দেন। বিষয়টি নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান মিয়া গ্রুপের সঙ্গে। তারা দাবি করেন, আব্দুল জলিল শাহ বর্তমানে সভাপতি নন, বরং উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন মিয়া গ্রুপের অনুসারী নাসির উদ্দিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম শাহ, মিজানুর রহমান এবং তহিদুল ইসলাম তহি। এ বিরোধের জের ধরে গত শুক্রবার দুপুরে আব্দুল জলিল শাহ ও ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আশরাফ আলী মারধরের শিকার হন। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ সন্ধ্যায় উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের কাচিনীয়া বাজারে কর্ণেল গ্রুপের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মনোনয়নপ্রত্যাশী কর্ণেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক চৌধুরী এবং জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শাহরিয়ার জামান শাহ নিপুণসহ বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। সভা শেষে আখতার মিয়া গ্রুপের নেতাকর্মীরা কর্ণেল গ্রুপের নেতাকর্মীদের ওপর পুনঃরায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়। এতে ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান মানিক, উপজেলা বিএনপি’র সদস্য মহসীন আলী শাহসহ অন্তত ২০জন গুরুতর আহত হন এবং অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। হামলার সময় কর্ণেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন। পরে সেনাবাহিনীর টিম ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করেন। আরও জানা গেছে, কাচিনীয়া বাজারজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাংচুর হওয়া মোটরসাইকেল, আতঙ্কে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।
কর্ণেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা প্রচার এবং তৃণমূল বিএনপিকে সংগঠিত করার কাজে আমরা নামতেই আখতারুজ্জামান মিয়ার প্ররোচণায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হই। এটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নগ্ন হামলা। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। অপরদিকে, আখতার মিয়া গ্রুপের অনুসারী এবং জেলা বিএনপি’র অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিন এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি তার গ্রুপের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
খানসামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজমুল হক বলেন, ঘটনার সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খানসামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ও প্রশাসন এলাকা পর্যবেক্ষণে সজাগ রয়েছে। সেই সাথে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) 
























