এক সময়ে গ্রামাঞ্চলে কদর ছিলো মাটির তৈরী পণ্যসামগ্রীর। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির সামগ্রী প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবুও বাপ-দাদার পেশাকে আঁকড়ে ধরে এখনো কয়েকটি পরিবার তৈরী করে চলছেন কাদামাটির পণ্যসামগ্রী।
সরেজমিনে বুধবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের রসুলপুর (পালপাড়া) গ্রামে দেখা যায়, মাটির পণ্য থালা-বাটি, সরা-বাসন, হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, প্রভৃতি জিনিসপত্র তৈরির চিত্র। এসময় আপন খেয়ালে হাতের কারচুপিতে কৃষ্ণারাণী নামের এক নারী তৈরি করছিলেন ওইসব সামগ্রী।
জানা যায়, দেড় দশক আগে রসুলপুরের পালপড়া এলাকাস্থ প্রায় ২শ পরিবারের একমাত্র পেশা ছিল মাটির পণ্যসামগ্রী তৈরি করা কাজ। এ পেশা দিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। চলছিল তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় কদর কমেছে এ শিল্পের। যার প্রভাবে এ পেশা থেকে ছিটকে পড়েছে অধিকাংশ পরিবার। এখন মাত্র ৭ টি পরিবার কোনোমতে ধরে রেখেছে তাদের বাপ-দাদার পেশাটি।

মৃৎশিল্পের কারিগররা জানায়, বিভিন্ন স্থান থেকে দোঁয়াশ মাটি সংগ্রহ করতে হয়। এসব মাটিও কিনতে হয় টাকা দিয়ে। প্রায় এক ভ্যান মাটির দাম ৫’শ টাকা। এসব মাটি দিয়ে থালা-বাটি, সরা-বাসন, পুতুল, ঘোড়াসহ নানা ধরণের পণ্য তৈরি করে থাকেন। একটি চাকের মাধ্যমে কাদামাটিতে বানানো হয় পণ্যসাম্রগী। এরপর রোদে শুকিয়ে আগুনে পোড়ানো হয় ভাটায়। সেখান থেকে বের করে রংতুলির আঁচরে ফুটিয়ে তোলায় বিশেষ পণ্যগুলো। সেগুলো বাজারজাতে নিতে আসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অনেক সময় নিজেরাই ভ্রাম্যমানভাবে বিক্রি করে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। এতে যেটুকু আয়-রোজগার আসে, তা দিয়ে চলে তাদের সংসার।
মাটির পণ্য তৈরি কারিগর তপন চন্দ্র পাল জাগো২৪.নেট-কে জানায়, অতীতে গ্রাম-গঞ্জে মাটির তৈরি পণ্যসামগ্রীর কদর ছিল অনেক বেশি। এসব পণ্য শোভা পেত প্রত্যেক বাড়িতে। এছাড়া গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার দ্রব্যাদি, পুতুল, খেলনা, প্রতিমা, প্রতিকৃতি, ফুলের টপসহ অসংখ্য জিনিস আজও তৈরি করে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তবে ইদানীং প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন তা হারিয়ে যেতে বসেছে।

আরেক কারিগর আনন্দ চন্দ্র পাল জাগো২৪.নেট-কে বলেন, আমাদের এ গ্রামে প্রবেশ পথটি কাঁচা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা একদম করুণ অবস্থায় পরিনত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে শত শত গর্তে পরিনত হয়। আর বর্ষাকালে সৃষ্টি হয় হাঁটুকাদা। যার কারনে তৈরি করা সামগ্রীগুলো বাজারজাত করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া টানা এক বছরে করোনার থাবায় থমকে গেছে পণ্যসামগ্রী বানানোর কাজ। বিদ্যমান পরিস্থিতির শিকার হলেও, কোনো ধরণের প্রণোদনার সুবিধা আমাদের কপালে জোটেনি।
তিনি আরো বলেন, এখন এটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত জরুরি। কেননা, সরকার যদি মৃৎশিল্প গোষ্ঠীকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে সহায়তা দিতে পারে, তাহলে এ শিল্পে টিকে থাকা সম্ভব।
রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রবিউল করিম দুলা জাগো২৪.নেট-কে বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে মৃৎশিল্পিরা এ পেশা থেকে ছিটকে পড়ছে। এরই মধ্যে করোনার প্রণোদনার বরাদ্দ পেলে তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।
শামীম সরদার, করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট 


















