সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিষাদে বিলাপে এবারের ঈদ

  • মু আ কুদ্দুস :
  • প্রকাশের সময়: ১২:০৭:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মে ২০২১
  • ১৪

‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’-সব কষ্টের মধ্যেও আবার এলো খুশির ঈদ। চারদিকে করোনাযুদ্ধ, তারপরও মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে মেতেছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। গরিব-ধনী সবার মাঝে এক হয়ে এসেছে ঈদুল ফিতর।
গত বছরের মতো চলতি বছরেও এক অপরিচিত ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি আমরা। তারপরও শত কষ্ট পেরিয়ে সবাই ছুটছেন আনন্দের জন্য নিজ গ্রামে। মা-বাবা, সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের কাছে। কিন্তু এবারও দূরত্ব বজায় রেখে পালন করতে হবে ঈদ উৎসব। আনন্দ ভাগাভাগি করার সময় মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। পরতে হবে মাস্ক।

এত কিছুর পরও কারও ঈদ আনন্দে কোনো কমতি নেই। তাই তো সবকিছু উপেক্ষা করে সবাই এখন ঘরমুখী। ঈদ হবে, খুশি-আনন্দ হবে। তবে, সবার মাঝে থাকবে শারীরিক দূরত্ব।

সবাই জানি, মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্ব বিপর্যস্ত। এতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৬ কোটির বেশি মানুষ। আর মারা গেছে ৩৩ লাখের অধিক। তারপরও থেমে নেই পৃথিবী। থেমে থেমে চলছে জীবনের চাকা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের উচ্ছ্বাস-উল্লাস থাকার কথা, তা আর হয়নি। কেনাকাটা হয়েছে কম, কম দেয়া হয়েছে ঈদ উপহারও। এতে করে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ঈদের জন্য যেভাবে শহর রঙিন আলোয় আলোকিত হয়, তা আর হবে না। এসবের মধ্যে ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে ব্যবসা করতে চাইলেও তা পারেননি। ছিল লকডাউন। ছিল চলাফেরায় কড়াকড়ি। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ছিল সংকট।

ঈদ মুসলিমদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদ মানে সবাইকে নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি। দূরের মানুষকে কাছে টানা। সুখ-দুঃখের শিক্ষা নিয়ে পরোপকারের চর্চা করা। ঈদ অর্থ আনন্দ, যা প্রতিবছর আসে স্বজনকে কাছে টানবার জন্য। আনন্দ বিলিয়ে দিতে। তাই এবারও সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ভালোবাসা নিয়ে আমরা এই অচেনা ঈদ উদযাপনে মেতে উঠব। মেতে উঠবে দেশের সর্ব স্তরের মানুষ।
আজ চাঁদ উঠলে কাল পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই লাখো মানুষ চাঁদ খুঁজবে পশ্চিম আকাশে, প্রথমে দেখার জন্য। নিজের চোখে দেখে পুণ্য লাভের জন্য। চারদিকে বাজবে গজল- ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।

চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ঘরে শুরু হবে সাধ্যমতো ভালো খাবারের আয়োজন। থাকবে সেমাই নয়তো ফিরনি। থাকবে পিঠা, পায়েস, পোলাও-কোরমাসহ সুস্বাদু খাবার।

দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকলেও নামাজ শেষে শুরু হবে আনন্দ ভ্রমণ। কেউ যাবেন শহর থেকে দূরে কোনো আত্মীয়ের বাড়ি। ছোটরা বড়দের কাছে চেয়ে চেয়ে নেবে ঈদ বকশিস ‘ঈদি’। আহা কি আনন্দ! কেউ চাইবেন কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যেতে।

তাই সব বাধা ভেঙে ঈদের উপহার হাতে নিয়ে নগরবাসী ছুটছেন গ্রামের দিকে। যানবাহন না থাকায় এবার অনেক ভোগান্তি মানুষের। এই ভোগান্তিটাও কী যে আনন্দের তা বোঝানোর ভাষা নেই। গরিব-ধনী এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ হবে। কোলাকুলি হবে না- দূর থেকে ভাগ হবে ভালোবাসা। কুশল বিনিময় হবে অন্তরে অন্তরে। সুখের হাসি দূরকে টেনে নেবে কাছে, বুকের গহিনে। ঈদ আনন্দ তাই যেন জাগ্রত এক চিরন্তন ভালোবাসা, কাছে টেনে নেয়ার মেলবন্ধন।

পবিত্র এই ঈদ আমাদের চেতনায় চির সবুজ হয়ে আছে। করোনা যতই আসুক, এর ভেতরে সবাই খুঁজে নেবে ঈদ আনন্দ। আনন্দের মাঝেও অনেকে কষ্ট বুকে নিয়ে কাঁদবেন হারানো স্বজনদের শোকে। এটাই বাস্তবতা। সেই বাস্তবতাকে বুকে বেঁধে সাহস কুড়াব আমরা। বলব, ঈদ আমাদের সাহস জোগাবে, দেবে রোগমুক্তি। ভালোবাসা অটুট করবে একে অপরের মধ্যে।

বিশ্বস্ততার সঙ্গে বলতে পারি, করোনামুক্ত হবে বিশ্ব। তাই এবারের ঈদে আমাদের সবার মধ্যে গড়ে উঠুক ভালোবাসা-সাহসের নয়া দিগন্ত। উন্মুক্ত হোক এগিয়ে চলার নতুন পাথেয়। সবশেষে বলি, সবাই আমরা ভালো থাকি-যেভাবে ভালো থাকে পৃথিবী।

জনপ্রিয়

বিষাদে বিলাপে এবারের ঈদ

প্রকাশের সময়: ১২:০৭:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মে ২০২১

‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’-সব কষ্টের মধ্যেও আবার এলো খুশির ঈদ। চারদিকে করোনাযুদ্ধ, তারপরও মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে মেতেছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। গরিব-ধনী সবার মাঝে এক হয়ে এসেছে ঈদুল ফিতর।
গত বছরের মতো চলতি বছরেও এক অপরিচিত ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি আমরা। তারপরও শত কষ্ট পেরিয়ে সবাই ছুটছেন আনন্দের জন্য নিজ গ্রামে। মা-বাবা, সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের কাছে। কিন্তু এবারও দূরত্ব বজায় রেখে পালন করতে হবে ঈদ উৎসব। আনন্দ ভাগাভাগি করার সময় মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। পরতে হবে মাস্ক।

এত কিছুর পরও কারও ঈদ আনন্দে কোনো কমতি নেই। তাই তো সবকিছু উপেক্ষা করে সবাই এখন ঘরমুখী। ঈদ হবে, খুশি-আনন্দ হবে। তবে, সবার মাঝে থাকবে শারীরিক দূরত্ব।

সবাই জানি, মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্ব বিপর্যস্ত। এতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৬ কোটির বেশি মানুষ। আর মারা গেছে ৩৩ লাখের অধিক। তারপরও থেমে নেই পৃথিবী। থেমে থেমে চলছে জীবনের চাকা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের উচ্ছ্বাস-উল্লাস থাকার কথা, তা আর হয়নি। কেনাকাটা হয়েছে কম, কম দেয়া হয়েছে ঈদ উপহারও। এতে করে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ঈদের জন্য যেভাবে শহর রঙিন আলোয় আলোকিত হয়, তা আর হবে না। এসবের মধ্যে ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে ব্যবসা করতে চাইলেও তা পারেননি। ছিল লকডাউন। ছিল চলাফেরায় কড়াকড়ি। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ছিল সংকট।

ঈদ মুসলিমদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদ মানে সবাইকে নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি। দূরের মানুষকে কাছে টানা। সুখ-দুঃখের শিক্ষা নিয়ে পরোপকারের চর্চা করা। ঈদ অর্থ আনন্দ, যা প্রতিবছর আসে স্বজনকে কাছে টানবার জন্য। আনন্দ বিলিয়ে দিতে। তাই এবারও সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ভালোবাসা নিয়ে আমরা এই অচেনা ঈদ উদযাপনে মেতে উঠব। মেতে উঠবে দেশের সর্ব স্তরের মানুষ।
আজ চাঁদ উঠলে কাল পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই লাখো মানুষ চাঁদ খুঁজবে পশ্চিম আকাশে, প্রথমে দেখার জন্য। নিজের চোখে দেখে পুণ্য লাভের জন্য। চারদিকে বাজবে গজল- ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।

চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ঘরে শুরু হবে সাধ্যমতো ভালো খাবারের আয়োজন। থাকবে সেমাই নয়তো ফিরনি। থাকবে পিঠা, পায়েস, পোলাও-কোরমাসহ সুস্বাদু খাবার।

দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকলেও নামাজ শেষে শুরু হবে আনন্দ ভ্রমণ। কেউ যাবেন শহর থেকে দূরে কোনো আত্মীয়ের বাড়ি। ছোটরা বড়দের কাছে চেয়ে চেয়ে নেবে ঈদ বকশিস ‘ঈদি’। আহা কি আনন্দ! কেউ চাইবেন কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যেতে।

তাই সব বাধা ভেঙে ঈদের উপহার হাতে নিয়ে নগরবাসী ছুটছেন গ্রামের দিকে। যানবাহন না থাকায় এবার অনেক ভোগান্তি মানুষের। এই ভোগান্তিটাও কী যে আনন্দের তা বোঝানোর ভাষা নেই। গরিব-ধনী এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ হবে। কোলাকুলি হবে না- দূর থেকে ভাগ হবে ভালোবাসা। কুশল বিনিময় হবে অন্তরে অন্তরে। সুখের হাসি দূরকে টেনে নেবে কাছে, বুকের গহিনে। ঈদ আনন্দ তাই যেন জাগ্রত এক চিরন্তন ভালোবাসা, কাছে টেনে নেয়ার মেলবন্ধন।

পবিত্র এই ঈদ আমাদের চেতনায় চির সবুজ হয়ে আছে। করোনা যতই আসুক, এর ভেতরে সবাই খুঁজে নেবে ঈদ আনন্দ। আনন্দের মাঝেও অনেকে কষ্ট বুকে নিয়ে কাঁদবেন হারানো স্বজনদের শোকে। এটাই বাস্তবতা। সেই বাস্তবতাকে বুকে বেঁধে সাহস কুড়াব আমরা। বলব, ঈদ আমাদের সাহস জোগাবে, দেবে রোগমুক্তি। ভালোবাসা অটুট করবে একে অপরের মধ্যে।

বিশ্বস্ততার সঙ্গে বলতে পারি, করোনামুক্ত হবে বিশ্ব। তাই এবারের ঈদে আমাদের সবার মধ্যে গড়ে উঠুক ভালোবাসা-সাহসের নয়া দিগন্ত। উন্মুক্ত হোক এগিয়ে চলার নতুন পাথেয়। সবশেষে বলি, সবাই আমরা ভালো থাকি-যেভাবে ভালো থাকে পৃথিবী।