বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভুট্রায় জীবিকা নির্বাহের স্বপ্ন দুর্গম চরের কৃষকদের

চলতি মৌসুমে গাইবান্ধার চরাঞ্চলের কৃষকরা অধিক পরিমান জমিতে চাষ করেছেন ভুট্রা। প্রত্যেক বছরে ভুট্রা ফসলের ওপরে জীবিকা নির্বাহের স্বপ্ন দেখেন দুর্গম চরের কৃষকরা। সম্প্রতি স্বপ্নের এই সোনালী ফসল ঘরে তুলে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষক-শ্রমিক।

সোমবার (১৭ মে) দুপুরে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার খাটিয়ামারী-কড়াইবাড়ী চরে দেখা যায় কৃষক-শ্রমিকদের ভুট্রা কাটা ও মাড়াইয়ের চিত্র। এসময় কেউবা হারভেস্টার মেশিনে ভুট্রার মোচা ফেলে দানা বের করছিলেন। আবার অনেকে দানাদার ভুট্রাগুলো রোদে শুকাতে ব্যস্ত ছিলেন।

জানা যায়, উত্তর জনপদের নদীবাহীত জেলা গাইবান্ধা। এ জেলার বুক চিরে বয়ে গেছে যমুনা-ব্রহ্মপত্রসহ আরো বেশ কয়েকটি নদ-নদী। এসব নদীর বুকে জেগে উঠাছে শতাধিক বালু চর। এই চরগুলোতে যুগযুগ ধরে বসবাস করে আসছেন প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ। এসব মানুষের একমাত্র ভরসা কৃষি ফসলের ওপরে। তারা বালুচরে তরমুজ, বাদাম ও  মরিচ ফসলের পাশাপাশি অধিকাংশ মাঠে আবাদ করে ভুট্রা। বিশেষ করে ভুট্রা ফসলের ওপরেই নির্ভশীল তারা। বছরে দুই দফায় ভুট্রা ফসল ঘরে তুলে থাকেন। এটি বিক্রি করে পরিবার-পরিজনের মৌলিক চাহিতা পুরণ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন চরাঞ্চলের কৃষক-শ্রমিকরা। প্রতি বছরে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি এ বছরে ব্যাপকভাবে আবাদ করা হয়েছে ভুট্রা।

ধারবাহিকতা খরিপ মৌসুমের ভুট্রার ফলন হয়েছে বাম্পার। এরই মধ্যে সোনালী এই ফসল কাটা-মাড়াইয়ে চলছে এখানকার কৃষকদের। তাদের প্রাণপ্রিয় এই ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছে। কারণ, সম্প্রতি আবহাওয়ার বিরূপ আচারণে মাঠে থাকা ভুট্রা ক্ষতির আশঙ্কা করছে। তবে ইতোমধ্যে অধিকাংশ ভুট্রা ফসল ঘরে তুলেছেন তারা। এ বছর অধিক ফলন পেয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

এদিকে, কৃষি বিভাগের তথ্যানুসারে গাইবান্ধা জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্রা চাষ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কৃষক খাদেম আলী জানান, চলতি মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মণ ভুট্টা পেয়েছি। এতে খরচ হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ শুকনো ভুট্টা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দামে বিক্রি করছি।

আরেক কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ভুট্টা একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। বাপ-দাদার আমল থেকে ভুট্টা আবাদ করেই সংসার চালাছি। তবে আগের অভিজ্ঞতায় ভুট্টার চাষাবাদ করে আসছি, এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকতার সহায়তা কিংবা পরামর্শ পাইনি। তাদের সহযোগিতা পেলে হয়তো চরাঞ্চলের কৃষকরা আরো লাভবান হতে পারতো।

শ্রমিক নওবুর রহমান বলেন, ভুট্টা চাষিদের মাঠে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে দৈনন্দিন প্রায় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই। এ দিয়ে জীবন চলছে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক মাসুদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করে ব্যস্ততা দেখিয়ে কেটে দেন। এরপর ফোনটি বন্ধ করে দেন।

জনপ্রিয়

ভুট্রায় জীবিকা নির্বাহের স্বপ্ন দুর্গম চরের কৃষকদের

প্রকাশের সময়: ০৬:৩৬:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মে ২০২১

চলতি মৌসুমে গাইবান্ধার চরাঞ্চলের কৃষকরা অধিক পরিমান জমিতে চাষ করেছেন ভুট্রা। প্রত্যেক বছরে ভুট্রা ফসলের ওপরে জীবিকা নির্বাহের স্বপ্ন দেখেন দুর্গম চরের কৃষকরা। সম্প্রতি স্বপ্নের এই সোনালী ফসল ঘরে তুলে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষক-শ্রমিক।

সোমবার (১৭ মে) দুপুরে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার খাটিয়ামারী-কড়াইবাড়ী চরে দেখা যায় কৃষক-শ্রমিকদের ভুট্রা কাটা ও মাড়াইয়ের চিত্র। এসময় কেউবা হারভেস্টার মেশিনে ভুট্রার মোচা ফেলে দানা বের করছিলেন। আবার অনেকে দানাদার ভুট্রাগুলো রোদে শুকাতে ব্যস্ত ছিলেন।

জানা যায়, উত্তর জনপদের নদীবাহীত জেলা গাইবান্ধা। এ জেলার বুক চিরে বয়ে গেছে যমুনা-ব্রহ্মপত্রসহ আরো বেশ কয়েকটি নদ-নদী। এসব নদীর বুকে জেগে উঠাছে শতাধিক বালু চর। এই চরগুলোতে যুগযুগ ধরে বসবাস করে আসছেন প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ। এসব মানুষের একমাত্র ভরসা কৃষি ফসলের ওপরে। তারা বালুচরে তরমুজ, বাদাম ও  মরিচ ফসলের পাশাপাশি অধিকাংশ মাঠে আবাদ করে ভুট্রা। বিশেষ করে ভুট্রা ফসলের ওপরেই নির্ভশীল তারা। বছরে দুই দফায় ভুট্রা ফসল ঘরে তুলে থাকেন। এটি বিক্রি করে পরিবার-পরিজনের মৌলিক চাহিতা পুরণ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন চরাঞ্চলের কৃষক-শ্রমিকরা। প্রতি বছরে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি এ বছরে ব্যাপকভাবে আবাদ করা হয়েছে ভুট্রা।

ধারবাহিকতা খরিপ মৌসুমের ভুট্রার ফলন হয়েছে বাম্পার। এরই মধ্যে সোনালী এই ফসল কাটা-মাড়াইয়ে চলছে এখানকার কৃষকদের। তাদের প্রাণপ্রিয় এই ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছে। কারণ, সম্প্রতি আবহাওয়ার বিরূপ আচারণে মাঠে থাকা ভুট্রা ক্ষতির আশঙ্কা করছে। তবে ইতোমধ্যে অধিকাংশ ভুট্রা ফসল ঘরে তুলেছেন তারা। এ বছর অধিক ফলন পেয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।

এদিকে, কৃষি বিভাগের তথ্যানুসারে গাইবান্ধা জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্রা চাষ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কৃষক খাদেম আলী জানান, চলতি মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মণ ভুট্টা পেয়েছি। এতে খরচ হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ শুকনো ভুট্টা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দামে বিক্রি করছি।

আরেক কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ভুট্টা একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। বাপ-দাদার আমল থেকে ভুট্টা আবাদ করেই সংসার চালাছি। তবে আগের অভিজ্ঞতায় ভুট্টার চাষাবাদ করে আসছি, এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকতার সহায়তা কিংবা পরামর্শ পাইনি। তাদের সহযোগিতা পেলে হয়তো চরাঞ্চলের কৃষকরা আরো লাভবান হতে পারতো।

শ্রমিক নওবুর রহমান বলেন, ভুট্টা চাষিদের মাঠে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে দৈনন্দিন প্রায় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই। এ দিয়ে জীবন চলছে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক মাসুদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করে ব্যস্ততা দেখিয়ে কেটে দেন। এরপর ফোনটি বন্ধ করে দেন।