বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধায় ভাঙছে নদী, ছাড়ছে বাড়ি

তোফায়েল হোসেন জাকির: উত্তর জনপদের নদীবেষ্টিত জেলা গাইবান্ধা। এ জেলার বুক চিরে বয়ে গেছে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রসহ আরো বেশ কয়েকটি নদী-নদী। সম্প্রতি এসব নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এতে বিলীন হচ্ছে বাপ-দাদার বসতভিটা ও ফসলি জমি। ভাঙনের শিকার মানুষেরা সহায় সম্বল হারিয়ে চোখের জলে নির্ঘুম রাত পোহাচ্ছে।

বুধবার (১৬ জুন) গাইবান্ধার তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে দেখা যায়, ভাঙনের ভয়াবহতার দৃশ্য। যেন চোখের নিমিষে বিলীন হচ্ছে সবকিছু। এসময় ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো নির্বাক চোখে তাকিয়ে, আবার কেউবা কাঁছিলেন অঝোড়ে।

জানা যায়, গাইবান্ধার নদ-নদীগুলোর বুকে জেগে উঠেছে প্রায় ১৬৫ বালুচর। এসব  চরাঞ্চলে কয়েক যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। এছাড়াও নদীর তীরবর্তীতেও একই পরিমান মানুষের স্থায়ী নিবাস। প্রত্যেক বছরের বর্ষার আগে ও পরে শুরু হয় অব্যাহত নদী ভাঙন। রাক্ষুসি নদীর এই ভাঙনে ইতিপুর্বে মানুষ হারিয়ে তাদের বসতভিটা, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মসজিদ-মন্দির। ভাঙনের শিকার লক্ষাধিক পরিবারে ঠাঁই নিয়েছে বিভিন্ন বাঁধ, আশ্রয়ন কেন্দ্র ও আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে। অন্যত্র আশ্রিত মানুষেরা এখন দুর্বিসহ দিনাতিপাত করছে সেখানে।

এরই ধারাবাহীকতায় সম্প্রতি যেসব এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে-গাইবান্ধার সদর উপজেলার কামারজনি, গোঘাট, কুন্দেরপাড়া, মোল্লারচর। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, লাঠশালা, খোদ্দা, চন্ডিপুর, পাঁচপীর খোয়াঘাট, বোচাগাড়ি ও কাশিম বাজার খোয়াঘাট। ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া । সাদুল্লাপুর ঘাঘট নদীর হামিন্দপুর নামকস্থানের  (হামিন্দপুর শ্মশান) সংলগ্ন প্রায় ২০০ ফুট বাধ নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইতোমধ্যে ওইসব এলাকায় নদী ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি ও সহস্রাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও নদীর পেটে চলে গেছে কবরস্থান, স্কুল-মাদ্রসা, মসজদি ও মন্দির। নদীরপাড় ও চরাঞ্চলের মানুষেরা এসব হারিয়ে এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। আশ্রয় নিতে শুরু করছে বাঁধসহ আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে।

এদিকে, নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের শতশত পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন। বৈরি বাতাসে পানির ঢেউয়ে যে কোন মুহূর্তে ঘরবাড়ি ভাঙনের আশঙ্কা করছে তারা। ফলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নির্ঘুম রাত পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে।

কামারজনির গোঘাট এলাকার নদীপাড়ের বাসিন্দা বিপ্লব কুমার সাহা জানান, অনেক আগে তার বাড়ি নদীর পেটে চলে গেছে। সেই সঙ্গে রক্ষা পায়নি আবাদী জমিও । এখন অন্যত্র ঠাঁই নিয়ে অতিকষ্টে জীবন যাপন করে চলছেন।

সাদুল্লাপুরের ঘাঘট তীরের বাসিন্দা এনায়েতুল মোস্তাফিজ রাসেল বলেন,  হামিন্দপুর এলাকার বাঁধটি রক্ষায় জরুরিভাবে ব্যবস্থা না নিলে পানির তাণ্ডবে প্রায় শতাধিক একর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, নদীর তীর ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ও ব্লক স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও নানা ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনক আব্দুল মতিন জানান, ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। যাতে করে মানুষেরা দুর্ভোগে না পড়ে সেবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

 

জনপ্রিয়

গাইবান্ধায় ভাঙছে নদী, ছাড়ছে বাড়ি

প্রকাশের সময়: ০৬:৪৩:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুন ২০২১

তোফায়েল হোসেন জাকির: উত্তর জনপদের নদীবেষ্টিত জেলা গাইবান্ধা। এ জেলার বুক চিরে বয়ে গেছে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রসহ আরো বেশ কয়েকটি নদী-নদী। সম্প্রতি এসব নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এতে বিলীন হচ্ছে বাপ-দাদার বসতভিটা ও ফসলি জমি। ভাঙনের শিকার মানুষেরা সহায় সম্বল হারিয়ে চোখের জলে নির্ঘুম রাত পোহাচ্ছে।

বুধবার (১৬ জুন) গাইবান্ধার তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে দেখা যায়, ভাঙনের ভয়াবহতার দৃশ্য। যেন চোখের নিমিষে বিলীন হচ্ছে সবকিছু। এসময় ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো নির্বাক চোখে তাকিয়ে, আবার কেউবা কাঁছিলেন অঝোড়ে।

জানা যায়, গাইবান্ধার নদ-নদীগুলোর বুকে জেগে উঠেছে প্রায় ১৬৫ বালুচর। এসব  চরাঞ্চলে কয়েক যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। এছাড়াও নদীর তীরবর্তীতেও একই পরিমান মানুষের স্থায়ী নিবাস। প্রত্যেক বছরের বর্ষার আগে ও পরে শুরু হয় অব্যাহত নদী ভাঙন। রাক্ষুসি নদীর এই ভাঙনে ইতিপুর্বে মানুষ হারিয়ে তাদের বসতভিটা, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মসজিদ-মন্দির। ভাঙনের শিকার লক্ষাধিক পরিবারে ঠাঁই নিয়েছে বিভিন্ন বাঁধ, আশ্রয়ন কেন্দ্র ও আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে। অন্যত্র আশ্রিত মানুষেরা এখন দুর্বিসহ দিনাতিপাত করছে সেখানে।

এরই ধারাবাহীকতায় সম্প্রতি যেসব এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে-গাইবান্ধার সদর উপজেলার কামারজনি, গোঘাট, কুন্দেরপাড়া, মোল্লারচর। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, লাঠশালা, খোদ্দা, চন্ডিপুর, পাঁচপীর খোয়াঘাট, বোচাগাড়ি ও কাশিম বাজার খোয়াঘাট। ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া । সাদুল্লাপুর ঘাঘট নদীর হামিন্দপুর নামকস্থানের  (হামিন্দপুর শ্মশান) সংলগ্ন প্রায় ২০০ ফুট বাধ নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইতোমধ্যে ওইসব এলাকায় নদী ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি ও সহস্রাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও নদীর পেটে চলে গেছে কবরস্থান, স্কুল-মাদ্রসা, মসজদি ও মন্দির। নদীরপাড় ও চরাঞ্চলের মানুষেরা এসব হারিয়ে এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। আশ্রয় নিতে শুরু করছে বাঁধসহ আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে।

এদিকে, নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের শতশত পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন। বৈরি বাতাসে পানির ঢেউয়ে যে কোন মুহূর্তে ঘরবাড়ি ভাঙনের আশঙ্কা করছে তারা। ফলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নির্ঘুম রাত পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে।

কামারজনির গোঘাট এলাকার নদীপাড়ের বাসিন্দা বিপ্লব কুমার সাহা জানান, অনেক আগে তার বাড়ি নদীর পেটে চলে গেছে। সেই সঙ্গে রক্ষা পায়নি আবাদী জমিও । এখন অন্যত্র ঠাঁই নিয়ে অতিকষ্টে জীবন যাপন করে চলছেন।

সাদুল্লাপুরের ঘাঘট তীরের বাসিন্দা এনায়েতুল মোস্তাফিজ রাসেল বলেন,  হামিন্দপুর এলাকার বাঁধটি রক্ষায় জরুরিভাবে ব্যবস্থা না নিলে পানির তাণ্ডবে প্রায় শতাধিক একর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, নদীর তীর ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ও ব্লক স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও নানা ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনক আব্দুল মতিন জানান, ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। যাতে করে মানুষেরা দুর্ভোগে না পড়ে সেবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।