শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও গেজেটভুক্ত হয়নি মুক্তিযোদ্ধা মানিক মন্ডল

মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়নি মোস্তাফিজার রহমান মানিক মন্ডলের। তিনি গেজেটভুক্ত হতে সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিকবার আবেদন করে দিনের পর দিন ধর্না দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ফলে জীবন বাজি রেখে অল্প বয়সে যুদ্ধে অংশ নেয়া এই বীরযোদ্ধা এখন অনেকটাই হতাশ। তার সহযোদ্ধা, এলাকাবাসী, স্ত্রী ও সন্তানেরা প্রতিনিয়তই তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করছে বলে জানা গেছে।

তথ্যাবলী দেখে জানা গেছে, উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের খালাশপীরহাটের ঠাকুরদাস লক্ষীপুর গ্রামের মৃত. জব্বার মন্ডলের ছেলে মোস্তাফিজার রহমান মন্ডল মানিক মন্ডল। তিনি ১৯৭১ সালে ৯ম শ্রেনীর ছাত্র থাকাবস্থায় দেশ মাতৃকার টানে মার্চ মাসেই যুদ্ধে অংশ নেন। তারপর ওই বছরের ১০ অক্টোবর ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের পতিরাম ইয়ুথ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের জন্য যান। সেখানে ১১ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২৮ দিন রাইফেল ট্রেনিং নিয়ে দেশে আসেন। ওই প্রশিক্ষণে তাদের অনেক সাদাকালো রংয়ের ছবিও রয়েছে।

এরপর তিনি ৭নং সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যুদ্ধের শেষের দিকে ২২টি অস্ত্র নিয়ে ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা পীরগঞ্জের টুকুরিয়া ইউনিয়নের টিওরমারী ও মোনাইল, দুর্গাপুর গ্রামে এন্টি ট্যাংক মাইন্ড উত্তোলন করে অপসারন করেন। জানা গেছে, যুদ্ধের শেষের দিকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সহযোগিতা ও দেশকে স্বাধীন করার জন্য দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি সীমান্ত দিয়ে পীরগঞ্জে আসবে। এ খবর জেনে পাকসেনারা পীরগঞ্জের টুকুরিয়া ইউনিয়নের টিওরমারী গ্রামের রাস্তায় শত শত মাইন্ড পুঁতে রাখে। মাইন্ড পুঁতে রাখার ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিকসহ তার সহযোগিরা মিত্রবাহিনীকে জানালে মিত্রবাহিনী পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের ত্রি-মোহনী ব্রীজ প্রবেশ করার পূর্বেই সম্মুক যুদ্ধ হয়।

যুদ্ধে ৩-৪ জন রাজাকার গ্রেপ্তার হয়। তাদেরকে ভারতের বলাহার অপারেশন ক্যাম্প ইনচার্জ ক্যাপ্টেন নুরুজ্জামানের নিকট ধৃত রাজাকার সহ অস্ত্র জমা দেন। অপরদিকে টিওরমারী গ্রামে ৫০/৬০ জন পাকসেনার সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক ও তার সহযোদ্ধাদের মুখোমুখী যুদ্ধে ২/৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। যুদ্ধ শেষে তার অনেক সহযোগিই মুক্তিযোদ্ধার গেজেটভুক্ত হলেও এখনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক গেজেটভুক্ত হতে পারেননি। এছাড়াও রংপুর-ঢাকা সড়কের পীরগঞ্জের আংরার ব্রীজের যুদ্ধেও বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক অংশ নেন বলে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রংপুর সদর উপজেলা কমান্ডার কামাল হোসেন, পীরগঞ্জের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।

এছাড়াও ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর থানার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাব হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধীর বাবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা রমেন চন্দ্র আমাকে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন। সেইসাথে তার মুক্তি লাল বার্তা নং- ১৭৫/১৮ এর সনদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্রও রয়েছে। সুত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হতে মানিক মন্ডল আবেদন করলে তাকে গেজেটভুক্ত না করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি তা বাতিল করে। পরে তিনি আপিল করলে সেটিও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক মন্ডল আক্ষেপ করে জাগো২৪.নেট বলেন, প্রশিক্ষণের আগে ও পরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেও এখন সরকারের গেজেটভুক্ত হতে পারছি না। অথচ আমার সহযোদ্ধারা অনেকেই গেজেটভুক্ত হয়েছেন। অথচ আমি বছরের পর বছর ধরে ধর্না দিয়ে যাচ্ছি। সরকারী তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম উঠাতে আর কত বছর ঘুরতে হবে জানি না জীবনের শেষ বয়সেও স্বীকৃতি পাচ্ছি না। এ জন্য প্রতিনিয়তই আমার যুদ্ধকালীন অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী, স্ত্রী, সন্তানদের প্রশ্নবানে আমি জর্জরিত হচ্ছি। তালিকাভুক্ত না হওয়ায় প্রতিনিয়তই বিবেকের দংশনের শিকার হচ্ছি। যদি জানতাম, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে স্বীকৃতি দেয়া হবে। তাহলে তো আগেই আবেদন করতাম। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দেশের ক্ষমতায় আসার পরই মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মুল্যায়ন করা শুরু হলে আমিও আবেদন করি। কিন্তু গেজেটভুক্ত হতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধের সময় অনেকের বয়স মাত্র এক বছর ছিল। তারাও আজ মুজিব নগরের সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারী চাকরীসহ সরকারের অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। অথচ আমি তখন ৯ম শ্রেনীর ছাত্র। আমার মতো এখনো অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন না।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মন্ডল জাগো২৪.নেট-কে বলেন, মানিক মন্ডল কেন গেজেটভুক্ত হতে পারেননি, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে আগামীতে উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটির সভায় বিষয়টি দেখা হবে।

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও গেজেটভুক্ত হয়নি মুক্তিযোদ্ধা মানিক মন্ডল

প্রকাশের সময়: ০৭:৩৮:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২

মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়নি মোস্তাফিজার রহমান মানিক মন্ডলের। তিনি গেজেটভুক্ত হতে সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিকবার আবেদন করে দিনের পর দিন ধর্না দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ফলে জীবন বাজি রেখে অল্প বয়সে যুদ্ধে অংশ নেয়া এই বীরযোদ্ধা এখন অনেকটাই হতাশ। তার সহযোদ্ধা, এলাকাবাসী, স্ত্রী ও সন্তানেরা প্রতিনিয়তই তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করছে বলে জানা গেছে।

তথ্যাবলী দেখে জানা গেছে, উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের খালাশপীরহাটের ঠাকুরদাস লক্ষীপুর গ্রামের মৃত. জব্বার মন্ডলের ছেলে মোস্তাফিজার রহমান মন্ডল মানিক মন্ডল। তিনি ১৯৭১ সালে ৯ম শ্রেনীর ছাত্র থাকাবস্থায় দেশ মাতৃকার টানে মার্চ মাসেই যুদ্ধে অংশ নেন। তারপর ওই বছরের ১০ অক্টোবর ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের পতিরাম ইয়ুথ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের জন্য যান। সেখানে ১১ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২৮ দিন রাইফেল ট্রেনিং নিয়ে দেশে আসেন। ওই প্রশিক্ষণে তাদের অনেক সাদাকালো রংয়ের ছবিও রয়েছে।

এরপর তিনি ৭নং সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যুদ্ধের শেষের দিকে ২২টি অস্ত্র নিয়ে ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা পীরগঞ্জের টুকুরিয়া ইউনিয়নের টিওরমারী ও মোনাইল, দুর্গাপুর গ্রামে এন্টি ট্যাংক মাইন্ড উত্তোলন করে অপসারন করেন। জানা গেছে, যুদ্ধের শেষের দিকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সহযোগিতা ও দেশকে স্বাধীন করার জন্য দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি সীমান্ত দিয়ে পীরগঞ্জে আসবে। এ খবর জেনে পাকসেনারা পীরগঞ্জের টুকুরিয়া ইউনিয়নের টিওরমারী গ্রামের রাস্তায় শত শত মাইন্ড পুঁতে রাখে। মাইন্ড পুঁতে রাখার ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিকসহ তার সহযোগিরা মিত্রবাহিনীকে জানালে মিত্রবাহিনী পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের ত্রি-মোহনী ব্রীজ প্রবেশ করার পূর্বেই সম্মুক যুদ্ধ হয়।

যুদ্ধে ৩-৪ জন রাজাকার গ্রেপ্তার হয়। তাদেরকে ভারতের বলাহার অপারেশন ক্যাম্প ইনচার্জ ক্যাপ্টেন নুরুজ্জামানের নিকট ধৃত রাজাকার সহ অস্ত্র জমা দেন। অপরদিকে টিওরমারী গ্রামে ৫০/৬০ জন পাকসেনার সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক ও তার সহযোদ্ধাদের মুখোমুখী যুদ্ধে ২/৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। যুদ্ধ শেষে তার অনেক সহযোগিই মুক্তিযোদ্ধার গেজেটভুক্ত হলেও এখনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক গেজেটভুক্ত হতে পারেননি। এছাড়াও রংপুর-ঢাকা সড়কের পীরগঞ্জের আংরার ব্রীজের যুদ্ধেও বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক অংশ নেন বলে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রংপুর সদর উপজেলা কমান্ডার কামাল হোসেন, পীরগঞ্জের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।

এছাড়াও ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর থানার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাব হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধীর বাবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা রমেন চন্দ্র আমাকে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন। সেইসাথে তার মুক্তি লাল বার্তা নং- ১৭৫/১৮ এর সনদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্রও রয়েছে। সুত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হতে মানিক মন্ডল আবেদন করলে তাকে গেজেটভুক্ত না করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি তা বাতিল করে। পরে তিনি আপিল করলে সেটিও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক মন্ডল আক্ষেপ করে জাগো২৪.নেট বলেন, প্রশিক্ষণের আগে ও পরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেও এখন সরকারের গেজেটভুক্ত হতে পারছি না। অথচ আমার সহযোদ্ধারা অনেকেই গেজেটভুক্ত হয়েছেন। অথচ আমি বছরের পর বছর ধরে ধর্না দিয়ে যাচ্ছি। সরকারী তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম উঠাতে আর কত বছর ঘুরতে হবে জানি না জীবনের শেষ বয়সেও স্বীকৃতি পাচ্ছি না। এ জন্য প্রতিনিয়তই আমার যুদ্ধকালীন অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী, স্ত্রী, সন্তানদের প্রশ্নবানে আমি জর্জরিত হচ্ছি। তালিকাভুক্ত না হওয়ায় প্রতিনিয়তই বিবেকের দংশনের শিকার হচ্ছি। যদি জানতাম, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে স্বীকৃতি দেয়া হবে। তাহলে তো আগেই আবেদন করতাম। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দেশের ক্ষমতায় আসার পরই মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মুল্যায়ন করা শুরু হলে আমিও আবেদন করি। কিন্তু গেজেটভুক্ত হতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধের সময় অনেকের বয়স মাত্র এক বছর ছিল। তারাও আজ মুজিব নগরের সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারী চাকরীসহ সরকারের অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। অথচ আমি তখন ৯ম শ্রেনীর ছাত্র। আমার মতো এখনো অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন না।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মন্ডল জাগো২৪.নেট-কে বলেন, মানিক মন্ডল কেন গেজেটভুক্ত হতে পারেননি, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে আগামীতে উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটির সভায় বিষয়টি দেখা হবে।