তোফায়েল হোসেন জাকির: গাইবান্ধায় দফায় দফায় বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। লাগামহীন দাম বৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষেরা। তাদের বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। যেন সংসার চালানোর দায় হয়ে পড়েছে। তাই সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে বোবা কান্না।
সম্প্রতি গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা গেছে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের চিত্র। এরপ্রভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো।
বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৫০ টাকা, তরই ৫০ টাকা, মুলা ৩৫ টাকা, কাকরোল ৪০ টাকা, বটবটি ৪০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, মুখিকচু ৬০ টাকা, আলু ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, পেঁপেঁ ২০ টাকা ও পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও ডিম প্রতিপিস ১৪ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত একসপ্তাহ আগে এসব পণ্যের দাম অনেকটাই কম ছিল। এরই মধ্যে লাফিয়ে বেড়ে এই ভোগ্যপণ্যের দাম। তবে ব্রয়লার মুরগী, চাল, মাছ, সোয়াবিন তেল, ডাল ও অন্যান্য মসলাসহ নিত্যপণ্যের দাম গত এক সপ্তাহে কিছুটা কমেছে।
জানা যায়, উত্তর জনপদের জেলা গাইবান্ধা। একসময় এ জেলাটি মঙ্গাঁ পিঁড়িত হিসেবে পরিচিত ছিল। এই মঙ্গাঁ দুরীকরণে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সেই মঙ্গাঁ নামটি ঘুচিয়ে স্বচ্ছলতা ফিরেছে সকল পেশা-শেণির মানুষের। এরই মধ্যে করোনা, বন্যা, খরাসহ নানা ধরণের দুর্যোগে কবলে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশী হওয়ায় আবার যেন সেই মঙ্গাঁর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে সাধারণ মানুষের মধ্যে ফের শুরু হয়েছে নিরব দুর্ভিক্ষ।
এদিকে, নদীবেষ্টিত গাইবান্ধায় বন্যা-ভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেন নিত্যসঙ্গী। এরপ্রভাবে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। ইতোমধ্যে মধ্যে হুহু করে বেড়ে চলেছে ভোগ্যপণ্য কিংবা নিত্যপণ্য ও বিভিন্ন জিনিসিপত্রের দাম। এমন দামের কারণে একেবারই বেসামাল সাধারণ মানুষেরা। দিনদিন তাদের ব্যয় বাড়লেও, বাড়ছে না আয়-রোজগার। ফলে সংসার চলাতে হাঁসফাঁস উঠেছে তাদের।
বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে ছিন্নমূল পরিবারের অনেকে বেঁছে নিয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি ও চুরি-চামারি কার্যকলাপ। সম্প্রতি শহর-হাট-বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দিনেদুপুরে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। সেই সঙ্গে মানুষের এই অভাব অনটনকে পুঁজি করে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় দাদনেরা। বিভিন্ন পরিবারের লোকজন তাদের দায়ভার সারতে ওইসব সুদারুদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাদন ব্যবসায়ীরা চরা সুদ গ্রহণ করছে ।
এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে প্রচণ্ড আঘাত হানতে শুরু করেছে। অধিক দামে পণ্যসামগ্রী কেনা ভুক্তভোগিদের বোবা কান্না যেনো দেখার কেউ নেই। অস্থির এই বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকি না থাকলে সাধারণ মানুষ আরও বেকায়দায় পড়তে পারে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে।
জাহিদুল ইসলাম নামের একজন স্বল্প আয়ের ব্যক্তি বলেন, যেভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সেতুলনায় আয় বাড়েনি তার। এতে করে পরিবারের চাহিদা পূরণে বাড়ছে ঋণের বোঝা। আগে একাধিক তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়া হতো। এখন খাদ্যপণ্যের দাম বেশি হওয়ায় খাবারের আইটেম কমানো হয়েছে।
খুচরা সবজি বিক্রিতা লাল মিয়া বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। এরই মধ্যে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বুষ্টি আর খরার কারণে কৃষকের উৎপাদনের কমে যাওয়ায় সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গাইবান্ধার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সামাদ জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি অব্যাহত রয়েছে। যারা কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তোফায়েল হোসেন জাকির, জাগো২৪.নেট 























