মো. রফিকুল ইসলাম: শিশুদের জন্য বাঁশ ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে দোলনা তৈরি ও বিক্রি করে অনেকেই ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। দোলনা বিক্রি করে তাদের কারও কারও প্রতিমাসে আয় অন্তত ৫০ হাজার টাকা। এতে অনেকের হয়েছে কর্মসংস্থান। পরিবারে ফিরেছে আর্থিক সচ্ছলতা। বাঁশের এ দোলনা তৈরি করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার সিরাজুল ইসলাম। তিনি উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের পুলহাটের বাসিন্দা। উপজেলার রানীরবন্দর-খানসামা সড়কের পাশে পুলহাটে তার দোলনার কারখানা। তিনি ১৯৯০ সালে বাঁশ দিয়ে দোলনা তৈরিতে তার হাতেখড়ি। এরপর থেকে তিনি ছোট-বড় সব ধরনের দোলনা তৈরি করছেন। এরপর থেকে তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দোলনা তৈরি করেই তাঁদের পরিবারের সদস্যসহ অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাম-বাংলার এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন তারা। এসব দোলনা খানসামা উপজেলার পাশাপাশি দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাঁকুরগাও, পঞ্চগড়, রংপুরসহ কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় পাইকারি দরে বিক্রি করা হয়। অনেক পাইকার তাদের এখান থেকেই ক্রয় করে নিজ এলাকায় নিয়ে যান।
দোলনার কারিগর সিরাজুল ইসলাম জানান-বাঁশ, প্লাস্টিকের ফিতা ও পেরেক দিয়ে দোলনা তৈরি করা হয়। সিরাজুল ইসলামের তিন ছেলে ও নাতিরাও এ দোলনা তৈরির কারখানায় কাজ করেন। প্রতিমাসে গড়ে অন্তত ২৪০-২৫০টি দোলনা তৈরি করেন। এসব দোলনা আকারভেদে ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এতে তার প্রতিমাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়েই তার সংসারের প্রায় ২০ জনের ভরণপোষণ চলে। সময়ের পরিক্রমায় তার ব্যবনার পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সংসারের অভাব-অনটন দূর হয়ে এসেছে সচ্ছলতা। তিনি হয়েছেন স্বাবলম্বী।
দোলনা তৈরির কারিগর মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিটি দোলনা খুচরা ৩০০ টাকা ও পাইকারি ২৩০-২৭০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন একজন ৪-৫টি করে দোলনা তৈরি করতে পারেন। এতে প্রতিদিন গড় আয় ৩০০-৪০০ টাকা। প্রতিদিন ৩০-৩৫টি দোলনা পাইকারি বিক্রি করতে পারেন। তবে প্লাস্টিক ও রড-স্ট্রিলের দোলনা তৈরি হওয়ায় আগের মতো আয় হয় না।
কারিগর মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দোলনা তৈরি ও বিক্রির কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে দোলনা তৈরির বিভিন্ন প্রকার উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। এছাড়াও প্লাস্টিক ও রড-স্ট্রিলের দোলনা তৈরি হওয়ায় বাঁশের তৈরি দোলনা বিক্রিও অনেক কমে গেছে। এরপরেও অনেক পরিবার এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন। কারণ স্বরুপ তারা জানান, এখন তাদের অন্য পেশায় যাওয়া সম্ভব নয়।
উপজেলার গোয়ালডিহি ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন লিটন বলেন, সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘদিন হাতে তৈরি দোলনার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কাজ করছেন। এ কাজে আর্থিকভাবে সহযোগিতা পেলে তাদের যেমন ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পাবে তেমনি অনেকের কর্মসংস্থান হবে। হবে গ্রাম-বাংলার এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাঁদের এ কাজ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
মো. রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) 

























