তোফায়েল হোসেন জাকির: জীবনে সফল হতে সঠিক পরিকল্পনায় যতেষ্ট। দুঢ় মনোবল নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে সেই ব্যক্তিই পোঁছাতে পারবে তার লক্ষ্যস্থানে। এমনিভাবে নিভৃত গ্রামের ২০০ জন উক্তা নার্সারি করে ঘুরিয়েছেন তাদের ভাগ্যের চাকা।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) যাওয়া হয় গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায়। এ উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর ও ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর, বুজরুক পাকুরিয়া, কিশামত দুর্গাপুর ও তরফ জাহান গ্রামের দেখা যায় শত শত নার্সারির সবুজের সমাহার। এসময় চারা বিক্রি ও পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলেন মালিক-শ্রমিকরা।
জানা যায়, ১৯৮৫ সালে ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মফসেল মেম্বর নামের এক কৃষক প্রথমে ৫০ শতক জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিয়ে শুরু করে নার্সারি ব্যবসা। এ নার্সারি থেকে লাভের মুখে দেখতে পান তিনি। এরপর ধীরে ধীরে নার্সারি পরিধি বাড়তে থাকে তার। এই নার্সারি ব্যবসায় সফলতা দেখে ওই গ্রামের আরও প্রায় ৫০ জন উদ্যোক্তা গড়ে তুলেছে নার্সারি। তারাও লাভবান হয়ে উঠছে।
এদিকে, ওইসব উদ্যাক্তাদের অনুকরণ করে পার্শ্ববতী খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের বুজরুক পাকুরিয়া, কিশামত দুর্গাপুর ও তরফ জাহান গ্রামে গড়ে উঠেছে আরও প্রায় ১৫০ টি নার্সারি। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে নার্সারির চারা উৎপাদন ও তা বিক্রি করে এখানকার উদ্যাক্তারা অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়ে চলেছে।
এসব নার্সারি গুলোতে ফলজ বুক্ষের মধ্যে রয়েছে-তিনফল, ড্রাগন, রামবুটান, এভোকেটা, পিটফল আপেল-আঙ্গুর ফল ইত্যাদি। ফুলের মধ্যে ক্রিসমাস্টি, এটোলিয়াম, নাইটকুইন, এ্যারোমেটিক, জুঁই, কবরীসহ আরও হরেক রকম ফুলের চারা। ওষুধির মধ্যে অর্জুন, আমলকি, হরিতকি, বহেরা, নিম, জয়তুন ও পাথরকুশিসহ নানা প্রজাতির চারা। কাঠবৃক্ষের মধ্যে- বেলজিয়াম, মেহগনি, সেগুন ও রেইন্ট্রি চারা। মসলা জাতের মধ্যে তেজপাতা, দারু চিনি, গোলমরিচ, লবঙ্গ। একই সঙ্গে সোভাবর্ধন ডেকোরেটর জাতিয় চারার মধ্যে রয়েছে ক্যাকটাস, ছাকুল্যান্টম পাতাবাহার, এ্যারোলিয়া প্রভৃতি। এছাড়া আরও বেশকিছু জাতের চারা দুলছে নার্সারি গুলোতে।
সাদুল্লাপুর-ঠুটিয়াপুকুর সড়কের পাশে অধিকাংশ নার্সারি গড়ে উঠেছে। পথের ধারে নার্সারির চারাগুলো যেন সোভাবর্ধন হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতে করে দৃষ্টি কাড়ছে পথচারিদের।খানিকটা প্রাণ জুড়াতে কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন আবার কেউবা কিনে নিচ্ছে নানা জাতের চারা।
বুজরুক পাকুরিয়া গ্রামের সততা নার্সারির মালিক শহিদুল ইসলাম জাগো২৪.নেট-কে জানান, এক সময় নুন আন্তে পান্থা ফুরায় অবস্থা ছিল তার। এরপর ১৯৯০ সালে নিজস্ব ২ একর জমিতে নার্সারি করে ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। তার নার্সারিতে প্রায় ১৫০ জাতের চারা রয়েছে। এসব চারা উৎপাদন করে বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা, যশোর ও বগুড়া থেকে উন্নত জাতের চারা-বীজ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।এসব চারা বড়ো করে অধিক চারা উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত চারাগুলো বিভিন্ন এলাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারি মূল্যে বিক্রি করা হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে খুচরাও বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে শ্রমিক, সার-কিটনাসক খরব বাদে মাসিক প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়।
আরেক উদ্যাক্তা রেজাউল করিম জাগো২৪.নেট-কে বলেন, নার্সারি ব্যবসায় যতেষ্ট লাভ রয়েছে। কিন্তু প্রায় পৌনে দুই বছর ধরে করোনা পরিস্থির প্রভাবে এ ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। দফায় দফায় লকডাউনের কবলে চারা বিক্রি কমেছে অনেকটাই। এতে করে ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইউনুছ আলী জাগো২৪.নেট-কে জানান, নার্সারি ব্যবসা অত্যান্ত লাভজনক। কেউ পরিকল্পনা মাফিক নার্সারি করলে অনায়াসে তিনি স্বাবলম্বী হবেন। ওই এলাকার উদ্যাক্তাদের লাভবান করতে সগযোগিতা করা হচ্ছে।
তোফায়েল হোসেন জাকির, জাগো২৪.নেট 


















