মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তিস্তার ভাঙনে বদলে গেছে ১০ গ্রামের মানচিত্র

কুড়িগ্রামঃ জেলার রাজারহাটে তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ওই উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী রামহরি,পাড়ামৌলা, কালির মেলা, চতুরা, গাবুর হেলান, তৈয়বখাঁ, বিদ্যানন্দসহ ১০ গ্রামের অর্ধ শতাধিক ঘরবাড়িসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি নদী গ্রাস করেছে । মানচিত্র থেকে মিশে গেছে এসব এলাকা। বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এসব গ্রামের মানুষজন এখন করাল গ্রাসী তিস্তা নদীর ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
প্রায় মৃত তিস্তা নদীর ভাঙন ঠেকাতে পাউবির প্রকৌশলীরা বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দ নিয়ে আসলেও অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ, দুর্নীতি এবং সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা ভাঙন রোধে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীরা। এসব মানুষ ভাঙন রোধে পরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) ভাঙন কবলিত এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, কালির মেলা, চতুরা, গাবুর হেলানসহ তিস্তা তীরবর্তী ১০টি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে নদীতে ঘূর্ণাবাতের সৃষ্টি হয়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলছে, পানি দ্রুত কমে নদীর মাঝে চর পড়ায় নদীর কিনারা দিয়ে স্রোতের তীব্রতা বেড়ে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ইতোমধ্যে অর্ধ শতাধিক পরিবারের শতাধিক মানুষ শেষ সম্বল বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে রামহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামে মসজিদ, মন্দির, কালির মেলা থেকে বিজলি বাজার পাকা সড়কসহ অসংখ্য বসতবাড়ি।
খরস্রোতা তিস্তার ভাঙন তীব্র হওয়ায় আতঙ্কে অনেক মানুষ তাদের বাস্তুভিটা ফেলে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে রামহরি গ্রামেই ২০ পরিবার। ওই গ্রামের ওহাব আলীর আধাপাকা বাড়ি এখন নদীর গর্ভে। সর্বশান্ত হয়ে সে স্বপরিবারে কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছে ঢাকা শহরে। প্রতি বছর বন্যার পানি কমতে শুরু করলেই এলাকাটিতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে।
আব্দুল কাদের (৬৫) জানান, আমার বয়সে তেরবার নদী ভাঙনে বাড়ির সরাতে হয়েছে , এখন বাড়ি করার মতন জায়গা নেই। এখন অন্যের জায়গায় আছি।
একই গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন বলেন, চ্যাংরা বয়স থাকি নদী ভাঙন দেখি আসছি, ভাঙতে ভাঙতে সব শ্যাষ। এল্যা টাকাও নাই, বাড়ি করার জায়গাও নাই।
তৈয়বখাঁ গ্রামের বিমল চন্দ্র বলেন, নদীর পারে ৩টা ঘর নিয়া, বসবাস করছিলাম তাও নদীত গ্যাইছে। বেটা-বেটি বিয়ার লাইক হইছে। বড় কষ্টে আছি।
ওই গ্রামের আব্দুল গণি (৬২), হক্কানি (৫৫), আব্দুল ওয়াহাবসহ স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমরা কোন ত্রাণ চাই না , সরকার যেন নদী ভাঙন রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, এক যুগে নদী ভাঙনে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে এক সময় বিদ্যানন্দ ইউনিয়নকে হয়তো খুঁজে পাওয় যাবে না।
কুড়িগ্রাম পাউবির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান বলেন, বর্তমান সরকার তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে মহা পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।
 

জনপ্রিয়

তিস্তার ভাঙনে বদলে গেছে ১০ গ্রামের মানচিত্র

প্রকাশের সময়: ০৪:৪১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০

কুড়িগ্রামঃ জেলার রাজারহাটে তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ওই উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী রামহরি,পাড়ামৌলা, কালির মেলা, চতুরা, গাবুর হেলান, তৈয়বখাঁ, বিদ্যানন্দসহ ১০ গ্রামের অর্ধ শতাধিক ঘরবাড়িসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি নদী গ্রাস করেছে । মানচিত্র থেকে মিশে গেছে এসব এলাকা। বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এসব গ্রামের মানুষজন এখন করাল গ্রাসী তিস্তা নদীর ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
প্রায় মৃত তিস্তা নদীর ভাঙন ঠেকাতে পাউবির প্রকৌশলীরা বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দ নিয়ে আসলেও অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ, দুর্নীতি এবং সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা ভাঙন রোধে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীরা। এসব মানুষ ভাঙন রোধে পরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) ভাঙন কবলিত এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, কালির মেলা, চতুরা, গাবুর হেলানসহ তিস্তা তীরবর্তী ১০টি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে নদীতে ঘূর্ণাবাতের সৃষ্টি হয়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলছে, পানি দ্রুত কমে নদীর মাঝে চর পড়ায় নদীর কিনারা দিয়ে স্রোতের তীব্রতা বেড়ে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ইতোমধ্যে অর্ধ শতাধিক পরিবারের শতাধিক মানুষ শেষ সম্বল বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে রামহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামে মসজিদ, মন্দির, কালির মেলা থেকে বিজলি বাজার পাকা সড়কসহ অসংখ্য বসতবাড়ি।
খরস্রোতা তিস্তার ভাঙন তীব্র হওয়ায় আতঙ্কে অনেক মানুষ তাদের বাস্তুভিটা ফেলে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে রামহরি গ্রামেই ২০ পরিবার। ওই গ্রামের ওহাব আলীর আধাপাকা বাড়ি এখন নদীর গর্ভে। সর্বশান্ত হয়ে সে স্বপরিবারে কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছে ঢাকা শহরে। প্রতি বছর বন্যার পানি কমতে শুরু করলেই এলাকাটিতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে।
আব্দুল কাদের (৬৫) জানান, আমার বয়সে তেরবার নদী ভাঙনে বাড়ির সরাতে হয়েছে , এখন বাড়ি করার মতন জায়গা নেই। এখন অন্যের জায়গায় আছি।
একই গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন বলেন, চ্যাংরা বয়স থাকি নদী ভাঙন দেখি আসছি, ভাঙতে ভাঙতে সব শ্যাষ। এল্যা টাকাও নাই, বাড়ি করার জায়গাও নাই।
তৈয়বখাঁ গ্রামের বিমল চন্দ্র বলেন, নদীর পারে ৩টা ঘর নিয়া, বসবাস করছিলাম তাও নদীত গ্যাইছে। বেটা-বেটি বিয়ার লাইক হইছে। বড় কষ্টে আছি।
ওই গ্রামের আব্দুল গণি (৬২), হক্কানি (৫৫), আব্দুল ওয়াহাবসহ স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমরা কোন ত্রাণ চাই না , সরকার যেন নদী ভাঙন রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, এক যুগে নদী ভাঙনে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে এক সময় বিদ্যানন্দ ইউনিয়নকে হয়তো খুঁজে পাওয় যাবে না।
কুড়িগ্রাম পাউবির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান বলেন, বর্তমান সরকার তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে মহা পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।