সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাকবাকুম শব্দে মুখর সাদেকুলের বাড়ি

তোফায়েল হোসেন জাকির: কৃষক সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ (৫০)। শখে বসে পালন করছেন কবুতর। বাড়ির উঠানে উঁচু একটি খাঁচায় কবুতরগুলোর বাসস্থান। আর ঘরে চালার ওপর পাখা মেলে উড়াউড়ি করতে থাকে ঝাঁকে-ঝাঁক কবুতর। এগুলোর বাকবাকুম শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠেছে সাদেকুলের পুরোবাড়ি।

সম্প্রতি এমনি এক চিত্র দেখা গেছে- গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাতলি গ্রামে। এ গ্রামের মৃত আব্দুল গনি মিয়ার ছেলে সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ ওইসব কবুতর পালন করছেন।

জানা যায়, সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ পেশায় একজন কৃষক। ৪ বছর আগে শখে বসে ১০ জোড়া কবুতর (পায়রা-পায়রি) সাড়ে ৩ হাজার টাকায় কিনেন। বাড়ির উঠানে একটি খাঁচা তৈরী করে সেগুলো লালন-পালন শুরু করা হয়। মাসখানেক আবদ্ধ খাঁচায় কবুতরকে খাদ্য দেওয়ার পর পোষ মানানো হয়। এরপর ছেড়ে দেওয়া হয় কবুতরগুলো। এসব কবুতর সারাদিন বিভিন্ন এলাকায় উড়েউড়ে আহার করে থাকে। দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই স্বেচ্ছায় ফিরে আসে সেই আবদ্ধ খাঁচার শান্তির নীড়ে। এভাবে কয়েক মাস পরই পায়রি জাতের কতবুরটি বাচ্চা দিতে থাকে। এমনিভাবে প্রজননে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সাদেকুলের কবুতরের সংখ্যা। সেই থেকে ৫ শতাধিক বাচ্চা বিক্রি করার পর এখন প্রায় ২০০ কবুতর রয়েছে তার বাড়িতে।

স্থানীয় আজাদুল ইসলাম বলেন, এইসব কবুতরগুলো ভোরের সূর্য উঠার সাথেই বাকবাকুম শব্দে মুখরিত হয়ে যায় গোটা বাড়ি। খাদ্যের সন্ধানে কবুতরগুলো পাখা মেলে ঝাঁকে ঝাঁক উড়ে যায় অন্য দিগন্তরে। আবার বাড়তি খাবারের জন্য ফিরে আসে শান্তির নীড় খাঁচায়। আর পাখিপ্রেমি সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ কবুতরগুলোকে খাদ্য হিসেবে চালের কুড়া, গুড়া, ভাতসহ নানা ধরণের মিশ্রিত খাবার দেন। এরপর কবুতরগুলো আবাও উড়াল দেয় আপন খেয়ালে। ফের সন্ধ্যা ঘনি ফিরে আসে সেই খাঁচায় ।

এ বিষয়ে নাজমা সিদ্দিকা নামের এক গৃহবধু বলেন, আমি মূলত একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছি। আমার কর্মরত এলাকার কৃষক সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ শখের বসে তার বাড়িতে অনেকগুলো কবুতর লালন- পালন করেন। প্রায় সময়ই ১০-১২ টা করে কবুতরের বাচ্চা তার কাছ থেকে কিনে থাকি। কবুতরের মাংস খুব পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাবার, সদ্য রোগমুক্ত রোগির জন্য কবুতরের মাংস বলকারক।

কবুতর মালিক সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ জানান, প্রথমে শখ করে কবুতর পালন শুরু করেন। প্রজনন ক্ষমতায় ধীর ধীরে বাড়তে থাকে কবুতরের সংখ্যা। এর মাংস মনুষ্যখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয়ভাবে কবুতর বাচ্চার চাহিদা প্রচুর। একমাস বয়সের বাচ্চা প্রতিটি ১০০-১২০ টাকা দামে বিক্রি করেন। এ থেকে বছরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কবুতর বিক্রি করা হয়। যেহেতু বাহিরে আহার করে সেহেতু খরচ হয় অনেক কম। তাও বার্ষিক প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।

তিনি আরও জানান, অল্প খরচে কবুতর পালনে লাভ বেশী। তাই বর্ধিত আকার খাঁচায় বানিজ্যিকভাবে কবুতর লালন-পালন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কমকর্তা ডা. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, আদিকাল থেকে মানুষ বাসা-বাড়িতে কবুতর পালন করে আসছিলেন। নানা কারণে তা আবার কমেছে। তবে এটি যদি কেউ ব্যবসায়ীক মনে লালন-পালন করেন, অনায়াসে তিনি স্বাবলম্বি হতে পারবেনন। সেই সাথে সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎকে আমার সহযোগিতা করছি।

জনপ্রিয়

বাকবাকুম শব্দে মুখর সাদেকুলের বাড়ি

প্রকাশের সময়: ০৫:১৯:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অগাস্ট ২০২৩

তোফায়েল হোসেন জাকির: কৃষক সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ (৫০)। শখে বসে পালন করছেন কবুতর। বাড়ির উঠানে উঁচু একটি খাঁচায় কবুতরগুলোর বাসস্থান। আর ঘরে চালার ওপর পাখা মেলে উড়াউড়ি করতে থাকে ঝাঁকে-ঝাঁক কবুতর। এগুলোর বাকবাকুম শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠেছে সাদেকুলের পুরোবাড়ি।

সম্প্রতি এমনি এক চিত্র দেখা গেছে- গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাতলি গ্রামে। এ গ্রামের মৃত আব্দুল গনি মিয়ার ছেলে সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ ওইসব কবুতর পালন করছেন।

জানা যায়, সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ পেশায় একজন কৃষক। ৪ বছর আগে শখে বসে ১০ জোড়া কবুতর (পায়রা-পায়রি) সাড়ে ৩ হাজার টাকায় কিনেন। বাড়ির উঠানে একটি খাঁচা তৈরী করে সেগুলো লালন-পালন শুরু করা হয়। মাসখানেক আবদ্ধ খাঁচায় কবুতরকে খাদ্য দেওয়ার পর পোষ মানানো হয়। এরপর ছেড়ে দেওয়া হয় কবুতরগুলো। এসব কবুতর সারাদিন বিভিন্ন এলাকায় উড়েউড়ে আহার করে থাকে। দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই স্বেচ্ছায় ফিরে আসে সেই আবদ্ধ খাঁচার শান্তির নীড়ে। এভাবে কয়েক মাস পরই পায়রি জাতের কতবুরটি বাচ্চা দিতে থাকে। এমনিভাবে প্রজননে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সাদেকুলের কবুতরের সংখ্যা। সেই থেকে ৫ শতাধিক বাচ্চা বিক্রি করার পর এখন প্রায় ২০০ কবুতর রয়েছে তার বাড়িতে।

স্থানীয় আজাদুল ইসলাম বলেন, এইসব কবুতরগুলো ভোরের সূর্য উঠার সাথেই বাকবাকুম শব্দে মুখরিত হয়ে যায় গোটা বাড়ি। খাদ্যের সন্ধানে কবুতরগুলো পাখা মেলে ঝাঁকে ঝাঁক উড়ে যায় অন্য দিগন্তরে। আবার বাড়তি খাবারের জন্য ফিরে আসে শান্তির নীড় খাঁচায়। আর পাখিপ্রেমি সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ কবুতরগুলোকে খাদ্য হিসেবে চালের কুড়া, গুড়া, ভাতসহ নানা ধরণের মিশ্রিত খাবার দেন। এরপর কবুতরগুলো আবাও উড়াল দেয় আপন খেয়ালে। ফের সন্ধ্যা ঘনি ফিরে আসে সেই খাঁচায় ।

এ বিষয়ে নাজমা সিদ্দিকা নামের এক গৃহবধু বলেন, আমি মূলত একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছি। আমার কর্মরত এলাকার কৃষক সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ শখের বসে তার বাড়িতে অনেকগুলো কবুতর লালন- পালন করেন। প্রায় সময়ই ১০-১২ টা করে কবুতরের বাচ্চা তার কাছ থেকে কিনে থাকি। কবুতরের মাংস খুব পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাবার, সদ্য রোগমুক্ত রোগির জন্য কবুতরের মাংস বলকারক।

কবুতর মালিক সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎ জানান, প্রথমে শখ করে কবুতর পালন শুরু করেন। প্রজনন ক্ষমতায় ধীর ধীরে বাড়তে থাকে কবুতরের সংখ্যা। এর মাংস মনুষ্যখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয়ভাবে কবুতর বাচ্চার চাহিদা প্রচুর। একমাস বয়সের বাচ্চা প্রতিটি ১০০-১২০ টাকা দামে বিক্রি করেন। এ থেকে বছরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কবুতর বিক্রি করা হয়। যেহেতু বাহিরে আহার করে সেহেতু খরচ হয় অনেক কম। তাও বার্ষিক প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।

তিনি আরও জানান, অল্প খরচে কবুতর পালনে লাভ বেশী। তাই বর্ধিত আকার খাঁচায় বানিজ্যিকভাবে কবুতর লালন-পালন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কমকর্তা ডা. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, আদিকাল থেকে মানুষ বাসা-বাড়িতে কবুতর পালন করে আসছিলেন। নানা কারণে তা আবার কমেছে। তবে এটি যদি কেউ ব্যবসায়ীক মনে লালন-পালন করেন, অনায়াসে তিনি স্বাবলম্বি হতে পারবেনন। সেই সাথে সাদেকুল ইসলাম বিদ্যুৎকে আমার সহযোগিতা করছি।