রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিস্তি মানে না বৃষ্টি

যেটুকু আয় হয় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনবো নাকি কিস্তি দেব

বৃদ্ধ রফিকুল ইসলাম। পেশায় অটোভ্যান চালক। মাথায় পলিথিন মোড়ানো। ঝুম বুষ্টিতে বেড়িয়েছেন গাড়ি নিয়ে। ভেজা শরীরের কাঁপুনিতে যাত্রী অপেক্ষায়। একই সঙ্গে চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। কারণ হিসেবে জানালেন- এনজিও’র কিস্তির কথা। বললেন- কিস্তির মাস্টার মানে না বৃষ্টি। দিতেই হবে কিস্তি। তাই বৃষ্টির মধ্যে কিস্তির টাকা যোগাতে ভাড়া মারছেন তিনি।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরে দেখা হয় ভ্যানচালক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। এসময় ঋণের চাপ আর সংসারের নানা অভাব-অনটনের কথা জানালেন তিনি।

জানা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের মীরপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৬৩)। বসতভিটা ছাড়া তেমন কিছু সহায়-সম্ভব নেই। ঋণের টাকায় কিনেছেন একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যানগাড়ি। স্ত্রী, সন্তান ও নাতি-নাতনিসহ ৬ সদস্যের সংসার। তাদের মধ্যে একমাত্র উপার্জনক্ষম রফিকুল ইসলাম। জীবিকার তাগিদে ভ্যানগাড়িই তার জীবন সংগ্রাম। একসময় এই গাড়ির রোজগার দিয়ে চলছিল সংসার। কিন্তু ইদানিং তা দিয়ে আর চলছে না। বাজারে সব কিছুর দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টায় ধীরে ধীরে বাড়ছে ঋণের বোঝা। এরই মধ্যে একটি এনজিও থেকে প্রথমে ২০ হাজার টাকা লোন নেওয়া হলে সেই ঋণ এখন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গাক ও আশা নামের দুটি এনজিও থেকে এই ঋণ নিয়েছেন। এর জন্য সাপ্তাহিক কিস্তি ৪ হাজার টাকা দিয়ে হয় রফিকুলকে। কোন এক সপ্তাহে টাকা যোগানের ব্যর্থতায় কিস্তি দিতে না পারলে, এনজিও কর্মী ছাড়ে না বাড়ির উঠান। তারা বোঝেনা অভাব কিংবা ঝড়বৃষ্টি। দিতেই হবে ঋণের কিস্তি। এমতাবস্থায় স্থানীয় দাদন নিয়ে পরিশোধ করতে হয় কিস্তির টাকা।

বৃদ্ধ ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এক সময়ে ভ্যানের রোজগারে সংসার চলতো। কিন্তু বর্তমানে আর চলছে না। খাদ্যপণ্যসহ সবকিছু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন দেনা বাড়ছে। এখন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লোনের সাপ্তাহিক কিস্তি ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। তাই কয়েক দিনের টানা বর্ষণের মধ্যেও ভাড়া মারতে হচ্ছে। যেটুকু আয় হয় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনবো নাকি কিস্তি দেব। এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছি।

এদিকে, বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানায়- বর্তমানে শুধু রফিকুল ইসলামই নন। গ্রাম-গঞ্জে এমন অসংখ্য রফিকুলরা চরম বেকায়দায় রয়েছে। তারা ভুগছে আর্থিক দৈন্যতায়। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব একেবারই বেশামাল। এ অবস্থায় খেটে খাওয়া রফিকুলরা ঋণের পিছে ছুটছেন। আর মধ্যবিত্তর অবস্থা আরও করুণ। অনেকটা গুমড়ে কাঁদছেন তারা। তাদের অসহায়ত্ব দেখার কেউ নেই।

জনপ্রিয়

কিস্তি মানে না বৃষ্টি

প্রকাশের সময়: ০৮:৩৪:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩

যেটুকু আয় হয় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনবো নাকি কিস্তি দেব

বৃদ্ধ রফিকুল ইসলাম। পেশায় অটোভ্যান চালক। মাথায় পলিথিন মোড়ানো। ঝুম বুষ্টিতে বেড়িয়েছেন গাড়ি নিয়ে। ভেজা শরীরের কাঁপুনিতে যাত্রী অপেক্ষায়। একই সঙ্গে চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। কারণ হিসেবে জানালেন- এনজিও’র কিস্তির কথা। বললেন- কিস্তির মাস্টার মানে না বৃষ্টি। দিতেই হবে কিস্তি। তাই বৃষ্টির মধ্যে কিস্তির টাকা যোগাতে ভাড়া মারছেন তিনি।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরে দেখা হয় ভ্যানচালক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। এসময় ঋণের চাপ আর সংসারের নানা অভাব-অনটনের কথা জানালেন তিনি।

জানা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের মীরপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৬৩)। বসতভিটা ছাড়া তেমন কিছু সহায়-সম্ভব নেই। ঋণের টাকায় কিনেছেন একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যানগাড়ি। স্ত্রী, সন্তান ও নাতি-নাতনিসহ ৬ সদস্যের সংসার। তাদের মধ্যে একমাত্র উপার্জনক্ষম রফিকুল ইসলাম। জীবিকার তাগিদে ভ্যানগাড়িই তার জীবন সংগ্রাম। একসময় এই গাড়ির রোজগার দিয়ে চলছিল সংসার। কিন্তু ইদানিং তা দিয়ে আর চলছে না। বাজারে সব কিছুর দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টায় ধীরে ধীরে বাড়ছে ঋণের বোঝা। এরই মধ্যে একটি এনজিও থেকে প্রথমে ২০ হাজার টাকা লোন নেওয়া হলে সেই ঋণ এখন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গাক ও আশা নামের দুটি এনজিও থেকে এই ঋণ নিয়েছেন। এর জন্য সাপ্তাহিক কিস্তি ৪ হাজার টাকা দিয়ে হয় রফিকুলকে। কোন এক সপ্তাহে টাকা যোগানের ব্যর্থতায় কিস্তি দিতে না পারলে, এনজিও কর্মী ছাড়ে না বাড়ির উঠান। তারা বোঝেনা অভাব কিংবা ঝড়বৃষ্টি। দিতেই হবে ঋণের কিস্তি। এমতাবস্থায় স্থানীয় দাদন নিয়ে পরিশোধ করতে হয় কিস্তির টাকা।

বৃদ্ধ ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এক সময়ে ভ্যানের রোজগারে সংসার চলতো। কিন্তু বর্তমানে আর চলছে না। খাদ্যপণ্যসহ সবকিছু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন দেনা বাড়ছে। এখন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লোনের সাপ্তাহিক কিস্তি ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। তাই কয়েক দিনের টানা বর্ষণের মধ্যেও ভাড়া মারতে হচ্ছে। যেটুকু আয় হয় তা দিয়ে চাল-ডাল কিনবো নাকি কিস্তি দেব। এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছি।

এদিকে, বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানায়- বর্তমানে শুধু রফিকুল ইসলামই নন। গ্রাম-গঞ্জে এমন অসংখ্য রফিকুলরা চরম বেকায়দায় রয়েছে। তারা ভুগছে আর্থিক দৈন্যতায়। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব একেবারই বেশামাল। এ অবস্থায় খেটে খাওয়া রফিকুলরা ঋণের পিছে ছুটছেন। আর মধ্যবিত্তর অবস্থা আরও করুণ। অনেকটা গুমড়ে কাঁদছেন তারা। তাদের অসহায়ত্ব দেখার কেউ নেই।