জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য বাংলাবিদ ও বিশিষ্ট নজররুল গবেষক প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রত্যেকেই একেকটি ধ্রæবতারকা। তাঁরা আমাদের পথপ্রদর্শক। তাঁদের আদর্শ মহান মুক্তিযদ্ধের আদর্শ। তাঁদের আদর্শ ধারণ করে আমরা আমাদের জীবন গড়ব। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের আদর্শকে ধারণ করে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
তিনি গতকাল ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ শনিবার রাতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব আয়োজিত ‘রবীন্দ্র নজরুল স্মরণোৎসব ২০২৩’ এ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের নিহত শহীদদের, মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের, জেলহত্যা দিবসে নিহত চার শহীদ এবং ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
প্রধান অতিথি বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ সালে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অগ্রসর শহর ময়মনসিংহে আসেন। সেইসময় রবি ঠাকুর বিদ্যাময়ী স্কুল এবং আন্দমোহন কলেজে বক্তৃতা করেছেন। আগামী ২০২৬ সালে রবীন্দ্রনাথের ময়মনসিংহে আগমনের শতবর্ষ হতে যাচ্ছে। ময়মনসিংহবাসীকে অত্যন্ত সাড়ম্বরের সাথে রবীন্দ্রনাথের ময়মনসিংহে আগমনের শতবর্ষ পালন করার আহŸান জানান এবং ময়মনসিংহবাসী পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এসময় প্রধান অতিথি আরও বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রথম আসেন। এরপর তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। তবে তাঁর প্রথম আগমন এবং যেখানে তিনি সমাহিত হয়েছেন সেই জায়গা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে নজরুলের ত্রিশাল আগমনের শতবর্ষ পালিত হয়েছে। তবে সেই পালন যেভাবে হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি, আরও সাড়ম্বরের সাথে, আরও বড় আকারে উদ্যাপিত হওয়া উচিত ছিল। ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব আজকে যে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে তা অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ। তারা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের স্মরণের জন্য কোন বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ বা শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের দিকে তাকায়নি। আসলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল দুই মহাত্মা একই সুতোর মতো। তাঁদের নিয়ে যেকোন সময় আলোচনা হতে পারে এবং আরও ব্যাপকভাবে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এই আয়েজনের জন্য তিনি ময়মনসিংহ প্রেসক্লাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগদানেরপর শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন এই তিনটি মোটোকে সামনে রেখে কাজ শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সীমানা প্রাচীর ছিল না, সীমানা প্রাচীর করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যেই দুইটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করেছি এবং আগামী ফেব্রæয়ারিতে আরও একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম বার্ষিক প্রতিবেদন, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ এবং বিভিন্ন জার্নাল নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিকভাবে শতকরা দুই ভাগ গবেষক স্কলারের ক্ষেত্রেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক স্থান পেয়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
কবি নজরুল ত্রিশাল আগমনের কারণেই ত্রিশালে কবির নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে উল্লেখ করে মাননীয় উপাচার্য বলেন, ত্রিশাল এবং ময়মনসিংহবাসীর চাওয়ার মধ্য দিয়ে এবং ত্রিশাল ও ময়মনসিংহের সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। এখন জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছেন বর্তমান সরকার। তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এমন সহজ ব্যাপার ছিল না। অনেক আগেই আপনাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আপনারা বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে আপনাদের দাবিগুলো প্রচার করেছেন। সুতরাং এই বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ভাবমূর্তি তৈরিতেও আপনাদের কাজ করতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে। ত্রিশালবাসী, ময়মনসিংহবাসী ও সাংবাদিকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রচলিত শিক্ষার বাইরে গিয়ে, প্রকৃত শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে। তিনি শিক্ষার্থীদের এমনভাবে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন যেখানে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে নির্দিষ্ট সময় ধরে লেকচার দেওয়া না, বরং শ্রেণিকক্ষের বাইরে এবং অনির্দিষ্ট সময় ধরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেই সময় প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় তৎকালীন বৃটিশ সরকারের কেরানি হওয়ার যোগ্য করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা হতো। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন বিশ্বভারতীতে সেখানে তারা মানুষ গড়তেন। শুধু চাকুরির জন্য নয় বরং দেশের জন্য মন কাঁদবে এমন মানুষ হিসেবে তৈরি করা হতো। আমরা আমাদের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কেও বিশ্বভারতীর মতো ভাবমূর্তির জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, সেই লক্ষ্যে অহরাত্রি কাজ করে চলেছি। এখন শুধু প্রয়োজন আপনাদের সহযোগিতা, আপনারা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে গর্ব করতে পারেন এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও ময়মনসিংহ জেলার সম্মানিত জেলাপ্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান। আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন কথা সাহিত্যিক ও ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সদস্য সালিম হাসান, ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল মাকসুদ, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সদস্য কুমকুম সরকার এবং ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সদস্য কামরান পারভেজ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ-সম্পাদক অমিত রায়সহ প্রেসক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিকবৃন্দ। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর ময়মনসিংহের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
স্টাফ করেসপন্ডেন্টে, জাগো২৪.নেট 























