আফসানা আক্তার মিমি: গাইবান্ধা জেলার জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে লক্ষীপুর ইউনিয়নের মাঠের বাজার; বিশেষ কোনো কারণে সবার নজর এখন এখানে। কেননা প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে এই অঞ্চলে। এরপর থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিরল এই ফুল চাষ দেখতে আসছেন অনেকে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার মৌমিত; সম্প্রতি ছুটি পেয়ে বাড়ি এসেছেন। বন্ধু-বান্ধবের কাছে শুনেছেন পাশেই সূর্যমুখী ফুল বাগান। উৎসাহ নিয়ে দল বেঁেধ মাঠের বাজারে এসে বাগানে ঢুকেই তুলছেন একের পর এক ছবি। ঘুরতে আসা নাশিত, রাফি ও মারুফের সাথে কথা বলে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সূর্যমুখী ফুলের সাথে ছবি দেখেছেন অনেকের। তখন থেকেই একটা সুপ্ত ইচ্ছে মনে লুকানো ছিলো। আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। সূর্যমুখী ফুল ছোঁয়াসহ মৌমাছির মধু আহরণের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও নিজের মোবাইল ও ক্যামেরায় ধারণ করে খুশি তারা। পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। সেজেগুজে এসে বিভিন্ন সূর্যমুখী ফুলের সাথে বিভিন্ন আঙ্গিকে নিজেদের ছবি তুলতে ব্যস্ত তারা। জেলার সৌন্দর্যপ্রেমী শুধু উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েই নয় ভ্রমণপিপাসু অনেক মানুষের বিনোদনের স্থানে পরিণত হয়েছে কৃষক মো. জিয়াউর রহমানের এই ৩ বিঘা সূর্যমুখী ফুল বাগান।
নদীবিধৌত গাইবান্ধা জেলায় ধান, গম, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের চাষ সর্বত্র দৃশ্যমান। তবে, এবারই প্রথম সদর উপজেলার মাঠের বাজার এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এই ফুল চাষ করছেন এই উদ্যোক্তা। জেলার বিভিন্ন স্থানে কমবেশি সূর্যমুখী ফুল চাষ শুরু হলেও এতো বিস্তর পরিসরে দেখা মেলা ভাড়। মাঠের বাজারে বৃহৎ পরিসরের এই বাগান জুড়ে সর্বত্রই হলুদ ফুল আর সবুজ গাছের অপরূপ দৃশ্য। যেনো সূর্যের সাথে কথা বলছে একেকটি ফুল। তাই তো সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী এই ফুলের ছোঁয়া পেতে ভিড় করেন ভ্রমণপিপাসু ছোট-বড় সকলে।

উদ্যোক্তা জিয়াউর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৭ বিঘা ফসলি জমি রয়েছে তার। বাপ-দাদার আমল থেকে এসব জমিতে ধান চাষ করে আসছেন তারা। তবে, এবার এসকেএস ফাউন্ডেশনের এক সদস্যের অণুপ্রেরণায় এবারই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন তিনি। অন্যান্য কৃষকের সাথে কথা বলেও নিশ্চিত হোন এ চাষে ধানের থেকে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে রোপন করা হয়েছে এই সূর্যমুখী ফুল। মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা খরচে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে কৃষকের ঘরে উঠবে এই উচ্চ ফলনশীল ফসল। আশা করছেন, বাম্পার ফলনেরও। এরপর প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বাজারজাতকরণের জন্য এসকেএস ফাউন্ডেশন সাহায্য করবে বলে জানালেন এই উদ্যোক্তা।
কৃষকদের বৈচিত্র্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে ব্যতিক্রমধর্মী এই সূর্যমুখী ফুল চাষে সবধরণের সহায়তা দিচ্ছে এসকেএস ফাউন্ডেশনের এসএমএপি প্রকল্প। প্রকল্প ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ মো. হারুনর রশিদ বলেন, কৃষকরা সবাই ধান চাষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এজন্য অন্যান্য চাষে অণুপ্রেরাণিত করতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করতে জিয়াউর নামে এই উদ্যোক্তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি কারিগরি সবধরণের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তবে, চাষের প্রথমে কিছু প্রতিকূলতা দেখা দিয়েছিলো। যেমন-বীজ রোপনের কিছুদিনের মধ্যেই শৈত্যপ্রবাহের কারণে গাছগুলো অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। এরপর বিভিন্ন পরামর্শসহ কারিগরি সহায়তায় ওই বিপন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব হয়েছে। এখন বীজ পুষ্ট হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যাবে। তবে, প্রতমের দিকে বাজারজাতকরণ নিয়ে একটা শঙ্কা থাকলেও বর্তমানে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বাজারজাতকরণের জন্য বিভিন্ন ভোজ্যতেল কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে, যারা প্রতি মণ সূর্যমুখী বীজ সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা দরে কিনবেন। একই সাথে এই বীজ থেকে উৎপাদিত তেলে সয়াবিন অপেক্ষা বেশি স্বাস্থ্যকর। আর এই বীজ গুড়া করে ভর্তাসহ বিভিন্ন খাবারের সাথে আহার করা গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক উপকারী বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
সূর্যের সাথে অদ্ভুত টান রয়েছে এই সূর্যমুখী ফুলের। সকাল থেকে সূর্য যেদিকে যায়, সূর্যমুখী ফুলগুলোও একইভাবে সূর্যের সাথে তাল মিলিয়ে ঘুরে ঘুরে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেন। যা প্রকৃতির একটি অনাড়ম্বর ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি।
বি: দ্র: ভ্রমণপিপাসু মানুষরা যাবেন যেভাবে-গাইবান্ধা জেলার জিরো পয়েন্ট অর্থাৎ পোষ্ট অফিসের সামনে পুরাতন ব্রীজ থেকে অটো/রিক্সাযোগে যেতে হবে দারিয়াপুর। অটোতে ভাড়া-১৫ টাকা। রিক্সাতে-৫০ টাকা। এরপর দারিয়াপুর বাজার থেকে অটো/রিক্সাযোগে যেতে হবে মাঠের বাজারে। অটোতে ভাড়া-০৫ টাকা। রিক্সাতে-২০ টাকা। এরপর বাজারের মাঝ দিয়ে দক্ষিণমুখী রাস্তায় নামলেই হাতের ডানে নজরে আসবে এই অবর্ণনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী সূর্যমুখী ফুল বাগান।
আফসানা আক্তার মিমি, লাইফস্টাইল করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪,নেট 
























