গত ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠ-ঘাট ও আবাদি জমি বৃষ্টির পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ সময় মৎস্যচাষি, জেলেসহ সৌখিন মাছ শিকারীরা অবাধে মাছ শিকার করছেন। এতে ধরা পড়ছে দেশি প্রজাতির নানা রকম পোনা ও ছোট মাছ। অনেকেই এসব মাছ বিক্রি করতে নিয়ে আসছেন হাট-বাজারের মাছ বাজারে। এসব মাছ ক্রয় করতে স্থানীয় বাজারে ভিড় করছেন ক্রেতারা। এভাবে অবাধে ছোট দেশি মাছ শিকার ও বিক্রি করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ।
রবিবার সকালে উপজেলার পাকেরহাটে শাপলা চত্বরের পাশে মাছহাটি ও রাস্তার দুই পাশে দেখা গেছে, দেশি ও ছোট মাছের অনেক দোকান বসেছে। এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে ট্যাঙরা, শিং, মাগুর, কৈ, গোতা, গছি, বাইম, বোয়াল, টাকি, পুঁটি, চোপড়া, শোলসহ বিভিন্ন জাতের দেশি ছোট মাছ। বাজারে এসব দেশি প্রজাতির মাছ ওঠায় ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমতো উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সরবরাহ বেশি থাকায় এখন এসব মাছের দামও হাতের নাগালে। আরও জানা গেছে, মৎস্যচাষি ও জেলে ছাড়াও অনেক সৌখিন মৎস্য শিকারী শখের বসে এসব মাছ শিকার করে হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ট্যাঙরা ৩০০-৪০০ টাকা, কৈ ৫০০-৬০০ টাকা, গোতা-গছি ৬০০-৭০০ টাকা, শোল ৫০০-৭০০ টাকা, টাকি ২৫০-৪০০ টাকা, শিং-মাগুর সাড়ে ৩-৪০০ টাকা এবং পুঁটি-দারকা-চোপড়া মাছ ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার আত্রাই, ইছামতি ও বেলান নদীসহ বিভিন্ন ডারা, খাল-বিল, পুকুর ও আবাদি জমিতে আকাশের বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকেই বাঁশের বেড়া, কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারী জাল, ভোরং, পলাই, ঢাঙগি, দাড়কি, টইয়া, ভিড়ই, বানা, হেঙ্গা ও খোলসুন দিয়ে এসব দেশি প্রজাতির মাছ শিকার করে হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। অনেকেই এসব মাছ বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার ছাতিয়ানগড় গ্রামের মাদার দরগাহ এলাকার দেশি মাছ শিকারী আলমগীর বলেন, বৃষ্টি হলে অনেকেই দোলায় চায়না জাল ও ভোরং দিয়ে এসচ মাছ শিকার করে থাকে। কেউ কোনো কিছু বলে না। তাই আমিও মাছ শিকার ধরছি।
পাকেরহাটে নুর মোহাম্মদ নামে এক ক্রেতা বলেন, সবসময় বাজারে দেশি মাছ পাওয়া যায় না। দামও অনেক বেশি থাকে। কিন্তু বৃষ্টি হলেই বাজারে দেশি মাছ পাওয়া যায়। দামও তুলনামূলক কম থাকে। তাই বাজারে দেশি মাছ কিনতে আসলাম।
মাছ ব্যবসায়ী হৃদয় রায় বলেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির ফলে আড়ৎ ও বাজারে দেশি প্রজাতির ছোট মাছের সরবরাহ অনেক বেশি। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন মাছের বাজার দাম কম। তাই এসব মাছ কিনতে বাজারে মানুষের ভিড় বৃদ্ধি পেয়েছে।
কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, কালের বির্বতনে এখন দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। অবাধে দেশিয় মাছ ও ছোট জাতের মাছসহ ডিমওয়ালা মা মাছ শিকারের কারণে আস্তে আস্তে দেশিয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই দেশিয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্টদের জরুরিভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাম্মী আখতার জাগো২৪.নেটকে বলেন, দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্যচাষি ও জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে সহায়তা দেয়া হয়। তবে জনবল সংকটের কারণে অবাধে দেশি মাছ ও ছোট মাছ শিকার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও সীমিত সামর্থ্য নিয়ে আমরা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি।
© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট