রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছেন গাইবান্ধার কৃষকরা

তোফায়েল হোসেন জাকির: কৃষিনির্ভর গাইবান্ধায় একসময় হালচাষ করে জমির সমতলে আদা চাষ করতেন কৃষকরা। এতে ফলন ও লাভ কম হতো তাদের। এই সমস্যা থেকে বেড় হয়ে এথন স্মার্ট প্রযুক্তিতে বস্তায় শুরু করছেন উচ্চফলনশীল আদা চাষ। এতে অধিক লাভের মুখ দেখায় এ পদ্ধতি আদা চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা।

সম্প্রতি গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের হাসেম বাজার এলাকার কৃষক সাইদুর রহমানসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে বস্তায় আদা চাষের মুগ্ধকর দৃশ্য। বর্তমানে এই ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত আছেন অনেকে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সত্রে জানা গেছে- গত বছর জেলায় ৬৬ হাজার ৭৫টি বস্তায় আদা চাষ হলেও এবার তা বেড়েছে। জেলায় এ বছর ২৪৯টি ব্লকে ৯৭ হাজার ৫৮৮ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৬০০, সাদুল্লাপুরে ১৪ হাজার ৮১৭, পলাশবাড়ীতে ২০ হাজার ২২৫, সুন্দরগঞ্জে ৯ হাজার ৪১৭, সাঘাটায় ১৪ হাজার ৬৮০, ফুলছড়িতে ৫০৯ ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ৩০ হাজার ৩৪০ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন কৃষি ফসলের মধ্যে মসলাজাতীয় অর্থকরী ফসল হলো আদা। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন অনেকে। গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় কৃষকদের মাঝে এই পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। খুব সহজেই বাড়ির আশেপাশ, আঙিনা, ফল বাগান কিংবা গাছের নিচে ছায়াযুক্ত স্থানে চাষ করা যায় বলে কৃষক পর্যায়ে বস্তায় আদা চাষের সম্প্রসারণ ঘটছে।

খোলাহাটির হাসেম বাজার এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান জানান, স্থানীয় বাজার থেকে সারের খালি বস্তা সংগ্রহ করেছেন। একইভাবে ট্রাকভর্তি বেলে দো-আঁশ মাটি কিনেছেন। প্রত্যকটি বস্তায় পরিমাণ মতো জৈব-রাসায়নিক-কম্পোস্ট সার ও দানাদার কীটনাশন ওইসব মাটির সঙ্গে মিশ্রিত করে বস্তাপ্রতি ২-৩টি করে আদা রোপণ করেন।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ফসল চাষের খরচের তুলনায় বস্তায় আদা চাষের খরচ অনেক কম। রোগবালাই, প্রাকৃতিক ঝুঁকি ও পরিচর্যা খরচও কম। আমি বাড়ির উঠানে ৪০০টি বস্তায় আদা চাষ করেছি। এ থেকে লাভবান হওয়ার আশা করছি।

স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে বস্তা পদ্ধতি আদা চাষ করে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বলে জানালেন- শাহারুল প্রামাণিক নামের এক কৃষক। তিনি বলেন এ অঞ্চলে প্রত্যেক কৃষকের বাড়িতে পরিত্যাক্ত জায়গায় রয়েছে। তারা যেন এইভাবে আদা চাষবাদ করেন, সেবিষয়ে সবাইকে উৎসাহ করছি।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, বস্তা পদ্ধতি আদা চাষে খরচ কম হয়। একইসঙ্গে পতিত জমির সর্বোত্তম ব্যবহারও বাড়ছে। বাড়ির আশপাশ, আঙিনা ও বিভিন্ন বাগানে গাছের নিচে ছায়াযুক্ত পতিত জমিতেও বস্তায় আদা চাষ করে অনায়াসে লাভবান হওয়া সম্ভব। এসব কৃষকদে আরও লাভবান করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

 

জনপ্রিয়

বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছেন গাইবান্ধার কৃষকরা

প্রকাশের সময়: ১২:২৩:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

তোফায়েল হোসেন জাকির: কৃষিনির্ভর গাইবান্ধায় একসময় হালচাষ করে জমির সমতলে আদা চাষ করতেন কৃষকরা। এতে ফলন ও লাভ কম হতো তাদের। এই সমস্যা থেকে বেড় হয়ে এথন স্মার্ট প্রযুক্তিতে বস্তায় শুরু করছেন উচ্চফলনশীল আদা চাষ। এতে অধিক লাভের মুখ দেখায় এ পদ্ধতি আদা চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা।

সম্প্রতি গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের হাসেম বাজার এলাকার কৃষক সাইদুর রহমানসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে বস্তায় আদা চাষের মুগ্ধকর দৃশ্য। বর্তমানে এই ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত আছেন অনেকে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সত্রে জানা গেছে- গত বছর জেলায় ৬৬ হাজার ৭৫টি বস্তায় আদা চাষ হলেও এবার তা বেড়েছে। জেলায় এ বছর ২৪৯টি ব্লকে ৯৭ হাজার ৫৮৮ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৬০০, সাদুল্লাপুরে ১৪ হাজার ৮১৭, পলাশবাড়ীতে ২০ হাজার ২২৫, সুন্দরগঞ্জে ৯ হাজার ৪১৭, সাঘাটায় ১৪ হাজার ৬৮০, ফুলছড়িতে ৫০৯ ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ৩০ হাজার ৩৪০ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন কৃষি ফসলের মধ্যে মসলাজাতীয় অর্থকরী ফসল হলো আদা। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন অনেকে। গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় কৃষকদের মাঝে এই পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। খুব সহজেই বাড়ির আশেপাশ, আঙিনা, ফল বাগান কিংবা গাছের নিচে ছায়াযুক্ত স্থানে চাষ করা যায় বলে কৃষক পর্যায়ে বস্তায় আদা চাষের সম্প্রসারণ ঘটছে।

খোলাহাটির হাসেম বাজার এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান জানান, স্থানীয় বাজার থেকে সারের খালি বস্তা সংগ্রহ করেছেন। একইভাবে ট্রাকভর্তি বেলে দো-আঁশ মাটি কিনেছেন। প্রত্যকটি বস্তায় পরিমাণ মতো জৈব-রাসায়নিক-কম্পোস্ট সার ও দানাদার কীটনাশন ওইসব মাটির সঙ্গে মিশ্রিত করে বস্তাপ্রতি ২-৩টি করে আদা রোপণ করেন।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ফসল চাষের খরচের তুলনায় বস্তায় আদা চাষের খরচ অনেক কম। রোগবালাই, প্রাকৃতিক ঝুঁকি ও পরিচর্যা খরচও কম। আমি বাড়ির উঠানে ৪০০টি বস্তায় আদা চাষ করেছি। এ থেকে লাভবান হওয়ার আশা করছি।

স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে বস্তা পদ্ধতি আদা চাষ করে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বলে জানালেন- শাহারুল প্রামাণিক নামের এক কৃষক। তিনি বলেন এ অঞ্চলে প্রত্যেক কৃষকের বাড়িতে পরিত্যাক্ত জায়গায় রয়েছে। তারা যেন এইভাবে আদা চাষবাদ করেন, সেবিষয়ে সবাইকে উৎসাহ করছি।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, বস্তা পদ্ধতি আদা চাষে খরচ কম হয়। একইসঙ্গে পতিত জমির সর্বোত্তম ব্যবহারও বাড়ছে। বাড়ির আশপাশ, আঙিনা ও বিভিন্ন বাগানে গাছের নিচে ছায়াযুক্ত পতিত জমিতেও বস্তায় আদা চাষ করে অনায়াসে লাভবান হওয়া সম্ভব। এসব কৃষকদে আরও লাভবান করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।