রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ভুট্টার সাম্রাজ্য 

মো. রফিকুল ইসলাম: অল্প খরচ আর অধিক ফলন ও লাভ বেশি হওয়ায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে বেশি পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। প্রতি বছর ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন নতুন নতুন চাষিরা। এখন বিস্তীর্ণ মাঠে দৃষ্টি পড়লেই চোখে পড়বে ভুট্টার সাম্রাজ্য। জমিতে ফলন ভালো দেখে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখেও। কৃষকরা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ কম, ঝুঁকিহীন,  লাভজনক, স্বল্প পরিশ্রমে বেশি ফসল, অল্প সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা রয়েছে। সে কারণে দিনদিন ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। এছাড়াও গবাদি পশুর খাদ্য তৈরিতে ভুট্টার ব্যবহার বেশি হওয়ায় সারা বছর এর চাহিদাও থাকে।
সরজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। ভুট্টার সবুজ ক্ষেত বাতাসে দোল খাচ্ছে। দিগন্ত জুড়ে ব্যাপক ভুট্টা চাষ হয়েছে।  অধিক ফলনের আশায় এখন স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে ১নং নশরতপুর, ১১নং তেঁতুলিয়া ও ৬নং অমরপুর ইউনিয়নে। বর্তমানে জমি থেকে ভুট্টা সংগ্রহের জন্য প্রহর গুনছেন উপজেলার চাষিরা। সবুজ পাতার আড়ালে উঁকি দিচ্ছে ভুট্টার কাদি। কিছুদিনের মধ্যেই পরিপুষ্ট দানায় পরিণত হবে ভুট্টা। কোথাও আগাম জাতের ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ  চলছে। আবার কোথাও বিলম্বে বীজ রোপণ করায় ভুট্টা ক্ষেতে সেচ ও পরিচর্চা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমি। কিন্তু ভুট্টার আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। প্রতি বছরই ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলার দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের কৃষক ফজলে রাব্বী বলেন, এবছর আমি ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। হালচাষ, সেচ, সার, বীজ, নিড়ানী, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরিসহ প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয়েছে অন্তত ২০-২৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত ভুট্টা কমপক্ষে ৬০-৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। একই গ্রামের শমসের আলী বলেন, ভুট্টা আবাদের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে মরিচসহ শাক-সবজি চাষ করে বাড়তি লাভ পাওয়া যায়। ভুট্টা শুধু মানব খাদ্য হিসেবেই নয়, গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ভুট্টা গাছের পাতা গবাদি পশুর খাদ্য ও গাছ রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উপজেলার অমরপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার নির্মল রায় বলেন, এ বছর আমি ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আশা করছি আশানুরুপ ফলন পাব। তিনি আরও বলেন, ভুট্টা চাষে কিছু সমস্যাও আছে তা হলো মাড়াই ও বাজারজাতকরণ। তবে বর্তমানে ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র এসেছে। এতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ভুট্টা সহজেই মাড়াই করে বাজারজাত করতে পারছেন। এতে কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, গত বছর উপজেলায় আশানুরুপ ভুট্টার ফলন হয়েছিল। তাই গত বছরের তুলনায় এ বছর ভুট্টার আবাদ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এবছরও ভুট্টার ফলন ভালো পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার্ সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যাতে কৃষক সর্বোচ্চ ফলন পেয়ে লাভবান হতে পারে। লাভজনক হওয়ায় দিনদিন ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে খাদ্য নিরাপত্তা যাতে ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য ধানের আবাদ এরিয়া যাতে হ্রাস না পায় সে বিষয়েও আমরা কাজ করছি।
জনপ্রিয়

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ভুট্টার সাম্রাজ্য 

প্রকাশের সময়: ০২:২৪:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
মো. রফিকুল ইসলাম: অল্প খরচ আর অধিক ফলন ও লাভ বেশি হওয়ায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে বেশি পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। প্রতি বছর ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন নতুন নতুন চাষিরা। এখন বিস্তীর্ণ মাঠে দৃষ্টি পড়লেই চোখে পড়বে ভুট্টার সাম্রাজ্য। জমিতে ফলন ভালো দেখে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখেও। কৃষকরা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ কম, ঝুঁকিহীন,  লাভজনক, স্বল্প পরিশ্রমে বেশি ফসল, অল্প সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা রয়েছে। সে কারণে দিনদিন ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। এছাড়াও গবাদি পশুর খাদ্য তৈরিতে ভুট্টার ব্যবহার বেশি হওয়ায় সারা বছর এর চাহিদাও থাকে।
সরজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। ভুট্টার সবুজ ক্ষেত বাতাসে দোল খাচ্ছে। দিগন্ত জুড়ে ব্যাপক ভুট্টা চাষ হয়েছে।  অধিক ফলনের আশায় এখন স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে ১নং নশরতপুর, ১১নং তেঁতুলিয়া ও ৬নং অমরপুর ইউনিয়নে। বর্তমানে জমি থেকে ভুট্টা সংগ্রহের জন্য প্রহর গুনছেন উপজেলার চাষিরা। সবুজ পাতার আড়ালে উঁকি দিচ্ছে ভুট্টার কাদি। কিছুদিনের মধ্যেই পরিপুষ্ট দানায় পরিণত হবে ভুট্টা। কোথাও আগাম জাতের ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ  চলছে। আবার কোথাও বিলম্বে বীজ রোপণ করায় ভুট্টা ক্ষেতে সেচ ও পরিচর্চা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমি। কিন্তু ভুট্টার আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। প্রতি বছরই ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলার দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের কৃষক ফজলে রাব্বী বলেন, এবছর আমি ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। হালচাষ, সেচ, সার, বীজ, নিড়ানী, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরিসহ প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয়েছে অন্তত ২০-২৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত ভুট্টা কমপক্ষে ৬০-৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। একই গ্রামের শমসের আলী বলেন, ভুট্টা আবাদের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে মরিচসহ শাক-সবজি চাষ করে বাড়তি লাভ পাওয়া যায়। ভুট্টা শুধু মানব খাদ্য হিসেবেই নয়, গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ভুট্টা গাছের পাতা গবাদি পশুর খাদ্য ও গাছ রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উপজেলার অমরপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার নির্মল রায় বলেন, এ বছর আমি ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আশা করছি আশানুরুপ ফলন পাব। তিনি আরও বলেন, ভুট্টা চাষে কিছু সমস্যাও আছে তা হলো মাড়াই ও বাজারজাতকরণ। তবে বর্তমানে ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র এসেছে। এতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ভুট্টা সহজেই মাড়াই করে বাজারজাত করতে পারছেন। এতে কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, গত বছর উপজেলায় আশানুরুপ ভুট্টার ফলন হয়েছিল। তাই গত বছরের তুলনায় এ বছর ভুট্টার আবাদ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এবছরও ভুট্টার ফলন ভালো পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার্ সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যাতে কৃষক সর্বোচ্চ ফলন পেয়ে লাভবান হতে পারে। লাভজনক হওয়ায় দিনদিন ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে খাদ্য নিরাপত্তা যাতে ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য ধানের আবাদ এরিয়া যাতে হ্রাস না পায় সে বিষয়েও আমরা কাজ করছি।