শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিকতা পেশার অপমৃত্যু

সাংবাদিকতা ছিল একটি মহান পেশা। দুই হাজার সালের কিছু আগে এ পেশায় শকুনের চোখ পড়ে। তখন থেকেই নতুন নতুন পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে সাংবাদিকতা নিজের পেশাদারিত্ব হারায়। সাংবাদিকতা হয়ে উঠে দেশের শিল্পপতিদের শিল্পপাহার মাধ্যম। চাহিদা বাড়তে থাকে সাংবাদিকদের। দুই হাজার টাকার সাংবাদিকের বেতন এক লাফে উঠে যায় বিশ হাজারে। যার হোন্ডা কেনার সামর্থ্য ছিল না, তিনিও পেয়ে যান একটি গাড়ি। শুরু হয় উচ্চাভিলাসের প্রতিযোগিতা। যারা একটু ভালো সাংবাদিকতা জানেন তারা ধীরে ধীরে ভিড়তে শুরু করেন দেশের শিল্পপতিদের আস্তানায়। তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়, পত্রিকা বের করে অমুক শিল্প গ্রুপ ফর্মে আছে।

আপনার শিল্প প্রতিষ্ঠান অনেক। নিজেদের বিজ্ঞাপনেই অনায়াসে বের করতে পারেন একটি চমৎকার পত্রিকা। পত্রিকা চলবে বিজ্ঞাপনের টাকায়   আর আপনারব্যবসা চলবে পত্রিকার প্রভাবে। সাথে বোনাস হিসাবে দেশের রাজনীতিবিদকে রাখবেন আপনার হাতের কব্জায়। ব্যবস্থা করবো আমরা। ক্ষমতায় যে দলই আসুক, আপনার ব্যবসা চলবে নিরাপদে। পরামর্শটা লুফে নেয় ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা। একের পর এক শিল্প গ্রুপের পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। কোন শিল্প গ্রুপ কোন সাংবাদিককে কত টাকায় বুকিং দিবে তা নিয়েও শুরু হয় অসম প্রতিযোগিতা। এতে সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান সুসংহত হয় বটে। শিল্প হিসেবেও উত্তরণ ঘটে সংবাদপত্রের। গেটাপ-মেকাপে আসে চমৎকারিত্ব। পাঠক পায় নতুনত্ব প্রতিটি পত্রিকার পাতায় পাতায়। কিন্তু এরই মধ্যে সবকিছুতে পরিপূর্ণ এক একটি দৈনিক পত্রিকার ভীরে হারিয়ে যেতে থাকে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও সাময়িকীগুলো।

যারা এই ছোট পত্রিকাগুলোর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তারাও ধীরে ধীরে কর্মহীন হয়ে বিলুপ্ত হতে থাকেন। কারণ এতোদিনে বড় বড় শিল্প গ্রুপের দৈনিক পত্রিকাগুলোর চাপে এসব ছোট ছোট কাগজ পাঠক চাহিদা হারায়। সেই সাথে সবচেয়ে ভয়ংকরভাবে সাংবাদিকদের হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের মূল পেশা স্বাধীন সাংবাদিকতা। নিজেদের অজান্তেই অনেক বড় বড় সাংবাদিক হয়ে উঠেন ফরমায়েশি সাংবাদিক। অর্থের বিনিময়ে নামীদামী সাংবাদিকরা হয়ে যান সাংবাদিকতার নামে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাহারাদার। আগে শিল্পপতিদের জায়গা জমি দখল, কোন পদ দখলে পাড়ামহল্লার মাস্তানরা যে কাজটি করতের মারামারি কাটাকাটি করে, তা এখন সাংবাদিকরা করে দিচ্ছেন কলমের খোঁচায়।

এতে শিল্পমালিকদের কাছে পাড়া মহল্লার মাস্তানরাও কদর হারায়। নতুনভাবে জায়গা করে নেয় প্রভাবশালী সাংবাদিকরা। তারাই এখন সম্পাদকসহ শিল্প মালিকদের জায়গা সম্পত্তি পাহারা দেন, প্রয়োজনে রাত জেগে আনন্দের সাথে। এভাবেই সাংবাদিকরা নিজেদের বিবেক বিবেচনা শিল্প মালিকদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে পুতুল সাংবাদিকে করিত হয় এক প্রকার নিজেদের অজান্তেই। মালিকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় সঙ্গত সংবাদ প্রকাশ তো দূরের কথা, মালিকের কথায় অন্যায় সংবাদ প্রকাশেও তারা বাধ্য হয় প্রতিমুহূর্তে। এভাবেই একজন সুস্থ সক্ষম দূরদর্শী সাংবাদিক হয়ে উঠেছেন মেরুদণ্ডহীন এক একটি পুতুল সাংবাদিকে। আজকের বাস্তবতায় আমরা সেই পুতুল সাংবাদিকতা-ই দেখতে পাচ্ছি প্রতিমূহুর্তে। এক সময় যে সংবাদপত্রের প্রভাবে খুকু মনিরের ফাঁসি হয়েছিল, সেই সংবাদপত্র আর সাংবাদিকতা বর্তমানে ফিরে আসা একটি অলিক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সুত্র: জাগো প্রতিদিন

সাংবাদিকতা পেশার অপমৃত্যু

প্রকাশের সময়: ১২:১০:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২১

সাংবাদিকতা ছিল একটি মহান পেশা। দুই হাজার সালের কিছু আগে এ পেশায় শকুনের চোখ পড়ে। তখন থেকেই নতুন নতুন পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে সাংবাদিকতা নিজের পেশাদারিত্ব হারায়। সাংবাদিকতা হয়ে উঠে দেশের শিল্পপতিদের শিল্পপাহার মাধ্যম। চাহিদা বাড়তে থাকে সাংবাদিকদের। দুই হাজার টাকার সাংবাদিকের বেতন এক লাফে উঠে যায় বিশ হাজারে। যার হোন্ডা কেনার সামর্থ্য ছিল না, তিনিও পেয়ে যান একটি গাড়ি। শুরু হয় উচ্চাভিলাসের প্রতিযোগিতা। যারা একটু ভালো সাংবাদিকতা জানেন তারা ধীরে ধীরে ভিড়তে শুরু করেন দেশের শিল্পপতিদের আস্তানায়। তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়, পত্রিকা বের করে অমুক শিল্প গ্রুপ ফর্মে আছে।

আপনার শিল্প প্রতিষ্ঠান অনেক। নিজেদের বিজ্ঞাপনেই অনায়াসে বের করতে পারেন একটি চমৎকার পত্রিকা। পত্রিকা চলবে বিজ্ঞাপনের টাকায়   আর আপনারব্যবসা চলবে পত্রিকার প্রভাবে। সাথে বোনাস হিসাবে দেশের রাজনীতিবিদকে রাখবেন আপনার হাতের কব্জায়। ব্যবস্থা করবো আমরা। ক্ষমতায় যে দলই আসুক, আপনার ব্যবসা চলবে নিরাপদে। পরামর্শটা লুফে নেয় ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা। একের পর এক শিল্প গ্রুপের পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। কোন শিল্প গ্রুপ কোন সাংবাদিককে কত টাকায় বুকিং দিবে তা নিয়েও শুরু হয় অসম প্রতিযোগিতা। এতে সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান সুসংহত হয় বটে। শিল্প হিসেবেও উত্তরণ ঘটে সংবাদপত্রের। গেটাপ-মেকাপে আসে চমৎকারিত্ব। পাঠক পায় নতুনত্ব প্রতিটি পত্রিকার পাতায় পাতায়। কিন্তু এরই মধ্যে সবকিছুতে পরিপূর্ণ এক একটি দৈনিক পত্রিকার ভীরে হারিয়ে যেতে থাকে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও সাময়িকীগুলো।

যারা এই ছোট পত্রিকাগুলোর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তারাও ধীরে ধীরে কর্মহীন হয়ে বিলুপ্ত হতে থাকেন। কারণ এতোদিনে বড় বড় শিল্প গ্রুপের দৈনিক পত্রিকাগুলোর চাপে এসব ছোট ছোট কাগজ পাঠক চাহিদা হারায়। সেই সাথে সবচেয়ে ভয়ংকরভাবে সাংবাদিকদের হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের মূল পেশা স্বাধীন সাংবাদিকতা। নিজেদের অজান্তেই অনেক বড় বড় সাংবাদিক হয়ে উঠেন ফরমায়েশি সাংবাদিক। অর্থের বিনিময়ে নামীদামী সাংবাদিকরা হয়ে যান সাংবাদিকতার নামে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাহারাদার। আগে শিল্পপতিদের জায়গা জমি দখল, কোন পদ দখলে পাড়ামহল্লার মাস্তানরা যে কাজটি করতের মারামারি কাটাকাটি করে, তা এখন সাংবাদিকরা করে দিচ্ছেন কলমের খোঁচায়।

এতে শিল্পমালিকদের কাছে পাড়া মহল্লার মাস্তানরাও কদর হারায়। নতুনভাবে জায়গা করে নেয় প্রভাবশালী সাংবাদিকরা। তারাই এখন সম্পাদকসহ শিল্প মালিকদের জায়গা সম্পত্তি পাহারা দেন, প্রয়োজনে রাত জেগে আনন্দের সাথে। এভাবেই সাংবাদিকরা নিজেদের বিবেক বিবেচনা শিল্প মালিকদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে পুতুল সাংবাদিকে করিত হয় এক প্রকার নিজেদের অজান্তেই। মালিকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় সঙ্গত সংবাদ প্রকাশ তো দূরের কথা, মালিকের কথায় অন্যায় সংবাদ প্রকাশেও তারা বাধ্য হয় প্রতিমুহূর্তে। এভাবেই একজন সুস্থ সক্ষম দূরদর্শী সাংবাদিক হয়ে উঠেছেন মেরুদণ্ডহীন এক একটি পুতুল সাংবাদিকে। আজকের বাস্তবতায় আমরা সেই পুতুল সাংবাদিকতা-ই দেখতে পাচ্ছি প্রতিমূহুর্তে। এক সময় যে সংবাদপত্রের প্রভাবে খুকু মনিরের ফাঁসি হয়েছিল, সেই সংবাদপত্র আর সাংবাদিকতা বর্তমানে ফিরে আসা একটি অলিক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সুত্র: জাগো প্রতিদিন