নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একাধিকবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের ইতিহাস আছে বাংলাদেশের। নেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্মৃতি। এবার সে আক্ষেপও ঘচলো লাল সবুজ দলের। ইতিহাস গড়েই সফরকারি কিউইদের বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে সিরিজ জিতে নিল টাইগাররা। তাও আবার এক ম্যাচ হাতে রেখেই।
আগে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকদের সামনে ৯৪ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। জবাবে তুলনামুলক সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৫ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয় টাইগাররা।
শুরুটা মোটেও ভাল করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। দলীয় মাত্র ৮ রানেই ওপেনার লিটন দাসের (৬) উইকেট হারায় তারা। এরপর সাকিব আর নাঈম দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ৬ষ্ঠ ওভারে আজাজ প্যাটেলের বলে সাকিব (৮) স্টাম্পড হলে ফের ছন্দপতন। ওভারের শেষ বলে মুশফিক (০) বোল্ড হয়ে গেলে চাপে পড়ে যায় টাইগাররা।
সতীর্থদের আসা যাওয়ার মাঝে একপ্রান্ত ধরে রেখে দলকে লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ নাঈম। তাকে দারুন সঙ্গ দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ১৫তম ওভারের তৃতীয় বলে রানআউটে কাটা পড়ে বিদায় নেন নাঈম। তার আগে ৩৫ বলে এক চার আর এক ছক্কায় ২৯ রানের দারুন এক ইনিংস খেলেন এই ওপেনার।
এরপর আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি মাহমুদউল্লাহ। আফিফ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন এই টাইগার অধিনায়ক। একইসঙ্গে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসান দেশকে। মাহমুদউল্লাহ ৪৮ বলে এক চার আর দুই ছক্কায় ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। অপর প্রান্তে ৬ রান করেন আফিফ হোসেন। এই জয়ে সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম। এ দিন আগের দুই ম্যাচের মতো শেখ মেহেদীকে দিয়ে বল না করিয়ে নাসুম আহমেদকে দিয়ে ইনিংস শুরু করেন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাতেই বাজিমাত।
ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে রানের খাতা খোলার আগেই ওপেনার রচিন রবীন্দ্রকে সাজঘরে পাঠান নাসুম আহমেদ। দ্বিতীয় ওভারে সাকিব আল হাসান বোলিংয়ে আসেন। তবে উইকেটের দেখা পাননি তিনি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আবারও বল হাতে তুলে নেন নাসুম। এবার আরেক ওপেনার ফিন অ্যালানকে শিকার করেন তিনি। বিদায়ের আগে ৮ বলে ১২ রান করেন এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যান।
দুই ওপেনারের উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ডকে চাপ থেকে বের করতে একটু চড়াও হয়ে খেলার চেষ্টা করেন টম ল্যাথাম উইল ইয়াং। তবে তাদের বড় জুটি গড়তে দেননি মেহেদী হাসান। ১১তম ওভারে এই স্পিনারকে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন টম ল্যাথাম। সাজঘরে ফেরার আগে ২৬ বলে ২১ রান করেন কিউই অধিনায়ক।
এরপর আবারও আঘাত হানেন নাসুম আহমেদ। ১২তম ওভারে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। পরপর দুই বলে নিকোলস ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে আউট করেন নাসুম।
নাজমুল ইসলাম অপুর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে ২ মেডেন নিয়ে ১০ রানে ৪ উইকেট নিলেন নাসুম। এর চেয়ে কম রান দিয়ে ৪ উইকেট পেয়েছেন শুধু সাকিব আল হাসান।
৭২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা নিউজিল্যান্ডকে আরও চাপে ফেলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার বলে নাঈমের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেন টম ব্লান্ডেল। ওভারের শেষ বলে আরেকটি উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজ। এবার কোল ম্যাককনকিকে বিদায় করেন তিনি।
তবে বিপদের মাঝেও একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট চালিয়ে যান উইল ইয়াং। ৪৮ বলে ৪৬ রান করে শেষ ওভারে মোস্তাফিজের শিকার হন তিনি। পরের বলে কিউইদের কফিনে শেষ পেরেক মারেন ফিজ। ৯৩ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।
এ দিনও অপেক্ষা বাড়ল সাকিব আল হাসানের। আর ২টি উইকেট পেলেই বিশ্বরেকর্ড গড়বেন তিনি। কিন্তু ৪ ওভার বল করে ২৫ রান দিয়ে কোনো ইকেট পাননি এই অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশের নাসুম আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে সর্বনিম্ন রানের লজ্জার রেকর্ড উপহার দিয়ে জিতেছে বাংলাদেশ। সফরকারীদের করা ৬০ রানের জবাবে ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয় স্বাগতিকেরা। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে ৪ রানে হারায় লাল-সবুজ দল। ফলে টানা দুই জয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় সাকিব-মুশফিকরা। তৃতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড।
চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ দল। তবে নিউজিল্যান্ড একাদশে দুটি পরিবর্তন করে। জ্যাকব ডাফি এবং স্কট কুগেলিনের জায়গায় খেলেছেন হামিশ বেনেট ও ব্লেয়ার টিকনার।
ক্রীড়া ডেস্ক, জাগো২৪.নেট 

























