শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খড়ির সন্ধানে বালুচরে তারা

তোফায়েল হোসেন জাকিরঃ ছিন্নমূল পরিবারের বধূ  ফাতেমা, জমিলা, ও ইসমেতারা। ঘরে কিছুটা চাল-ডাল থাকলেও জ্বালানি খড়ির (লাকড়ি) অভাব যেন তাদের নিত্যসঙ্গী। তাই প্রত্যেকদিন দুপুর হলেই ছুটেতে থাকেন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে। ধূ-ধূ বালুচরে মাইলের পর মাইল হেঁটেই ছুটেন খড়ির সন্ধানে। সেখানে বিকেলে পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয় হরেক রকম খড়ি। নদের ওপার থেকে এসব খড়ির বোঝা মাথায় নিয়ে ফিরে আসে এপারের নীড়ে।

সম্প্রতি গাইবান্ধার ব্রহ্মপত্র নদের রসুলপুরের চরসহ বিভিন্ন চরে দেখা যায় ওইসব গৃহবধূদের খড়ি সংগ্রহের দৃশ্য। শুধু জমিলা আর ফাতেমা নয়, নিম্নআয়ের আরও অনেক গৃহবধূ নদের এপার থেকে ওপারের চরাঞ্চলে দলবেঁধে ছুটতে থাকেন খড়ির সন্ধানে।

জানা যায়, নদী বিধৌত জেলা গাইবান্ধা। এ জেলার বুক চিড়ে বয়ে গেছে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র-যমনাসহ আরও বেশ কিছু নদ-নদী। এসব নদীগুলোর বুকে জেগে উঠেছে শতাধিক বালুচর। বর্ষা পেরিয়ে এখন শুকনো মৌসুম। তাই পানি শুকিয়ে  চারিদিকে নজর কারছে ধূ-ধূ বালুচর। এসব চরে আবাদ করা হয়েছে ভূট্রা, মরিচ, বাদাম, বেগুনসহ নানা জাতের রবিশস্য। এসব শস্য থেকে ফসল নেয়ার পর শস্যের গাছগুলো জ্বালানি খড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ঘড়ির চাহিপুরণ করে অধিকাংশ খড়ি ফেলে দেন কৃষকরা। আর নদের এপারের স্বল্প আয়ের পরিবারে খড়ির সংকট থাকায় প্রতিনিয়ত মধ্যবয়সী গৃহবধূরা দলবেঁধে ছটে চলেন নদের ওপারে। এভাবে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চরের এদিক-সেদিক খড়ি সংগ্রহ করার পর তা মাথায় নিয়ে হেঁটে ফিরেন বাড়িতে। এসব খড়ি চুলায় জ্বালিয়ে রান্নার কাজ সাড়েন তারা।

ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী এপারের কঞ্চিপাড়া এলাকার ছিন্নমূল পরিবারের বধূ মোছা. ইসমেতারা বেগম (৪৫) জাগো২৪.নেট-কে জানান, তার স্বামী নজরুল ইসলাম একজন দিনমজুর। দিন আনে দিন খেতে হয়। এভাবে সারাদিনের পারিশ্রমিক দিয়ে চাল-সবজি কেনা গেলেও খড়ি কেনার সামর্থ নেই তারা। তাই প্রতিদিন ১০ কিলোমিটার হেঁটে ব্রহ্মপুত্রের ওপার থেকে খড়ি সংগ্রহ করা হয়।

রসুলপুর চরের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন জাগো২৪.নেট-কে জানান, চলতি রবি মৌসুমে চরের জমিতে ভূট্রা-বেগুন ও মরিচসহ আরও বেশ কিছু ফসল উৎপাদন করেছেন তিনি। এসব ফসলের গাছগুলো জ্বালানি খড়ি হিসেবে ব্যবহার উপযোগি। নিজের চাহিদা পুরণ করে অবশিষ্ঠ খড়িগুলো ফেলে দেন। আর এসব পরিত্যাক্ত খড়ি নদের ওপারের নারীরা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় বাড়িতে।

 

খড়ির সন্ধানে বালুচরে তারা

প্রকাশের সময়: ০৬:৫২:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

তোফায়েল হোসেন জাকিরঃ ছিন্নমূল পরিবারের বধূ  ফাতেমা, জমিলা, ও ইসমেতারা। ঘরে কিছুটা চাল-ডাল থাকলেও জ্বালানি খড়ির (লাকড়ি) অভাব যেন তাদের নিত্যসঙ্গী। তাই প্রত্যেকদিন দুপুর হলেই ছুটেতে থাকেন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে। ধূ-ধূ বালুচরে মাইলের পর মাইল হেঁটেই ছুটেন খড়ির সন্ধানে। সেখানে বিকেলে পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয় হরেক রকম খড়ি। নদের ওপার থেকে এসব খড়ির বোঝা মাথায় নিয়ে ফিরে আসে এপারের নীড়ে।

সম্প্রতি গাইবান্ধার ব্রহ্মপত্র নদের রসুলপুরের চরসহ বিভিন্ন চরে দেখা যায় ওইসব গৃহবধূদের খড়ি সংগ্রহের দৃশ্য। শুধু জমিলা আর ফাতেমা নয়, নিম্নআয়ের আরও অনেক গৃহবধূ নদের এপার থেকে ওপারের চরাঞ্চলে দলবেঁধে ছুটতে থাকেন খড়ির সন্ধানে।

জানা যায়, নদী বিধৌত জেলা গাইবান্ধা। এ জেলার বুক চিড়ে বয়ে গেছে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র-যমনাসহ আরও বেশ কিছু নদ-নদী। এসব নদীগুলোর বুকে জেগে উঠেছে শতাধিক বালুচর। বর্ষা পেরিয়ে এখন শুকনো মৌসুম। তাই পানি শুকিয়ে  চারিদিকে নজর কারছে ধূ-ধূ বালুচর। এসব চরে আবাদ করা হয়েছে ভূট্রা, মরিচ, বাদাম, বেগুনসহ নানা জাতের রবিশস্য। এসব শস্য থেকে ফসল নেয়ার পর শস্যের গাছগুলো জ্বালানি খড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ঘড়ির চাহিপুরণ করে অধিকাংশ খড়ি ফেলে দেন কৃষকরা। আর নদের এপারের স্বল্প আয়ের পরিবারে খড়ির সংকট থাকায় প্রতিনিয়ত মধ্যবয়সী গৃহবধূরা দলবেঁধে ছটে চলেন নদের ওপারে। এভাবে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চরের এদিক-সেদিক খড়ি সংগ্রহ করার পর তা মাথায় নিয়ে হেঁটে ফিরেন বাড়িতে। এসব খড়ি চুলায় জ্বালিয়ে রান্নার কাজ সাড়েন তারা।

ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী এপারের কঞ্চিপাড়া এলাকার ছিন্নমূল পরিবারের বধূ মোছা. ইসমেতারা বেগম (৪৫) জাগো২৪.নেট-কে জানান, তার স্বামী নজরুল ইসলাম একজন দিনমজুর। দিন আনে দিন খেতে হয়। এভাবে সারাদিনের পারিশ্রমিক দিয়ে চাল-সবজি কেনা গেলেও খড়ি কেনার সামর্থ নেই তারা। তাই প্রতিদিন ১০ কিলোমিটার হেঁটে ব্রহ্মপুত্রের ওপার থেকে খড়ি সংগ্রহ করা হয়।

রসুলপুর চরের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন জাগো২৪.নেট-কে জানান, চলতি রবি মৌসুমে চরের জমিতে ভূট্রা-বেগুন ও মরিচসহ আরও বেশ কিছু ফসল উৎপাদন করেছেন তিনি। এসব ফসলের গাছগুলো জ্বালানি খড়ি হিসেবে ব্যবহার উপযোগি। নিজের চাহিদা পুরণ করে অবশিষ্ঠ খড়িগুলো ফেলে দেন। আর এসব পরিত্যাক্ত খড়ি নদের ওপারের নারীরা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় বাড়িতে।