শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেতুর স্থানে সাঁকো  

সেতুর নির্মাণ কাজ দীর্ঘ ৪ বছরেও সমাপ্ত না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। জনভোগান্তি লাঘবে সেতুর স্থানে কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের ইছামতি নদীর ওপর সাঁকোর পাড় নামকস্থানে বিগত ২০১৮ সালে একটি সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বর্তমান অর্থ মন্ত্রাণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এম পি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সেতু নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছিল।

গত ২০২১ সালের জুন মাসে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার কথা ছিল। কিন্তু অদ্যাবধি সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। ঠিকাদারের অবহেলায় দীর্ঘ সময়েও সেতুর কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে সেতুর স্থলে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেছেন গোয়ালডিহি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের শুরুতে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণ কাজ শুরু করেন স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এম এহতেশামুল হক। পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৬ টাকা। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে। কিন্তু গত ৪ বছরে কেবল সেতুর পাইলিং ছাড়া আর কোনো কাজই করা হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর দুই পাশে গোয়ালডিহি, নলবাড়ী, দুবুলিয়া, পূর্ব হাসিমপুর, পশ্চিম হাসিমপুর গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এই রাস্তা ব্যবহার করেন উত্তরা ইপিজেডকর্মী, তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা সেবাগ্রহীতারা। প্রতিনিয়ত অন্তত ৫-৭ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন এ পথদিয়েই। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে খানসামা, চিরিরবন্দরসহ নীলফামারী বাজারে যান এ রাস্তা দিয়েই। বর্ষার সময় অসুস্থ, গর্ভবতী ও স্কুলপড়ুয়া শিশুদের স্কুলে যাতায়াতসহ সবার ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়।

গোয়ালডিহি গ্রামের জুবায়ের হোসেন বলেন, গত ৪ বছরেও সেতুর পাইলিং করা ছাড়া নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এতদিন ধরে ভোগান্তি হলো বাজেট বরাদ্দ নেই দেখে। বাজেট যখন এল, তখন ঠিকাদারের অবহেলা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা এলাকার লোকজন। সামনে বর্ষা শুরু হচ্ছে। তবুও ভালো যে চেয়ারম্যান একটা সাঁকো বানিয়ে দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থাটা করে দিলেন। সাঁকোটি নির্মাণ করায় আমাদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমেছে।

গোয়ালডিহি ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন লিটন বলেন, ‘সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় এলাকার লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত এলাকার মানুষের অভিযোগ শুনতে হয়। পরে টিআর প্রকল্পের আওতায় অন্তত আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে ২৭৫ ফুট লম্ব^া কাঠের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন। তবে সেতুটির কাজ যেন তরান্বিত হয়, এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনিও দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ রাখছেন।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয়ের উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জাগো২৪.নেট-কে জানান, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলে কালক্ষেপণ করছেন। তিনি বলেন, এতদিনে শুধু পাইলিংয়ের কাজ শেষ করেছেন। এ জন্য ৩০ শতাংশ টাকাও উত্তোলন করেছেন। সেতুর কাজ দ্রæত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অন্যথায় তাঁর কার্যাদেশ বাতিল করার কথাও জানানো হয়েছে। তবে বর্ষার পর পরই সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

জনপ্রিয়

সেতুর স্থানে সাঁকো  

প্রকাশের সময়: ১০:১৬:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২

সেতুর নির্মাণ কাজ দীর্ঘ ৪ বছরেও সমাপ্ত না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। জনভোগান্তি লাঘবে সেতুর স্থানে কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের ইছামতি নদীর ওপর সাঁকোর পাড় নামকস্থানে বিগত ২০১৮ সালে একটি সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বর্তমান অর্থ মন্ত্রাণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এম পি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সেতু নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছিল।

গত ২০২১ সালের জুন মাসে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার কথা ছিল। কিন্তু অদ্যাবধি সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। ঠিকাদারের অবহেলায় দীর্ঘ সময়েও সেতুর কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে সেতুর স্থলে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেছেন গোয়ালডিহি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের শুরুতে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণ কাজ শুরু করেন স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এম এহতেশামুল হক। পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৬ টাকা। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে। কিন্তু গত ৪ বছরে কেবল সেতুর পাইলিং ছাড়া আর কোনো কাজই করা হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর দুই পাশে গোয়ালডিহি, নলবাড়ী, দুবুলিয়া, পূর্ব হাসিমপুর, পশ্চিম হাসিমপুর গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এই রাস্তা ব্যবহার করেন উত্তরা ইপিজেডকর্মী, তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা সেবাগ্রহীতারা। প্রতিনিয়ত অন্তত ৫-৭ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন এ পথদিয়েই। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে খানসামা, চিরিরবন্দরসহ নীলফামারী বাজারে যান এ রাস্তা দিয়েই। বর্ষার সময় অসুস্থ, গর্ভবতী ও স্কুলপড়ুয়া শিশুদের স্কুলে যাতায়াতসহ সবার ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়।

গোয়ালডিহি গ্রামের জুবায়ের হোসেন বলেন, গত ৪ বছরেও সেতুর পাইলিং করা ছাড়া নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এতদিন ধরে ভোগান্তি হলো বাজেট বরাদ্দ নেই দেখে। বাজেট যখন এল, তখন ঠিকাদারের অবহেলা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা এলাকার লোকজন। সামনে বর্ষা শুরু হচ্ছে। তবুও ভালো যে চেয়ারম্যান একটা সাঁকো বানিয়ে দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থাটা করে দিলেন। সাঁকোটি নির্মাণ করায় আমাদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমেছে।

গোয়ালডিহি ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন লিটন বলেন, ‘সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় এলাকার লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত এলাকার মানুষের অভিযোগ শুনতে হয়। পরে টিআর প্রকল্পের আওতায় অন্তত আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে ২৭৫ ফুট লম্ব^া কাঠের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন। তবে সেতুটির কাজ যেন তরান্বিত হয়, এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনিও দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ রাখছেন।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয়ের উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জাগো২৪.নেট-কে জানান, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলে কালক্ষেপণ করছেন। তিনি বলেন, এতদিনে শুধু পাইলিংয়ের কাজ শেষ করেছেন। এ জন্য ৩০ শতাংশ টাকাও উত্তোলন করেছেন। সেতুর কাজ দ্রæত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অন্যথায় তাঁর কার্যাদেশ বাতিল করার কথাও জানানো হয়েছে। তবে বর্ষার পর পরই সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।