শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বস্তায় আদা চাষে দিনবদলের চেষ্টা রুবেলের

নিভৃত গ্রামাঞ্চলের তরুণ-যুবক রুবেল শেখ। কৃষি পরিবারেই জন্ম। স্বপ্ন দেখেন কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। এই স্বপ্নের বাস্তবরূপ দিতে বাড়ির পরিত্যাক্ত স্থানে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু করেছে। দেখা দিয়েছে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। এখান থেকে দিনবদলের স্বপ্ন বুনছে এই যুবক।

সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের উত্তর ফরিদপুর গ্রামে দেখা সারি সারি বস্তায় আদা গাছের সবুজের সমাহার। এসময় উদ্যোক্তা রুবেল শেখ পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলেন।

জানা যায়, ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল গনি শেখের ছেলে রুবেল শেখ একজন এনজিও কর্মি। বসতবাড়ির উঠান ও ভেতরে অনেক জায়গা পরিত্যাক্ত আছে তার। সেই চিন্তা থেকে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এনিয়ে সবসময় ইউটিউব ও গুগল সার্চে বস্তা পদ্ধিতে আদা চাষের মনস্থির করে।

এ বিষয়ে তার স্ত্রী জেবিন আক্তার ও ছোট বোন শারমিন খাতুনসহ বাবা-মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে। সর্বসম্মতিতে পরিকল্পনা নেওয়া হয় বস্তা পদ্ধিতে আদা চাষের। এরই মধ্যে গত চৈত্র মাসে এক হাজার বস্তায় মাটি ভর্তি করে এর ভেতরে বারি-২ জাতের আদাবীজ রোপন করা হয়। নিজ বাড়ির ভেতর ঘরের বারান্দায় ও আঙ্গিনা এবং বাড়ির বাহিরের উঠানের ছায়াযুক্ত স্থানে সারিবদ্ধভাবে বস্তা বসিয়ে এই আদা চাষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেই আদা দেখা দিয়েছে বাম্পার ফলনের। আর কিছুদিন পরই এ ফসল ঘরে তুলবেন এই উদ্যোক্তা। বস্তা পদ্ধতি এই আদা চষে তার খরচ হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার টাকা। এ থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার আদা বিক্রি করা যেতে পারে বলে জানা গেছে।

এই বাড়িতে শুধু আদা চাষই নয়, একই সঙ্গে দুগ্ধগাভী পালন, নেপিয়ার ঘাস, লাউ, পেঁপে, লেবুসহ মাছ চাষেও ঝুঁকে পড়েছে রুবেল শেখ। তার এমন কাজ দেখে স্থানীয় অনেকে একই পরিকল্পনা নিয়েছে।

বস্তা পদ্ধতি আদা চাষ বিষয়ে উদ্যোক্তা রুবেল শেখ জানান, স্থানীয় বাজার থেকে সারের খালি বস্তা সংগ্রহ করেছেন। একইভাবে ট্রাকভর্তি বেলে দো-আঁশ মাটি কিনেছেন। প্রত্যকটি বস্তায় পরিমান মতো জৈব-রাসায়নিক-কম্পোস্ট সার ও দানাদার কীটনাশন ওইসব মাটির সঙ্গে মিশ্রিত করে বস্তাপ্রতি ২-৩টি করে আদা রোপন করেন।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে আদা-মাছ-ঘাস চাষে আমার বাবা-স্ত্রী-বোন সবসময় সহযোগিতা ও উৎসাহ যোগাচ্ছে। এই পদ্ধিতে আদা চাষে ফলন বেশী পেতে পারি। আশা করছি আমি লাভবান হবো। তাই এ অঞ্চলে প্রত্যেক কৃষকরে বাড়িতে পরিত্যাক্ত জায়গায় রয়েছে। তারা যেন এইভাবে আদা চাষবাদ করেন, সেবিষয়ে সবাইকে উৎসাহ করছি।

স্থানীয় শিক্ষক মোসলেম আলী বলেন, রুবেলে শেখের বস্তা সম্মিলিত আদা চাষ দেখতে এসে খুব ভালো লাগলো। আমিও এইভাবে আদা চাষের চিন্তা মাথায় রাখলাম।

সাদুল্লাপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, সাধারণভাবে আদা চাষের চেয়ে বস্তা পদ্ধতি চাষ করা অনেকটাই লাভজনক। এ নিয়ে অন্যান্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষক রুবেলকে লাভবান করতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

জনপ্রিয়

বস্তায় আদা চাষে দিনবদলের চেষ্টা রুবেলের

প্রকাশের সময়: ০৪:৫৫:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২২

নিভৃত গ্রামাঞ্চলের তরুণ-যুবক রুবেল শেখ। কৃষি পরিবারেই জন্ম। স্বপ্ন দেখেন কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। এই স্বপ্নের বাস্তবরূপ দিতে বাড়ির পরিত্যাক্ত স্থানে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু করেছে। দেখা দিয়েছে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। এখান থেকে দিনবদলের স্বপ্ন বুনছে এই যুবক।

সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের উত্তর ফরিদপুর গ্রামে দেখা সারি সারি বস্তায় আদা গাছের সবুজের সমাহার। এসময় উদ্যোক্তা রুবেল শেখ পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলেন।

জানা যায়, ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল গনি শেখের ছেলে রুবেল শেখ একজন এনজিও কর্মি। বসতবাড়ির উঠান ও ভেতরে অনেক জায়গা পরিত্যাক্ত আছে তার। সেই চিন্তা থেকে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এনিয়ে সবসময় ইউটিউব ও গুগল সার্চে বস্তা পদ্ধিতে আদা চাষের মনস্থির করে।

এ বিষয়ে তার স্ত্রী জেবিন আক্তার ও ছোট বোন শারমিন খাতুনসহ বাবা-মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে। সর্বসম্মতিতে পরিকল্পনা নেওয়া হয় বস্তা পদ্ধিতে আদা চাষের। এরই মধ্যে গত চৈত্র মাসে এক হাজার বস্তায় মাটি ভর্তি করে এর ভেতরে বারি-২ জাতের আদাবীজ রোপন করা হয়। নিজ বাড়ির ভেতর ঘরের বারান্দায় ও আঙ্গিনা এবং বাড়ির বাহিরের উঠানের ছায়াযুক্ত স্থানে সারিবদ্ধভাবে বস্তা বসিয়ে এই আদা চাষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেই আদা দেখা দিয়েছে বাম্পার ফলনের। আর কিছুদিন পরই এ ফসল ঘরে তুলবেন এই উদ্যোক্তা। বস্তা পদ্ধতি এই আদা চষে তার খরচ হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার টাকা। এ থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার আদা বিক্রি করা যেতে পারে বলে জানা গেছে।

এই বাড়িতে শুধু আদা চাষই নয়, একই সঙ্গে দুগ্ধগাভী পালন, নেপিয়ার ঘাস, লাউ, পেঁপে, লেবুসহ মাছ চাষেও ঝুঁকে পড়েছে রুবেল শেখ। তার এমন কাজ দেখে স্থানীয় অনেকে একই পরিকল্পনা নিয়েছে।

বস্তা পদ্ধতি আদা চাষ বিষয়ে উদ্যোক্তা রুবেল শেখ জানান, স্থানীয় বাজার থেকে সারের খালি বস্তা সংগ্রহ করেছেন। একইভাবে ট্রাকভর্তি বেলে দো-আঁশ মাটি কিনেছেন। প্রত্যকটি বস্তায় পরিমান মতো জৈব-রাসায়নিক-কম্পোস্ট সার ও দানাদার কীটনাশন ওইসব মাটির সঙ্গে মিশ্রিত করে বস্তাপ্রতি ২-৩টি করে আদা রোপন করেন।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে আদা-মাছ-ঘাস চাষে আমার বাবা-স্ত্রী-বোন সবসময় সহযোগিতা ও উৎসাহ যোগাচ্ছে। এই পদ্ধিতে আদা চাষে ফলন বেশী পেতে পারি। আশা করছি আমি লাভবান হবো। তাই এ অঞ্চলে প্রত্যেক কৃষকরে বাড়িতে পরিত্যাক্ত জায়গায় রয়েছে। তারা যেন এইভাবে আদা চাষবাদ করেন, সেবিষয়ে সবাইকে উৎসাহ করছি।

স্থানীয় শিক্ষক মোসলেম আলী বলেন, রুবেলে শেখের বস্তা সম্মিলিত আদা চাষ দেখতে এসে খুব ভালো লাগলো। আমিও এইভাবে আদা চাষের চিন্তা মাথায় রাখলাম।

সাদুল্লাপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, সাধারণভাবে আদা চাষের চেয়ে বস্তা পদ্ধতি চাষ করা অনেকটাই লাভজনক। এ নিয়ে অন্যান্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষক রুবেলকে লাভবান করতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।