বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধার কৃষকরা ঘরে তুলবেন ১০ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান

তোফায়েল হোসেন জাকির: চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধা জেলায় প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান ঘরে তুলবেন কৃষকরা। এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। নানা প্রতিকুল পেরিয়ে ইতোমধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আর দুই সপ্তাহ পরই হাইব্রিড জাতের ধান পুরোদমে ঘরে তুলবেন চাষিরা। তবে এ বছর বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন তারা।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঠে দেখা যায় ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটার চিত্র। এসময় প্রখর রোদ আর অসহনীয় দাবদাহ উপক্ষে করে কোমর বেঁধে কাজ করছিলেন কৃষক-শ্রমিকরা। এছাড়া মাঠজুড়ে দুলছে হাইব্রিড ধানের সোনালী শীষ।

জানা গেছে, গত আমন মৌসুমে নদীবেষ্টিত গাইবান্ধায় বন্যায় নষ্ট হয়েছে ধান ক্ষেত। সেই সঙ্গে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে অন্যান্য ফসলাদি। বন্যার এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছরে অধিক পরিমান জমিতে আবাদ করছে বোরো ধান। কৃষি পণ্যের দামবৃদ্ধিতে এসব ধান আবাদে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে কৃষকদের। সেই সাথে রোগবালাইয়ে কিছু সংখ্যাক ক্ষেতের ফসল ক্ষতি হয়েছে। নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে দেখা দিয়েছে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে দেশীয় জাতের ধান (চিকন) কাটতে শুরু করছে কৃষকরা। আর এ ধান ঘরে উঠানোর কিছুদিন পরই কাটা হবে হাইব্রিড জাতের ধানগুলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে কাঙ্খিত ধান ঘরে তুলতে পারলে হয়তো সেই বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকরা।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, এ জেলায় বোরো চাষাবাদে অর্জন হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ২০৫ হেক্টর। এ থেকে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা রয়েছে।

কৃষক মামুনুর রশিদ জানান, চলতি বোরো মৌসুমে দেড় একর জমিতে রোরো ধান আবাদ করেন। ফলনও হয়েছে ভালো। এরই মধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটা শুরু করা হয়েছে। সম্প্রতি যদি কোন দুর্যোগ দেখা না দেয়, তাহলে সবগুলো ধান ঘরে তুলতে পারবেন। তবে ক্ষেতে কিছুটা রোগবালাই রয়েছে।

লুৎফর রহমান নামের আরেক কৃষক বলেন,  গত বোরোতে ১ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করছিলেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছিল ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তা হেক্টর প্রতি ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদ্যুৎ, সার-ডিজেল, ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছরে হেক্টর প্রতি অতিরিক্ত প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিমুল হাসান বলেন, সম্প্রতি সময়ে বৈশ্বিক সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে কৃষকদের লোকসান হবে না। এছাড়া ফলন বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাকিল আজমী বলেন, এ বছর বোরো ধানের ফলন বেশ ভালো দেখা দিয়েছে। কৃষকদের লাভবান করতে মাঠপর্যায়ে লিফলেট বিতরণসহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বোরো ধানের ব্লাষ্ট ও হিটস্ট্রোক (হিট ইনজুরি) বিষয়ে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চলমান রয়েছে ।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রাসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়াসহ তাদের খরচ কমানোর জন্য কম্বাইণ্ড হারভেস্টার মেশিন ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।

 

জনপ্রিয়

গাইবান্ধার কৃষকরা ঘরে তুলবেন ১০ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান

প্রকাশের সময়: ১২:৩৪:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

তোফায়েল হোসেন জাকির: চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধা জেলায় প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান ঘরে তুলবেন কৃষকরা। এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। নানা প্রতিকুল পেরিয়ে ইতোমধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আর দুই সপ্তাহ পরই হাইব্রিড জাতের ধান পুরোদমে ঘরে তুলবেন চাষিরা। তবে এ বছর বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন তারা।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঠে দেখা যায় ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটার চিত্র। এসময় প্রখর রোদ আর অসহনীয় দাবদাহ উপক্ষে করে কোমর বেঁধে কাজ করছিলেন কৃষক-শ্রমিকরা। এছাড়া মাঠজুড়ে দুলছে হাইব্রিড ধানের সোনালী শীষ।

জানা গেছে, গত আমন মৌসুমে নদীবেষ্টিত গাইবান্ধায় বন্যায় নষ্ট হয়েছে ধান ক্ষেত। সেই সঙ্গে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে অন্যান্য ফসলাদি। বন্যার এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছরে অধিক পরিমান জমিতে আবাদ করছে বোরো ধান। কৃষি পণ্যের দামবৃদ্ধিতে এসব ধান আবাদে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে কৃষকদের। সেই সাথে রোগবালাইয়ে কিছু সংখ্যাক ক্ষেতের ফসল ক্ষতি হয়েছে। নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে দেখা দিয়েছে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে দেশীয় জাতের ধান (চিকন) কাটতে শুরু করছে কৃষকরা। আর এ ধান ঘরে উঠানোর কিছুদিন পরই কাটা হবে হাইব্রিড জাতের ধানগুলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে কাঙ্খিত ধান ঘরে তুলতে পারলে হয়তো সেই বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকরা।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, এ জেলায় বোরো চাষাবাদে অর্জন হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ২০৫ হেক্টর। এ থেকে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা রয়েছে।

কৃষক মামুনুর রশিদ জানান, চলতি বোরো মৌসুমে দেড় একর জমিতে রোরো ধান আবাদ করেন। ফলনও হয়েছে ভালো। এরই মধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটা শুরু করা হয়েছে। সম্প্রতি যদি কোন দুর্যোগ দেখা না দেয়, তাহলে সবগুলো ধান ঘরে তুলতে পারবেন। তবে ক্ষেতে কিছুটা রোগবালাই রয়েছে।

লুৎফর রহমান নামের আরেক কৃষক বলেন,  গত বোরোতে ১ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করছিলেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছিল ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তা হেক্টর প্রতি ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদ্যুৎ, সার-ডিজেল, ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছরে হেক্টর প্রতি অতিরিক্ত প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিমুল হাসান বলেন, সম্প্রতি সময়ে বৈশ্বিক সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে কৃষকদের লোকসান হবে না। এছাড়া ফলন বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাকিল আজমী বলেন, এ বছর বোরো ধানের ফলন বেশ ভালো দেখা দিয়েছে। কৃষকদের লাভবান করতে মাঠপর্যায়ে লিফলেট বিতরণসহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বোরো ধানের ব্লাষ্ট ও হিটস্ট্রোক (হিট ইনজুরি) বিষয়ে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চলমান রয়েছে ।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রাসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়াসহ তাদের খরচ কমানোর জন্য কম্বাইণ্ড হারভেস্টার মেশিন ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।