শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ন

লালমনিরহাটে চালক হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেফতার ৪ 

শাহজাহান সাজু , ডিসট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, লালমনিরহাট
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩
লালমনিরহাটের আদিতমারীতে চাঞ্চল্যকর অটোমিশুক চালক রাশিদ হত্যার  মূল পরিকল্পনাকারীসহ চার আসামীকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। হত্যার ৭২ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‍্যাব-১৩।
বুধবার (২৩ আগস্ট) রাতে তাদেরকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে আদিতমারী থানায় হস্তান্তর করা হলে এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আদিতমারীর খারুভাজ বালাপাড়ার  মমিনুল ইসলামের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (১৬), মৃত- মোন্তাজ আলীর ছেলে শামসুল হক বাবু (৩২), আব্দুল মতিনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মুন্না (১৭), এবং নাজিম উদ্দিনের ছেলে মোমিনুল ইসলাম (৪৫)।
মামলা ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গত সোমবার( ২০ আগস্ট) প্রতিদিনের মতো অটোমিশুক চালক রাশিদ তার ছোট ছেলের জন্য রাতের খাবার নিয়ে বাড়ি হতে বুড়িরবাজার মাদ্রাসায় পৌঁছে দেয়। অনেক রাত হলেও বাড়ি ফিরে না আসায় তার ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া গেলে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা খোঁজা-খুঁজি শুরু করে  এবং তার বড় ছেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) তার বাবাকে খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি পোস্ট করে।
পরে মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) সকালে ডাকাতপাড়া ব্রিজের উপর রক্তের দাগ ও পায়ের মেন্ডেল দেখতে পায় সাধারণ পথচারী। খবর পেয়ে ডাকাতপাড়া ব্রিজের নিচে ভেটেশ্বর নদীতে তল্লাশি চালিয়ে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে আদিতমারী থানা পুলিশ। পরে রাশিদের পরিবার মৃতদেহ সনাক্ত করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের বড় ভাই রশিদ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ ও র‍্যাব হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে হত্যার ৭২ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গাজীপুরের কোনাবাড়ী আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করে র‍্যাব-১৩।
র‍্যাব-১৩ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর এইচ এম ওমর ফারুক সাংবাদিকদের জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, মূল পরিকল্পনাকারী সিরাজুল ইসলাম (১৬) এর পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সহযোগী আসামীদের সহযোগীতায় ঘটনার দিন রাতে বুড়িরবাজার থেকে অটোমিশুক ভাড়া করে বাবুর বাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথিমধ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতপাড়া ব্রীজের উপর প্রসাব করার কথা বলে অটোমিশুক থামায়। পরে অটোমিশুক ছিনতাই এর উদ্দেশ্যে শামসুল হক ও মোস্তাফিজুর রহমান রাশিদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে। একপর্যায়ে সিরাজুল ইসলাম পিছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাশিদের মাথায় স্বজোরে আঘাত করলে সে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। পরে ভিকটিমকে আহত অবস্থায় ব্রীজের উপর থেকে পানিতে ফেলে দিয়ে অটোমিশুক নিয়ে মোস্তফি বাজারে ভাঙ্গারী দোকানে বিক্রি করতে গেলে দোকানদার বৈধ কাগজ চাইলে তারা সেখানে অটোমিশুক রেখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা পালিয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ী চাকুরির সুবাদে অবস্থানরত আসামী সিরাজুল ইসলামের বাবা মোমিনুল ইসলামের বাসায় আত্মগোপন করে এবং সেখান থেকেই তাদেরকে র‍্যাব-১১ এর সহযোগিতায় গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা আন্তঃ জেলা অটোমিশুক ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত। যা সিরাজ গ্যাং নামে পরিচিত। তারা যাত্রী হয়ে অটোমিশুক ভাড়া করে নির্জন স্থানে গিয়ে চালককে জিম্মি করে অটো ছিনতাই করে তা বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে থাকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাশিদ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতের কথা তারা স্বীকার করে। তাদেরকে আদিতমারী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে আসামীদের থানায় নিয়ে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাশিদের পরিবারসহ শত শত এলাকাবাসী থানায় এসে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা লালমনিরহাট- পাটগ্রাম সড়ক অবরোধ করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানায়। পরে আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক হ্যান্ডমাইকে দ্রুত আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের আশ্বাস দিলে তারা ঘন্টা দুয়েক বিক্ষোভ ও অবরোধ শেষে ফিরে যায়।
এ বিষয়ে আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত চার আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন