বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধান খেতে ব্লাস্ট, দুশ্চিন্তায় কৃষক

তোফায়েল হোসেন জাকির: চলতি মৌসুমের শুরুতে গাইবান্ধার কৃষকরা নানা প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে রোপন করেছেন আমন ধানের চারা। ইতোমধ্যে এই ধান খেত সবুজ আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে কিছু সংখ্যক খেতে শুরু হয়েছে ‘পাতা ব্লাস্ট’ রোগের আক্রমণ। এখন সেই সবুজ খেতগুলো ধীরে ধীরে হলদে থেকে বাদামি রঙে পরিণত হচ্ছে। এ নিয়ে ফসল বিনষ্টের আঙ্কায় দুশ্চিন্তা পড়েছেন কৃষকরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর ও সদর উপজেলাসহ জেলার বেশ কিছু মাঠে দেখা গেছে- রোপা আমন ধানের খেতে পাতা ব্লাস্ট রোগের আক্রান্ত। কেউ বা বলেছেন এটি খোল পেড়া বা পঁচা রোগ। এর ফলে ধানের পাতা পচে বিনষ্ট হচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধে কিটনাশক প্রয়োগ করেও কাজে আসছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, জীবন জীবিকার জন্য গাইবান্ধার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভশীল। এ জেলার শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ জনসাধারণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি ফসল ঘরে তুলে তাদের মৌলিক চাহিদা পুরণে চেষ্টা করে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক ফসল হচ্ছে রোপা আমন ধান। আর আমন চারা রোপণের সময় প্রত্যেক বছরে বন্যা দেখা দিলেও এ বছরে তেমনটা প্রভাব পড়েনি। আমন চারা রোপণের বেশীরভাগ সময়ে খরার কবলে পড়তে হয়েছিল। অধিকাংশ কৃষক বাড়তি খরচে সেচ দিয়ে রোপণ করেছেন এই ধানচারা। এবার অধিক ফলনের আশায় ইতিমেধ্য পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ শেষের দিকে। এরই মধ্যে ধানের খেতগুলো সবুজ রঙ ধারণ করায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা কৃষকের মুখে হাসি ফুটছিল। আর এই মুহূর্তে সেই হাসি যেনো ম্লান হয়ে যাচ্ছে তাদের। বর্তমানে বেশ কিছু মাঠে দেখা দিয়েছে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ পাতা ব্লাস্ট বা খোল পঁচা রোগের প্রাদুর্ভাব। এ কারণে ধানের খেতগুলো এখন হলদে থেকে বাদামি রঙে পরিণত হয়েছে। কৃষকের স্বপ্নের খেত বিনষ্টের আশঙ্কা মাথায় বাজ পড়েছে ।

কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, এবার আমি দুই বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছি। এর শুরুতে খরার কবলে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করতে হয়েছে। সেই সাথে অতিরিক্ত দামে শ্রমিক ও চারা ক্রয়সহ সার প্রয়োগ করেছি। এখন সেই খেত পঁচারী রোগ দেখা দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে কিটনাশক প্রয়োগ করেও কাজে আসছে না।

আরেক কৃষক জামাত আলী বলেন, ধান খেতে রোগবালাই দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না কৃষি কর্মকর্তাদের। তাই দোকানিদের পরামর্শে কিটনাশক কিনে প্রয়োগ করছি।

পলাশবাড়ীর উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমা সিদ্দিকা বলেন, ধানের খোলপোড়া ও খোল পঁচা রোগের জন্য নাভারা, তারেদ, এসিবিন, টিপঅফ (এজক্সিস্ট্রবিন+সিপ্রোকোনাজল) কিটনাশক বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ১৫ মিলি ও ১০ লিটার পানি মিশ্রিত করে স্পে করে দিতে হবে। অথবা এমিস্টার টপ, এমিস্কোর, সানজক্সি ১০ মিলি ও ১০ লিটার পানিতে প্রয়োগ করতে হবে। এসব ওষুধ প্রয়োগ করলে ওই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ১ লাখ সাড়ে ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ হয়েছে। এসব খেতে পোকামাকড় ও রোগবালই প্রতিরোধে কৃষকদের পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।

 

জনপ্রিয়

ধান খেতে ব্লাস্ট, দুশ্চিন্তায় কৃষক

প্রকাশের সময়: ০৯:১৩:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

তোফায়েল হোসেন জাকির: চলতি মৌসুমের শুরুতে গাইবান্ধার কৃষকরা নানা প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে রোপন করেছেন আমন ধানের চারা। ইতোমধ্যে এই ধান খেত সবুজ আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে কিছু সংখ্যক খেতে শুরু হয়েছে ‘পাতা ব্লাস্ট’ রোগের আক্রমণ। এখন সেই সবুজ খেতগুলো ধীরে ধীরে হলদে থেকে বাদামি রঙে পরিণত হচ্ছে। এ নিয়ে ফসল বিনষ্টের আঙ্কায় দুশ্চিন্তা পড়েছেন কৃষকরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর ও সদর উপজেলাসহ জেলার বেশ কিছু মাঠে দেখা গেছে- রোপা আমন ধানের খেতে পাতা ব্লাস্ট রোগের আক্রান্ত। কেউ বা বলেছেন এটি খোল পেড়া বা পঁচা রোগ। এর ফলে ধানের পাতা পচে বিনষ্ট হচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধে কিটনাশক প্রয়োগ করেও কাজে আসছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, জীবন জীবিকার জন্য গাইবান্ধার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভশীল। এ জেলার শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ জনসাধারণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি ফসল ঘরে তুলে তাদের মৌলিক চাহিদা পুরণে চেষ্টা করে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক ফসল হচ্ছে রোপা আমন ধান। আর আমন চারা রোপণের সময় প্রত্যেক বছরে বন্যা দেখা দিলেও এ বছরে তেমনটা প্রভাব পড়েনি। আমন চারা রোপণের বেশীরভাগ সময়ে খরার কবলে পড়তে হয়েছিল। অধিকাংশ কৃষক বাড়তি খরচে সেচ দিয়ে রোপণ করেছেন এই ধানচারা। এবার অধিক ফলনের আশায় ইতিমেধ্য পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ শেষের দিকে। এরই মধ্যে ধানের খেতগুলো সবুজ রঙ ধারণ করায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা কৃষকের মুখে হাসি ফুটছিল। আর এই মুহূর্তে সেই হাসি যেনো ম্লান হয়ে যাচ্ছে তাদের। বর্তমানে বেশ কিছু মাঠে দেখা দিয়েছে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ পাতা ব্লাস্ট বা খোল পঁচা রোগের প্রাদুর্ভাব। এ কারণে ধানের খেতগুলো এখন হলদে থেকে বাদামি রঙে পরিণত হয়েছে। কৃষকের স্বপ্নের খেত বিনষ্টের আশঙ্কা মাথায় বাজ পড়েছে ।

কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, এবার আমি দুই বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছি। এর শুরুতে খরার কবলে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করতে হয়েছে। সেই সাথে অতিরিক্ত দামে শ্রমিক ও চারা ক্রয়সহ সার প্রয়োগ করেছি। এখন সেই খেত পঁচারী রোগ দেখা দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে কিটনাশক প্রয়োগ করেও কাজে আসছে না।

আরেক কৃষক জামাত আলী বলেন, ধান খেতে রোগবালাই দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না কৃষি কর্মকর্তাদের। তাই দোকানিদের পরামর্শে কিটনাশক কিনে প্রয়োগ করছি।

পলাশবাড়ীর উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমা সিদ্দিকা বলেন, ধানের খোলপোড়া ও খোল পঁচা রোগের জন্য নাভারা, তারেদ, এসিবিন, টিপঅফ (এজক্সিস্ট্রবিন+সিপ্রোকোনাজল) কিটনাশক বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ১৫ মিলি ও ১০ লিটার পানি মিশ্রিত করে স্পে করে দিতে হবে। অথবা এমিস্টার টপ, এমিস্কোর, সানজক্সি ১০ মিলি ও ১০ লিটার পানিতে প্রয়োগ করতে হবে। এসব ওষুধ প্রয়োগ করলে ওই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ১ লাখ সাড়ে ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ হয়েছে। এসব খেতে পোকামাকড় ও রোগবালই প্রতিরোধে কৃষকদের পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।