বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শীতে কাবু ছাগলের মাতৃস্নেহে গৃহবধূ

মাজেদা বেগম নামের এক গৃহবধূর কোলজুড়ে দেখা গেছে ছাগলের বাচ্চা

তোফায়েল হোসেন জাকির:  গাইবান্ধায় শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল বাতাসে মানুষের পাশাপাশি কাঁপছে পশুপাখিও। গৃহপালিত গরু-ছাগল নিয়ে বেকায়দায় কৃষক। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মাজেদা বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধূর কোলজুড়ে দেখা গেছে ছাগলের বাচ্চা। শীতে কাবু ৫টি ছাগলের গাঁয়ে গরম বস্ত্র মুড়িয়ে আগলে রেখেছেন তিনি।

রোববার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের দাউদপুর বাঁধের ধারে দেখা মেলে ছাগলগুলোর মাতৃস্নেহ দেওয়ার দৃশ্য। এসময় মাজেদা বেগম তার গৃহপালিত ছাগলে শীত নিবারণে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।  

শুধু এই মাজেদা বেগমই নয়। এমন অসংখ্যা মাজেদা বেগমরা তাদের গরু-ছাগল নিয়ে পড়েছে বেকায়দায়। বিশেষ করে খামারের প্রাণির শীতজনিত রোগের আশঙ্কা করছেন খামারীরা। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে তাদের অভিযোগ। 

জানা যায়, পৌষের শেষ সপ্তাহ এসে গাইবান্ধার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। কনকনে শীতে যবুথবু হয়ে পড়ছে মানুষসহ পশুপাখি। এখানকার    চরাঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে একসপ্তাহ ধরে সূর্য্যের মূখ দেখা মেলে না। চারদিকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে। সেই সঙ্গে উত্তরের মৃদু হিমেল হাওয়া বইছে। দিনশেষে রাত ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই বাড়তে থাকে কুয়াশার দাপট। যেন বৃষ্টির মতো ঝড়ছে এসব কুয়াশা। এ কারণে বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। কনকনে এই ঠান্ডায় যবুথবু হওয়া পশুপাখিগুলো নাজেহাল হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে শীতজনিত নানা রোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

মাজেদা বেগম নামের ওই গৃহবধূ জানান, তার স্বামী আবেদ আলী পেশায় একজন দিনমজুর। দৈনন্দিন মুষ্টির চাল বিক্রি করে একটি ছাগল কিনেছেন। সেটির প্রজনন থেকে এখন তার ৫টি ছাগলে হয়েছে। এ থেকে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু এরই মধ্যে শীতে দাপটে ওইসব প্রাণি রক্ষায় চরম দুশ্চিনতায় আছেন তিনি। 

ফুলছড়ি চরের একাব্বর আলী বলেন, গরু-ছাগল লালন-পালন করেই সংসার চালাই। কিন্তু গত কয়েক দিনের ঠান্ডায় এসব প্রাণি কাবু হয়ে পড়ছে। তেমনটা আহার করতে পারছে না। এ নিয়ে প্রাণিম্পদ বিভাগে জানানো হলেও সঠিক কোন পরামর্শ পাওয়া যায়নি। 

সাদুল্লাপুর উপজেলার উপ-সহকারী প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোনায়েম খন্দকার বলেন, শীতকালে গরু-ছাগল পালনে যত্নশীল হতে হবে। বিশেষ করে ছাগলের ঘরে ঠান্ডা বাতাস যেন না ঢোকে, রাতে যেন তাপমাত্রা কোনভাবেই কমে না আসে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। আর রাতের বেলায় ছাগেলের শিং এ সরিষার তেল মেখে এক কোয়া রসুন খাইয়ে দিলে ভালো হয়। 

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান জানান, ছাগলের বয়স ২ মাসের অধিক হলে সিসি পিপিআর টিকা ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হবে। এছাড়া চলতি শীত মৌসুমে প্রাণিসেবা দিতে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। 

জনপ্রিয়

শীতে কাবু ছাগলের মাতৃস্নেহে গৃহবধূ

প্রকাশের সময়: ০৯:৪০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৪

মাজেদা বেগম নামের এক গৃহবধূর কোলজুড়ে দেখা গেছে ছাগলের বাচ্চা

তোফায়েল হোসেন জাকির:  গাইবান্ধায় শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল বাতাসে মানুষের পাশাপাশি কাঁপছে পশুপাখিও। গৃহপালিত গরু-ছাগল নিয়ে বেকায়দায় কৃষক। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মাজেদা বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধূর কোলজুড়ে দেখা গেছে ছাগলের বাচ্চা। শীতে কাবু ৫টি ছাগলের গাঁয়ে গরম বস্ত্র মুড়িয়ে আগলে রেখেছেন তিনি।

রোববার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের দাউদপুর বাঁধের ধারে দেখা মেলে ছাগলগুলোর মাতৃস্নেহ দেওয়ার দৃশ্য। এসময় মাজেদা বেগম তার গৃহপালিত ছাগলে শীত নিবারণে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।  

শুধু এই মাজেদা বেগমই নয়। এমন অসংখ্যা মাজেদা বেগমরা তাদের গরু-ছাগল নিয়ে পড়েছে বেকায়দায়। বিশেষ করে খামারের প্রাণির শীতজনিত রোগের আশঙ্কা করছেন খামারীরা। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে তাদের অভিযোগ। 

জানা যায়, পৌষের শেষ সপ্তাহ এসে গাইবান্ধার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। কনকনে শীতে যবুথবু হয়ে পড়ছে মানুষসহ পশুপাখি। এখানকার    চরাঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে একসপ্তাহ ধরে সূর্য্যের মূখ দেখা মেলে না। চারদিকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে। সেই সঙ্গে উত্তরের মৃদু হিমেল হাওয়া বইছে। দিনশেষে রাত ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই বাড়তে থাকে কুয়াশার দাপট। যেন বৃষ্টির মতো ঝড়ছে এসব কুয়াশা। এ কারণে বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। কনকনে এই ঠান্ডায় যবুথবু হওয়া পশুপাখিগুলো নাজেহাল হয়ে পড়ছে। এ নিয়ে শীতজনিত নানা রোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

মাজেদা বেগম নামের ওই গৃহবধূ জানান, তার স্বামী আবেদ আলী পেশায় একজন দিনমজুর। দৈনন্দিন মুষ্টির চাল বিক্রি করে একটি ছাগল কিনেছেন। সেটির প্রজনন থেকে এখন তার ৫টি ছাগলে হয়েছে। এ থেকে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু এরই মধ্যে শীতে দাপটে ওইসব প্রাণি রক্ষায় চরম দুশ্চিনতায় আছেন তিনি। 

ফুলছড়ি চরের একাব্বর আলী বলেন, গরু-ছাগল লালন-পালন করেই সংসার চালাই। কিন্তু গত কয়েক দিনের ঠান্ডায় এসব প্রাণি কাবু হয়ে পড়ছে। তেমনটা আহার করতে পারছে না। এ নিয়ে প্রাণিম্পদ বিভাগে জানানো হলেও সঠিক কোন পরামর্শ পাওয়া যায়নি। 

সাদুল্লাপুর উপজেলার উপ-সহকারী প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোনায়েম খন্দকার বলেন, শীতকালে গরু-ছাগল পালনে যত্নশীল হতে হবে। বিশেষ করে ছাগলের ঘরে ঠান্ডা বাতাস যেন না ঢোকে, রাতে যেন তাপমাত্রা কোনভাবেই কমে না আসে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। আর রাতের বেলায় ছাগেলের শিং এ সরিষার তেল মেখে এক কোয়া রসুন খাইয়ে দিলে ভালো হয়। 

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান জানান, ছাগলের বয়স ২ মাসের অধিক হলে সিসি পিপিআর টিকা ঘাড়ের চামড়ার নিচে দিতে হবে। এছাড়া চলতি শীত মৌসুমে প্রাণিসেবা দিতে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।