গাইবান্ধা জেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে বেড়েই চলছে জুয়া খেলার প্রবণতা। এ খেলার নেশায় যুব সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ফতুর হচ্ছেন। এর ফলে এ কারণে পারিবারিক অশান্তিসহ বাড়ছে অপরাধ কাণ্ড।
সম্প্রতি খোঁজ জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলাজুড়ে ধীরে ধীরে এই জুয়া বিস্তার লাভ করছে। সহজে প্রচুর অর্থ উপার্জনের লোভে পড়ে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষ অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। তরুণদের অনেকেই কৌতূহলবশত এই খেলা শুরুর পর এখন নেশায় পড়ে যাচ্ছেন। প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তী সময় খোয়াচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।
ওই জুয়ার সঙ্গে জড়িত একাধিক কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টার্চ ফোনে নির্ধারিত কয়েকটি অ্যাপস ডাউনলোড করে সেখানে জুয়া খেলা চলে। বিভিন্ন নামের প্রায় ৮ থেকে ১০টির মতো অ্যাপসে সবচেয়ে বেশি জুয়া খেলা হয়। এসব অ্যাপসে ১০ টাকা থেকে শুরু করে যেকোনো অংকের টাকা দিয়ে শুরু করা যায়।
এ খেলায় আসক্তরা বলছেন, এসব অ্যাপস পরিচালনা করেছেন কয়েকটি দেশ। জেলার প্রায় প্রতিটি বাজারেই রয়েছে তাদের এজেন্ট। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ বা প্রদান করে থাকে। এজেন্টরা বিদেশি অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছ থেকে হাজারে কমপক্ষে ৪০ টাকা কমিশন পায়। এজেন্টদের মাধ্যমেই বিদেশে টাকা পাঁচার হয়।
অনলাইন জুয়ায় আসক্ত আরও একাধিক ব্যক্তি বলছেন, এসব খেলা স্বাভাবিক গেমের মতো হওয়ায় প্রকাশ্যে খেলা হলেও আশপাশের মানুষ তা বুঝতে পারেন না। জুয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই রয়েছে স্মার্ট ফোন। যাদের নেই, তারা ভাড়া নিয়ে চালান। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম অংশগ্রহণকারীদের জুয়ায় জিতিয়ে লোভে ফেলা হয়। এরপর নেশা ধরে গেলে টাকা খোয়ানোর ঘটনা ঘটতে থাকে। তখন আর বের হওয়ার পথ থাকে না।
কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের ভুক্তভোগী গূহবধূ জানান, তার স্বামী অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি পযর্ন্ত বিক্রি করেছেন। কিছু বললেই সে মারধর করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, তার ছেলে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। কিন্তু অনলাইন জুয়ার কারণে পড়ালেখায় মনোযোগ নেই। কৌশলে টাকা নিয়ে এটা খেলে। কোনোভাবেই বিরত রাখা যাচ্ছে না।
পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে সচেতনতা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার কামাল হোসেন বলেন, অনলাইনে জুয়া বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত অকেকেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট