দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিটি ঘরে ঘরে চলছে জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলা ব্যাথা রোগের প্রাদুর্ভাব। শয্যা সংকটের কারণে হাসপাতালের মেঝেতে চলছে চিকিৎসাসেবা। এতে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স-মিডওয়াইফ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেই সঙ্গে উপজেলায় বিভিন্ন ফার্মেসীতে প্যারাসিটামল গ্রুপের ঔষধ সংকট চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিরুপ আবহাওয়ার কারণে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আবহাওয়া অনুকূলে না আসা পর্যন্ত প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে না যাওয়া, সুতি কাপড় ব্যবহার ও বেশি পরিমাণে পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, ঋতু পরিক্রমায় মানুষসহ নাভিশ্বাস অবস্থা সমগ্র প্রাণ-প্রকৃতির। প্রচন্ড খরতাপের কারণে রাস্তায় লোক সমাগম কম দেখা গেলেও ভিন্ন চিত্র হাসপাতালে। উষ্ণতম দিনের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগীর সংখ্যাও। গত ২৪ জুন সোমবার দুপুরে উপজেলার পাকেরহাটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ ও আউটডোরে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের বেডগুলো রোগী দিয়ে ভর্তি। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বারান্দা ও মেঝেতেও রোগী ভর্তি রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১০২ জন। এর মধ্যে জ্বর ওও সর্দি-কাশির রোগীর সংখ্যাই অন্তত ৭০ জন। কোরবানির ঈদের দিন থেকে সময়ের সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত এক সপ্তাহে অন্তত ৫০০ জনের অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৩০০ জনই জ্বরের রোগী ছিলেন। এছাড়াও প্রতিদিন জরুরি বিভাগ ও ইনডোরে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন অন্তত ৩০০ রোগী। এর মধ্যে অধিকাংশই জ্বর, সর্দি-কাশি ও ব্যাথার রোগী।
আরে জানা গেছে, বিগত ২০২১ সালে জুলাই মাসে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতিকরণসহ সেবা কার্যক্রম চালুর প্রশাসনিক অনুমোদন পায় হাসপাতালটি। কিন্তু এতদিনেও জনবল ও বরাদ্দ পায়নি। সেই সঙ্গে ৩১ শয্যারই জনবল সংকট। সংকটের মধ্যদিয়েও স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের লাবিব (৫) নামে এক শিশু জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বারান্দায় ভর্তি রয়েছেন। তার মাতা হালিমা খাতুন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমার ছেলের জ্বর-সর্দি। প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পরেও তা কমেনি। তাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলার গুলিয়ারা গ্রামের মিনতি রায় (৪০) সর্দি-জ্বর নিয়ে পাকেরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, হঠাৎ জ্বর ও শরীর ব্যাথা নিয়ে চিকিৎসকের নিকট আসলে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। তাই বেড ফাঁকা না থাকায় নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছি। কেউ কেউ ২-৪ দিন ধরে বারান্দায় থেকে জ্বর, সর্দি-কাশির মতো সংবেদনশীল রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই হাসপাতালের মেঝেতে থেকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পাকেরহাট এএফআর মেডিসিন মার্টের সত্ত্বাধিকারী বখতিয়ার উদ্দিন জানান, ঈদের ছুটি ও গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বরের রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে বাজারে কিছু কোম্পানির প্যারাসিটামল গ্রুপের ঔষধ সংকট দেখা দিয়েছে। তবে তা ২-১ দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে বলে তিনি কোম্পানির বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছেন। সেই সঙ্গে কোম্পানি এ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের দাম বৃদ্ধি করেছে বলে তিনি জানান।
খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল জাগো২৪.নেট-কে বলেন, ভাইরাস ও আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে জ্বর ও সর্দি-কাশির রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেউ এমন রোগে আক্রান্ত হলে এ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ গ্রহণ না করে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে জনবল ও বরাদ্দ সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।