রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিজ হাতে পবিত্র আল কোরআন লিখে প্রশংসায় ভাসছেন স্কুলছাত্রী 

মো. রফিকুল ইসলাম : নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী সোমা আক্তারের হাতের লেখা দৃষ্টিনন্দন পবিত্র আল  কোরআন দেখে বিস্মিত এলাকাবাসী। মাত্র ৮ মাসে নির্ভুলভাবে পুরো আল কোরআন নিজ হাতে লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন সোমা আক্তার। যে বয়সে মেয়েরা হাতে মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক ওই বয়সে এ শিক্ষার্থী হাতে কোরআন লিখে সময় অতিবাহিত করছেন। সোমা কোনো মাদরাসা বা কোনো শিক্ষকের নিকট এ বিষয়ে প্রাইভেটও পড়েননি। তার চোখ ধাঁধানো হাতের লেখায় পবিত্র কোরআন লিখে এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন। সোমা আক্তার দিনাজপুরের চিরিরবন্দর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের মাঝাপাড়ার আমিনুল ইসলামের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েদের থেকে একটু ভিন্ন সোমা। যে বয়সে ছেলেমেয়েরা মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে, ঠিক সেই সময় সোমা নিজ হাতে পবিত্র কোরআন লিখতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সে মাত্র ৮ মাসে নির্ভুলভাবে পুরো কুরআন মাজিদ হাতে লিখেছে। তার চোখ ধাঁধানো পবিত্র কোরআন হাতের লেখায় এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
সোমা আক্তারের বোন সুমি আক্তার জানান, আমার ছোট বোন সোমা ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত  মেধাবী। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি সুন্দর হাতের লেখার চর্চা ও বিভিন্ন ছবি অঙ্কন করতে পছন্দ করতো। সে আরবি ক্যালিওগ্রাফি আর্ট করতে পারে। সে নিজে নিজে আমপাড়া দেখে আরবি লেখা শিখেছে। এরপর মাত্র ৮ মাসে পুরো কোরআন হাতে লিখে ফেলেছে।
সোমা আক্তারের মা আছমা বেগম জানান, আমার মেয়ে এখন হাই স্কুলে পড়ে। তাকে মাদরাসা বা কোনো হুজুরের নিকট পড়াইনি। সে নিজের ইচ্ছায় ও চেষ্টায় মাত্র ৮ মাসে পুরো পবিত্র কোরআন লিখেছে। মেয়ের এরকম দৃষ্টিনন্দন কাজে আমি মা হিসেবে গর্বিত ও আনন্দিত।
উপজেলার মামুদপুর রসুলপুর হামিদিয়া সালাফিয়া ইয়াতিমখানা মাদরাসার হাফেজ আব্দুল হাকিম সরকার জানান-এটা যে কেউই  বিশ্বাস করতে চাইবে না যে, জীবনে মাদরাসা বা হুজুরের নিকট আরবি না শিখে বা না পড়েও একজন স্কুলছাত্রী মাত্র ৮ মাসে পুরো কোরআন হাতে লিখে সম্পন্ন করেছে। আমি তার হাতের লেখা পুরো কোরআন দেখেছি। কোথাও কোন ভুল নেই। শুধু দুই-এক স্থানে একটু সমস্যা ছিল। আমি সেগুলো তাকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম। সে সেগুলো ঠিক করে নিয়েছে। সে পবিত্র কোরআনের ৬টি কপি তৈরি করেছে। সেগুলোতে কোনোরকম ভুল নেই। তার হাতের লেখা কোরআন দেখলে মনে হবে না যে, এটা হাতে লেখা।
সোমা আক্তার জানান, আমি প্রথমে ক্যালিওগ্রাফি আর্ট করার চেষ্টা করতাম। সেগুলো দেখে আমার এক ভাই বলেছে, তোর (তোমার) হাতের লেখা তো অনেক সুন্দর। তুই (তুমি) চেষ্টা করলে হাতে কোরআন লিখতে পারবি। ওই ভাইয়ের কথা মতো আমি পবিত্র কোরআন লেখা শুরু করি। এরপর দীর্ঘ ৮ মাসের চেষ্টায় আমি সফলভাবে কোরআন লিখতে পেরেছি। আমি কোনো মাদরাসা বা শিক্ষকের নিকট আরবি লেখা শিখিনি। নিজের চেষ্টায় কোরআন দেখে দেখে লেখা শিখেছি। কারণ আমার পিতা একজন দিনমজুর। আমাদের সে রকম কোনো সামর্থও নেই। পৃথকভাবে হুজুর বা শিক্ষকের নিকট গিয়ে প্রাইভেট পড়ার। আমার হাতের লেখা কোরআন দেখে একজন সৌদি প্রবাসী ভাই ৬টি কোরআনের অর্ডার করেছেন। ইতিমধ্যেই আমি সেগুলো তৈরি করেছি। আমি আরও কিছু হাতে লেখা কোরআন মসজিদ, মাদরাসা ও ইয়াতিমখানায় দান করার জন্য প্রস্তুত করছি। কেউ যদি আমার হাতের লেখা কোরআন মাজিদ নিতে চায় তাহলে, আমি লিখে দিতে পারবো।
জনপ্রিয়

নিজ হাতে পবিত্র আল কোরআন লিখে প্রশংসায় ভাসছেন স্কুলছাত্রী 

প্রকাশের সময়: ১০:১৮:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
মো. রফিকুল ইসলাম : নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী সোমা আক্তারের হাতের লেখা দৃষ্টিনন্দন পবিত্র আল  কোরআন দেখে বিস্মিত এলাকাবাসী। মাত্র ৮ মাসে নির্ভুলভাবে পুরো আল কোরআন নিজ হাতে লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন সোমা আক্তার। যে বয়সে মেয়েরা হাতে মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক ওই বয়সে এ শিক্ষার্থী হাতে কোরআন লিখে সময় অতিবাহিত করছেন। সোমা কোনো মাদরাসা বা কোনো শিক্ষকের নিকট এ বিষয়ে প্রাইভেটও পড়েননি। তার চোখ ধাঁধানো হাতের লেখায় পবিত্র কোরআন লিখে এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন। সোমা আক্তার দিনাজপুরের চিরিরবন্দর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের মাঝাপাড়ার আমিনুল ইসলামের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েদের থেকে একটু ভিন্ন সোমা। যে বয়সে ছেলেমেয়েরা মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে, ঠিক সেই সময় সোমা নিজ হাতে পবিত্র কোরআন লিখতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সে মাত্র ৮ মাসে নির্ভুলভাবে পুরো কুরআন মাজিদ হাতে লিখেছে। তার চোখ ধাঁধানো পবিত্র কোরআন হাতের লেখায় এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
সোমা আক্তারের বোন সুমি আক্তার জানান, আমার ছোট বোন সোমা ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত  মেধাবী। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি সুন্দর হাতের লেখার চর্চা ও বিভিন্ন ছবি অঙ্কন করতে পছন্দ করতো। সে আরবি ক্যালিওগ্রাফি আর্ট করতে পারে। সে নিজে নিজে আমপাড়া দেখে আরবি লেখা শিখেছে। এরপর মাত্র ৮ মাসে পুরো কোরআন হাতে লিখে ফেলেছে।
সোমা আক্তারের মা আছমা বেগম জানান, আমার মেয়ে এখন হাই স্কুলে পড়ে। তাকে মাদরাসা বা কোনো হুজুরের নিকট পড়াইনি। সে নিজের ইচ্ছায় ও চেষ্টায় মাত্র ৮ মাসে পুরো পবিত্র কোরআন লিখেছে। মেয়ের এরকম দৃষ্টিনন্দন কাজে আমি মা হিসেবে গর্বিত ও আনন্দিত।
উপজেলার মামুদপুর রসুলপুর হামিদিয়া সালাফিয়া ইয়াতিমখানা মাদরাসার হাফেজ আব্দুল হাকিম সরকার জানান-এটা যে কেউই  বিশ্বাস করতে চাইবে না যে, জীবনে মাদরাসা বা হুজুরের নিকট আরবি না শিখে বা না পড়েও একজন স্কুলছাত্রী মাত্র ৮ মাসে পুরো কোরআন হাতে লিখে সম্পন্ন করেছে। আমি তার হাতের লেখা পুরো কোরআন দেখেছি। কোথাও কোন ভুল নেই। শুধু দুই-এক স্থানে একটু সমস্যা ছিল। আমি সেগুলো তাকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম। সে সেগুলো ঠিক করে নিয়েছে। সে পবিত্র কোরআনের ৬টি কপি তৈরি করেছে। সেগুলোতে কোনোরকম ভুল নেই। তার হাতের লেখা কোরআন দেখলে মনে হবে না যে, এটা হাতে লেখা।
সোমা আক্তার জানান, আমি প্রথমে ক্যালিওগ্রাফি আর্ট করার চেষ্টা করতাম। সেগুলো দেখে আমার এক ভাই বলেছে, তোর (তোমার) হাতের লেখা তো অনেক সুন্দর। তুই (তুমি) চেষ্টা করলে হাতে কোরআন লিখতে পারবি। ওই ভাইয়ের কথা মতো আমি পবিত্র কোরআন লেখা শুরু করি। এরপর দীর্ঘ ৮ মাসের চেষ্টায় আমি সফলভাবে কোরআন লিখতে পেরেছি। আমি কোনো মাদরাসা বা শিক্ষকের নিকট আরবি লেখা শিখিনি। নিজের চেষ্টায় কোরআন দেখে দেখে লেখা শিখেছি। কারণ আমার পিতা একজন দিনমজুর। আমাদের সে রকম কোনো সামর্থও নেই। পৃথকভাবে হুজুর বা শিক্ষকের নিকট গিয়ে প্রাইভেট পড়ার। আমার হাতের লেখা কোরআন দেখে একজন সৌদি প্রবাসী ভাই ৬টি কোরআনের অর্ডার করেছেন। ইতিমধ্যেই আমি সেগুলো তৈরি করেছি। আমি আরও কিছু হাতে লেখা কোরআন মসজিদ, মাদরাসা ও ইয়াতিমখানায় দান করার জন্য প্রস্তুত করছি। কেউ যদি আমার হাতের লেখা কোরআন মাজিদ নিতে চায় তাহলে, আমি লিখে দিতে পারবো।