ছিন্নমূল পরিবারের সন্তান শ্রীমতি ঊষারাণী (৬১)। বিয়ের কিছুদিন পরই হারিয়েছেন স্বামীকে। এরপর চোখে-মুখে নেমে আসে অন্ধকারের ছাপ। জীবনযুদ্ধে ছুটছিলেন জীবিকার সন্ধানে। এরই মধ্যে যোগ দেন একটি মিষ্টির দোকানে। ফুটপাতের এ দোকানেই ৪১ বছর ধরে গুড়ের জিলাপির কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। এক সময়ে দৈনিক পারিশ্রমিক পেতেন ৩ টাকা। এখন পাচ্ছেন ২০০ টাকা। এ দিয়ে বেঁচে থাকা এই নারীর।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের দিকে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর বাজারে দেখা যায় ঊষারাণীর জিলাপির তৈরীর দৃশ্য। এসময় চুলায় লাকড়ি জ্বালিয়ে আপন খেয়াল আর হস্তের তালে গুড়ের জিলাপি তৈরি করছিলেন তিনি।
শ্রীমতি ঊষারাণী গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের খামার বাগচি গ্রামের মৃত জগনাথ চর্ন্দের মেয়ে ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হাতিয়া গ্রামের মৃত সুবল চন্দ্রের স্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঊষারাণীর বয়স যখন ১৯ বছর, তখন তার বিয়ে হয়। এ বিয়ের এক বছর পরই কোলজুড়ে জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান। দাম্পত্য জীবনে চলছিল সুখের সংসার। এরই মধ্যে মারা যায় স্বামী সুবল চন্দ্র। কোলের শিশু সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় তাকে। নেই স্বামীর আর্থিক স্বচ্ছলতা। একেবারই থমকে যায় জীবন-জীবিকা। বাধ্য হয়ে আবারও বসবাস শুরু করেন পিতার বাড়ি সাদুল্লাপুরে। তখন বাবা জগনাথ চন্দ্রও দিন আনে দিন খায়। এমতাবস্থায় জীকার সন্ধানে কোলের শিশুকে নিয়ে ছুটতে হয় এদিক-সেদিক। ধীরে ধীরে বড়ো হতে থাকে সন্তানটিও।
একপর্যায়ে সাদুল্লাপুর বাজারের সাহেব উদ্দিন নামের একটি ফুটপাতের মিষ্টির দোকানে কাজ নেয় ঊষারাণী। সেখানে তৈরী করেন গুড়ের জিলাপি। সেই সময়ে মজুরী ছিল তার ৩ টাকা। কয়েক যুগ ধরে একই দোকানে কাজ করে চলেছেন তিনি। বর্তমানের মজুরী পান ২০০ টাকা। এর আগে তার একমাত্র মেয়ে শিল্পী রাণীকে অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে নিজস্ব জায়গা-জমি না থাকায় অন্যের জমিতে কোনমতে বসবাস করে আসছে। সারাদিন পরিশ্রম করে ঘরে ভালোভাবে ঘুমাবেন, সেটিও সম্ভব হয় না তার। এভাবে তরুণী বয়স থেকে স্বামীহারা হয়ে এখন বৃদ্ধা বয়স পর্যন্ত জীবনযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে ঊষারাণীর।
শহিদুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ভোক্তা বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখছি ঊষারাণী এই দোকানে গুড়ের জিলাপি তৈরি করে চলছেন। তার হাতের কারুকার্যে এই জিলাপি অনেকটা মুখরোচক। এই নারীকে কেউ সহযোগীতা করলে নিজেই একটি দোকান দিতে পারতেন।
সাদুল্লাপুর বাজারের মিষ্টির দোকানের বর্তমান মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের দোকানে জিলাপির কারিগর হিসেবে ৪১ বছর ধরে কাজ করে চলেছে ঊষারাণী। দিনমজুরী হিসেবে আগে পেয়েছিলেন ৩ টাকা, এখন দেয়া হয় ২০০ টাকা। এদিয়ে জীবনযাপন চলছে তার। আমার পুঁজি থাকলে নিজস্ব একটি মিষ্টির কারখানা করতাম।
অশ্রুজলে অসহায় এই শ্রীমতি ঊষারাণী বলেন, আমার একটি কন্যা সন্তান রেখে ৪১ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। এরপর নিরূপায় হয়ে পড়ি। তাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে এই দোকানে জিলাপির কারগর হিসেবে কাজ করছি। এখান দৈনিক ২০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই, তা দিয়ে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করছি।
এ বিষয়ে সাদুল্লপুরের কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ.আর.এম মাহফুজার রহমান রাশেদ বলেন, ঊষারাণীর ব্যাপারটি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট 



















