মো. রফিকুল ইসলাম: চিরিরবন্দর ও খানসামা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৪ আসন। আসনটি বেশির ভাগ সময় ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বদলে গেছে ভোটের সমীকরণ ও হিসাবনিকাশ। নয়া মেরূকরণে জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে দেশ নির্বাচনের ট্রেনে উঠেছে। আর আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে সরব। নির্বাচন জোটগত না দলগত হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধূম্রজাল। দলটির এক সময়ের সঙ্গী জামায়াত ইতিমধ্যে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে ভোটাররা হিসাবনিকাশ মেলাতে ব্যস্ত। এক শ্রেণির ভোটার দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে করছেন বিচার-বিশ্লেষণ। আরেক শ্রেণির ভোটার নির্বাচন নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তবে নির্বাচনে তারা ভোট দেবেন। নির্বাচনে জয়ী হতে নারী ভোটারের পাশাপাশি তরুণদের ভোট বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ভোটারদের একটা ভূমিকা থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এলাকাছাড়া। দিনাজপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। উপজেলা ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারাও এলাকাছাড়া। এ ছাড়াও কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর দলটির কোনো কার্যক্রম ও তৎপরতা নেই। আর এরইমধ্যে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের ঘণ্টা বেজে গেছে। নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ইতিমধ্যেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তৃণমূল নেতাও সাধারণ জনগণের সমর্থন পেতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। কেন্দ্রের সবুজ সংকেতের জন্য সিনিয়র নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। করছেন তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও জনসাধারণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়। ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। এ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে আলহাজ আখতারুজ্জামান মিয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক হুইপ মিজানুর রহমান মানুকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিএনপি’র প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দল তাকে পুনরায় ২০০৮ সালে ও ২০১৮ সালে মনোনয়ন দেয়। বিএনপিতে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। আখতারুজ্জামান মিয়া গণ-অভ্যুত্থানের আগ থেকেই দলীয় কার্যক্রমে তৎপর ছিলেন। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করাসহ ভোটারদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে নির্বাচনী কৌশলী প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে জেলার মধ্যে এ আসনটিকে বিএনপি’র ভোট ব্যাংক হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন, চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি এডভোকেট আব্দুল হালিম ও কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
এদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জামায়াতের রংপুর অঞ্চল টিম সদস্য, সাবেক জেলা আমীর ও চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আফতাব উদ্দিন মোল্লাকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে নিয়ে দলটি মাঠে সরব। রয়েছে প্রচারণায় ব্যস্ত। আফতাব উদ্দিন দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে পুরোদমে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি প্রতিনিয়ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হরিবাসর, লীলা ও মহানাম সংকীর্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ আসনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে জামায়াতের অমুসলিম শাখাও গঠন করা হয়েছে। দলটি ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি করে ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। অপরদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো কমিটিনির্ভর। পুরোপুরি কমিটির কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই। দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ইমামুর রশিদ, উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী সোহেল সাজ্জাদ বিভিন্নভাবে ছুটে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনী মাঠে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। জাতীয় পার্টির অবস্থা আরও শোচনীয়। এ ছাড়াও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন নদভী গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াতের নেতারা জানান, ভোটের মাঠে বিনা চ্যালেঞ্জে কেউ কাউকে ছেড়ে দেবেন না। সাধারণ মানুষ জানান, যদি বিএনপি-জামায়াত পৃথকভাবে নির্বাচন করে- সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সাধারণ, তরুণ ও নবীন ভোটাররা জানান- যিনি দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও সকল ধরনের বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আগামী দিনে উন্নয়নের নেতৃত্ব দেবেন এবং এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন এমন প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবেন।
মো. রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) 
























