কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ধনিরাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একেবারে নাকের ডগায় অবস্থিত কাঠের তৈরি সেতুটি ভেঙ্গে গেছে। ফলে নদী পাড়াপারে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন সেতুর আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজারও মানুষ। নদী পারাপারে তাদের ভরসা এখন ড্রামের ভেলা। এদিকে দীর্ঘদিন পর স্কুল খুললেও সেতু না থাকায় ভেলায় পারাপারে নদীতে ডুবে যাওয়ায় ভয়ে স্কুলে আসে না ধনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর অধিকাংশ শিক্ষার্থী।
স্থানীয়রা জানান, বছর চারেক আগে বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক সহযোগীতায় নীলকমল নদীর উপড় কাঠের সেতুটি নির্মিত হয়। সেতু নির্মাণের পর থেকেই ইউনিয়নটির ধনিরাম, বুড়ির চর, চরমেখলি, চর ধনিরাম, ঘোগারকুটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ সেতুটি ব্যবহার করে আসছেন। সেতুটি কাঠের হলেও এ গ্রামগুলির বাসিন্দাদের জীবনযাপনে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করছিল। গত আম্ফান তান্ডবে সেতুটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্থানীয়রা মিলে নড়বরে সেতুটি মেরামত করে আবার পারাপারের উপযোগী করে তোলেন। কিন্তু তাদের শত প্রচেষ্টাতেও সেতুটির শেষ রক্ষা হয়নি। পরের বছর বন্যার পানির স্রোতের তোড়ে সেতুর মাঝের অংশ ভেঙ্গে দ্বিখণ্ডিত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়েছে সেতুটি। বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে জনজীবন। এরপরে স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় পারাপারের জন্য ড্রামের ভেলা তৈরি হলেও শিশুদের জন্য তা ব্যবহার যোগ্য নয়। আর নদীতে ডুবে যাওয়ায় ভয়ে স্কুলে আসে না অনেক শিশু।

সেতু না থাকার ফলে ভোগান্তির শিকার মাইদুল ইসলাম(৩৫) বাবুল মিয়া (৩৮) শোভা রানী(৩৭) মায়া রাণী (৪৫) আব্দুল হাই(৬০) রহিমুল্ল্যাহ (৫৫) বলেন,নদীর ওপারের চরের জমিতে চাষাবাদ ও গবাদিপশু পালনে করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। চরে যাতায়তের একমাত্র ভরসা ছিল এই সেতুটি। সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে আমরা চরে উৎপাদিত ধান,গম, মিস্টি আলু, কলা,পাটসহ বিভিন্ন ফসল নদী পাড় করতে পারছি না। গবাদিপশু নিয়েও পরেছি বিপাকে। সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় চরের সাথে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে ফলে চরে কেউ অসুস্থ্য হলে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। যোগাযোগের সেতু না থাকায় এখানকার বিবাহ যোগ্য ছেলে মেয়েদের বিবাহ করতে চায় না অনেকেই।
সেতুটির অদুরে অবস্থিত ধনিরাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক দুলাল বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই নদী ওপাড়ের। তাদের পারাপারের জন্য সেতুটিই ছিল একমাত্র অবলম্বন। সেতু না থাকায় বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না। যারা আসে তাদের নিয়ে সব সময় চিন্তায় থাকি। পারাপারের সময় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে শিশুদের নদী পারাপার করি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জেনেছি সেতু না থাকায় তারা বাচ্চাদের স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। সেতুটি পুণঃনির্মাণ না হলে অনেক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অত্র অঞ্চলের বাসিন্দাদের শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, ব্যবসা বানিজ্য ও যাতায়তের একমাত্র অবলম্বন সেতুটি দ্রুত পুণঃ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
সারোয়ার আহমেদ শাওন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জাগো২৪.নেট, কুড়িগ্রাম 
























