শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাট কুড়িয়ে সংসার চালায় তারা

আমিনুল ইসলাম: হাট কুড়ানিদের দুঃখের কথা শুনতে যদি চাও, হাট শেষে গভীর রাতে হাট খোলাতে যাও। মশাল, কুপি বাতি, মিটি মিটি নিভু নিভু আলোয় কোমর হালিয়ে, কেউবা বসিয়ে দুহাত দিয়ে নোংরা আর্বজনায় খুঁজে খুঁজে টাকা-পয়সা বের করে।ছিন্নমূল পরিবারের এমন মানুষগুলোই হাট কুড়ানি নামে পরিচিত।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট এলাকার মানুষ ওইসব হাট কুড়ানি নামটির সাথে অনেকেই বেশ পরিচিত। তবে বর্তমান ডিজিটাল যুগে, এ প্রজন্মের অনেকেই এদেরকে চিনবে না। হাট শেষে হাটুরে এবং দোকানীদের মনের ভুলে ফেলে যাওয়া, টাকা পয়সা দ্রব্যসামগ্রী পই পই করে খুঁজে খুতিয়ে খুতিয়ে সংগ্রহ করাই এদের মূল পেশা। এ দিয়েই চলে তাদের সংসার।

সোমবার মধ্য রাতে ধাপেরহাট বন্দরে দেখা যায়, দরিদ্র ছিন্নমুল পরিবারের বেশ কিছু বয়স্ক নারী হাটে ফেলে রাখা বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়িয়ে ব্যাগ ভর্তি করছিলেন।

জানা যায়, বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের হাটগুলো রাত ১০-১১টার পর ফাঁকা হয়। ক্রেতা বিক্রেতারা হাট শেষে যখন চলে যায় নিজ নিজ বাড়িতে, ঠিক তখনি শুরু হয় এই হাট কুড়ানিদের কর্ম। তারা সারারাত হাট কুরায় আর দিনে ঘুমায়। তবে আগের মতো এ কাজে আর পোশায় না তাদের। এ আধুনিক যুগে খুচরা পয়সার প্রচলন কমে গেছে। নেই আর সেই আগের টাকা রাখার কাপড়ের খুতির ব্যবহার। মানুষ সচেতন হয়েছে। টাকা পয়সা সাবধানে রাখে। তাই আর মনের ভুলে ফেলেও যায় না। এমনি মতামত ব্যক্ত করেছেন হাট কুড়ানিরা।

হাট কুড়ানির কয়েকজন সদস্য জানান, আগে, সন্ধ্যার পর দোকানীরা মশাল কুপির আলোতে বেচা-বিক্রি করত। আলো কম থাকায় টাকা পয়সা মাটিতে পরে যেত। এখন বৈদ্যুতিক বাল্ব জালিয়ে রাতে দোকান চালায়, টাকা পয়সা আর আগের মতো মনের ফুলে ফেলে যায় না। ভালো ভাবে আলোতে দেখে শুনে গুছে নিয়ে যায়।

সোমবার ধাপেরহাট হাট খোলায়, রাত প্রায় সাড়ে ১১টা নিভু নিভু বেশ কয়েকটি আলো দেখা যায়। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা গেছে, দুজন হাট কুড়ানি শেফালি বেগম ও মাইয়া বেওয়ার সাথে কথা হয়।

এসময় শেফালী বেগম জানায়, তিনি দীর্ঘ ২৫-২৬ বছর থেকে হাট কুড়িয়ে সংসার চালায়। ১৫-২০ বছর আগে তারা মাঝে মধ্যেই মোটা অংকের টাকা পয়সা কুড়িয়ে পেত। এখন তেমনটা পাওয়া যায় না। এখন পাওয়া যায় মরিচ, পিয়াজ, আদা, আলু, বেগুনসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি। এসব দ্রব্য হাট শেষে কুড়িয়ে কুড়িয়ে একত্রে জমা করে পরিবারের যে টুকু খেতে লাগে সেটা রেখে বাকিটা বিক্রি করেন।

তিনি আরও বলেন, আগে কেরাসিনের কুপি বা মশাল জ্বালিয়ে হাট কুড়াতাম। এখন মশাল কুপি বাতি দুস্পাপ্য। তাই এখন হাট কুরাই টর্চ লাইট, ম্যাচ লাইট, কখনো গ্যাস বা চার্জার লাইট জালিয়ে।

অপর এক হাট কুরানি মাইয়া বেগম বলেন, মোর সোয়ামী (স্বামী) মারা গেছে প্রায় ১২ বছর আগে। সংসারে মোর ৪ জন ছেলে-মেয়ে আছে। মুই অনেক দিন থাকি হাট কুড়াও। এখন মানুষ জন মনের ভুলে আর পয়সা পাতি ফেলে যায়না। ২০ বছরের হাট কুড়ানোর জীবন। প্রায় ১৪ বছর আগে, মুই একবার সাড়ে ৮ হাজার ট্যাকা (টাকা) কুড়ে পাছিনু। এছাড়াও প্রতি হাটে মাঝে মধ্যেই ৫০, ৬০, ১০০, ২০০ করে টাকা কুড়ে পাওয়া যায়। কোনদিন আবার এর বেশিও পাওয়া যায়। তবে, খাদ্য সামগ্রীসহ অন্যান্য জিনিষপত্র পাওয়া যায়। এ দিয়েই চলে হামার সংসার।

তিনি আরও জানান, আমরা চুরি করিনা। কারও ক্ষতিও করিনা। মানুষের ফেলে যাওয়া জিনিষগুলি রাতের আধারে কুপি বাতি জালিয়ে খুঁজে বেড় করে সংসার চালাই। তাই হামাক হাট কুড়ানি হিসেবে চেনেন অত্রালাকার মানুষেরা।

ধাপেরহাটের হাট ইজারাদার ওয়াজেদ আলী মণ্ডল সাফী জাগো২৪.নেট-কে বলেন, আশপাশ এলাকার কিছু সংখ্যাক অসহায় বৃদ্ধা হাট শেষে রাতভর বিভিন্ন জিনিসপত্র খুঁজতে থাকে। এটাই তাদের পেশা। এ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কোন অভিযোগ নেই।

হাট কুড়িয়ে সংসার চালায় তারা

প্রকাশের সময়: ০৮:১৭:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

আমিনুল ইসলাম: হাট কুড়ানিদের দুঃখের কথা শুনতে যদি চাও, হাট শেষে গভীর রাতে হাট খোলাতে যাও। মশাল, কুপি বাতি, মিটি মিটি নিভু নিভু আলোয় কোমর হালিয়ে, কেউবা বসিয়ে দুহাত দিয়ে নোংরা আর্বজনায় খুঁজে খুঁজে টাকা-পয়সা বের করে।ছিন্নমূল পরিবারের এমন মানুষগুলোই হাট কুড়ানি নামে পরিচিত।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট এলাকার মানুষ ওইসব হাট কুড়ানি নামটির সাথে অনেকেই বেশ পরিচিত। তবে বর্তমান ডিজিটাল যুগে, এ প্রজন্মের অনেকেই এদেরকে চিনবে না। হাট শেষে হাটুরে এবং দোকানীদের মনের ভুলে ফেলে যাওয়া, টাকা পয়সা দ্রব্যসামগ্রী পই পই করে খুঁজে খুতিয়ে খুতিয়ে সংগ্রহ করাই এদের মূল পেশা। এ দিয়েই চলে তাদের সংসার।

সোমবার মধ্য রাতে ধাপেরহাট বন্দরে দেখা যায়, দরিদ্র ছিন্নমুল পরিবারের বেশ কিছু বয়স্ক নারী হাটে ফেলে রাখা বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়িয়ে ব্যাগ ভর্তি করছিলেন।

জানা যায়, বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের হাটগুলো রাত ১০-১১টার পর ফাঁকা হয়। ক্রেতা বিক্রেতারা হাট শেষে যখন চলে যায় নিজ নিজ বাড়িতে, ঠিক তখনি শুরু হয় এই হাট কুড়ানিদের কর্ম। তারা সারারাত হাট কুরায় আর দিনে ঘুমায়। তবে আগের মতো এ কাজে আর পোশায় না তাদের। এ আধুনিক যুগে খুচরা পয়সার প্রচলন কমে গেছে। নেই আর সেই আগের টাকা রাখার কাপড়ের খুতির ব্যবহার। মানুষ সচেতন হয়েছে। টাকা পয়সা সাবধানে রাখে। তাই আর মনের ভুলে ফেলেও যায় না। এমনি মতামত ব্যক্ত করেছেন হাট কুড়ানিরা।

হাট কুড়ানির কয়েকজন সদস্য জানান, আগে, সন্ধ্যার পর দোকানীরা মশাল কুপির আলোতে বেচা-বিক্রি করত। আলো কম থাকায় টাকা পয়সা মাটিতে পরে যেত। এখন বৈদ্যুতিক বাল্ব জালিয়ে রাতে দোকান চালায়, টাকা পয়সা আর আগের মতো মনের ফুলে ফেলে যায় না। ভালো ভাবে আলোতে দেখে শুনে গুছে নিয়ে যায়।

সোমবার ধাপেরহাট হাট খোলায়, রাত প্রায় সাড়ে ১১টা নিভু নিভু বেশ কয়েকটি আলো দেখা যায়। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা গেছে, দুজন হাট কুড়ানি শেফালি বেগম ও মাইয়া বেওয়ার সাথে কথা হয়।

এসময় শেফালী বেগম জানায়, তিনি দীর্ঘ ২৫-২৬ বছর থেকে হাট কুড়িয়ে সংসার চালায়। ১৫-২০ বছর আগে তারা মাঝে মধ্যেই মোটা অংকের টাকা পয়সা কুড়িয়ে পেত। এখন তেমনটা পাওয়া যায় না। এখন পাওয়া যায় মরিচ, পিয়াজ, আদা, আলু, বেগুনসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি। এসব দ্রব্য হাট শেষে কুড়িয়ে কুড়িয়ে একত্রে জমা করে পরিবারের যে টুকু খেতে লাগে সেটা রেখে বাকিটা বিক্রি করেন।

তিনি আরও বলেন, আগে কেরাসিনের কুপি বা মশাল জ্বালিয়ে হাট কুড়াতাম। এখন মশাল কুপি বাতি দুস্পাপ্য। তাই এখন হাট কুরাই টর্চ লাইট, ম্যাচ লাইট, কখনো গ্যাস বা চার্জার লাইট জালিয়ে।

অপর এক হাট কুরানি মাইয়া বেগম বলেন, মোর সোয়ামী (স্বামী) মারা গেছে প্রায় ১২ বছর আগে। সংসারে মোর ৪ জন ছেলে-মেয়ে আছে। মুই অনেক দিন থাকি হাট কুড়াও। এখন মানুষ জন মনের ভুলে আর পয়সা পাতি ফেলে যায়না। ২০ বছরের হাট কুড়ানোর জীবন। প্রায় ১৪ বছর আগে, মুই একবার সাড়ে ৮ হাজার ট্যাকা (টাকা) কুড়ে পাছিনু। এছাড়াও প্রতি হাটে মাঝে মধ্যেই ৫০, ৬০, ১০০, ২০০ করে টাকা কুড়ে পাওয়া যায়। কোনদিন আবার এর বেশিও পাওয়া যায়। তবে, খাদ্য সামগ্রীসহ অন্যান্য জিনিষপত্র পাওয়া যায়। এ দিয়েই চলে হামার সংসার।

তিনি আরও জানান, আমরা চুরি করিনা। কারও ক্ষতিও করিনা। মানুষের ফেলে যাওয়া জিনিষগুলি রাতের আধারে কুপি বাতি জালিয়ে খুঁজে বেড় করে সংসার চালাই। তাই হামাক হাট কুড়ানি হিসেবে চেনেন অত্রালাকার মানুষেরা।

ধাপেরহাটের হাট ইজারাদার ওয়াজেদ আলী মণ্ডল সাফী জাগো২৪.নেট-কে বলেন, আশপাশ এলাকার কিছু সংখ্যাক অসহায় বৃদ্ধা হাট শেষে রাতভর বিভিন্ন জিনিসপত্র খুঁজতে থাকে। এটাই তাদের পেশা। এ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কোন অভিযোগ নেই।