জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ার সংকল্পের কথা জানিয়ে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেছেন, সারা পৃথিবী যেখানে দক্ষতা অর্জনের জন্য শ্রম, সময়, অর্থ ব্যয় করে চলেছে অথচ আমরা দক্ষতা ছাড়া আর সবকিছুর দিকে লক্ষ্য রেখেছি। দক্ষতা শব্দটিকে আমরা খুব অবহেলা করে চলেছি। তাই আমাদের লক্ষ্য হবে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। নজরুল বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর যেন কোন ছেলে-মেয়ে বেকার না থাকে সেটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
সোমবার (৯ মে) সকালে বিশ^বিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চে ১৭ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে দু’দিনব্যাপী আয়োজিত প্রথম দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার চিন্তা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য নয় বরং পরিপূর্ণভাবে উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মধ্যদিয়ে যুগের সাথে তাল মেলানোর জন্য দক্ষতা অর্জনের জন্য। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারের সেই অভিযাত্রায় আমরা নজরুল বিশ^বিদ্যালয় সহমত পোষণ করে সেই অভিযাত্রায় শামিল হয়েছি।
বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, আমরা জানি শিক্ষা আলো। কিন্তু সে শিক্ষা তখনি আলো হবে যখন তা অর্জন করে প্রয়োজনীয়ভাবে ব্যবহারের দক্ষতা থাকবে। দক্ষতা না থাকলে শিক্ষা লাইব্রেরি ভবনের বুক সেল্ফের বইয়ের মলাটেই আবৃত থেকে যাবে। তাই কম্পিউটারে যেমন হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার থাকে তেমনি সেটি ব্যবহারের জন্য দক্ষ অপারেটর থাকতে হবে। ঠিকভাবে কাজ করার এই দক্ষ অপারেটর আমাদের তৈরি করতে হবে। আমাদের ছোট্ট একটি ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাসকে একটি স্মার্ট বিশ^বিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য দরকার দক্ষ জনবল তৈরি করা। শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন এই তিনটি লক্ষ্য নিয়ে আমরা আমাদের অভিযাত্রা শুরু করেছি। আমাদের শুধু যার যা কাজ সেটি করলেই আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাবো। সেজন্য আসুন আমরা দক্ষতা অর্জন করি। আসুন আমরা একসাথে এই বিশ^বিদ্যালয়টিকে গড়ে তুলি।
বিশ^বিদ্যালয় দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে না নিয়ে আসতেন তাহলে আমরা কাজী নজরুলকে কখনো বাংলাদেশে পেতাম কী না সেটিই প্রশ্ন সাপেক্ষ। তিনি নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে এনেছিলেন দেখে হয়ত আজ আমরা এই ত্রিশালে কবির নামে একটি বিশ^বিদ্যালয় পেয়েছি। তাই আজ বিশ^বিদ্যালয় দিবসে শ্রদ্ধাভরে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি।
বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে সুনজর দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন উপাচার্য। নজরুল বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছেন, ত্রিশালে জাতীয় কবির নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় শুরুর দিককার ভাবনায় যারা কথা বলেছিলেন, লেখালেখি করেছিলেন তাদের সকলকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর।
আয়োজক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. আহমেদুল বারীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ট্রেজারার প্রফেসর মো. জালাল উদ্দিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. শেখ সুজন আলী, বঙ্গবন্ধু নীল দলের আহবায়ক প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী মো. জোবায়ের হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। আরও বক্তব্য দেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু, কর্মচারী সমিতি (গ্রেড১১-১৬) সভাপতি সাকিব মিয়া, কর্মচারী ইউনিয়ন (গ্রেড ১৭-২০) সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক হীরক মুশফিক।
এর আগে সকালে দিবসটি শুরু হয় জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে। এসময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের নেতৃত্বে বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সকল শ্রেণী-পেশার সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় আনন্দ র্যালি। বাদক দলের বাজনার তালে র্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে গাহি সাম্যের গান মঞ্চে এসে শেষ হয়। সেখানে বিশ^বিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে কেক কাটা হয়। এছাড়া দিবসটি জাকজমক করে তুলতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ব্যানার, তোরণ স্থাপন করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে করা হচ্ছে আলোকসজ্জা। দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে আগামী ১১ মে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন। এসময় তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তাঁর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত থাকবেন ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) এর সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মো. রুহুল আমীন মাদানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. কাউসার আহাম্মদ।
উল্লেখ্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্রোহী কবির নামে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র বিশ^বিদ্যালয়। কবি নজরুল নামাপাড়া গ্রামের যে বট গাছের নিচে বাঁশি বাজাতেন সেই বটতলার কাছেই ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বর সাথে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা, বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক জ্ঞান চর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের রূপকল্প নিয়ে কাজ করছে। চারটি বিভাগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরু করা হলেও এখন বিভাগের সংখ্যা ২৪।
স্টাফ করেসপন্ডেন্টে, জাগো২৪.নেট 






















