গো খাদ্যের সংকট ও কম খরচে বেশি লাভ ও গবাদি পশু পালনের প্রধান খাদ্য হিসেবে ঘাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়াই জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বাণিজ্যিক ভাবে নেপিয়ার ঘাষ চাষে ঝুঁকছে কৃষক। অপরদিকে নেপিয়ার ঘাস চাষ করে নিজের গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেনে। কৃষকেরা বলছেন, সার তেলসহ কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়াই অন্যান্য ফসল চাষাবাদে উৎপাদন খরচই যেখানে উঠছে না, সেখানে নেপিয়ার ঘাস চাষে খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়াই এ ঘাস চাষ করছেন তারা। তাদের হিসাব মতে প্রতি বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাষ চাষে সার, পানি ও অন্যান্য খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। সেই ঘাষ বিক্রি হয় ১লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকা। নেপিয়ার ঘাস জমিতে একবার ঘাস রোপন করলে বছরে ৭/৮ বার সেই ঘাস কর্তন করা যায়। প্রতি বিষায় একবার কর্তন করা ঘাস ১৫ ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের ঘোড়াপা গ্রামের ঘাস চাষী সুলতান মাহমুদ বলেন, বর্তমানে মাঠে গরুর কোন ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। বিগত ইরি মৌসুমে বিরুপ আবহাওয়ার কারণে ধানের খড় বাড়ীতে তোলা সম্ভব হয়নি। বাজারেও খড়ের দাম অনেক। তাই বাধ্য হয়ে হয়ে নিজের জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছি। নিজরে গরুর খাদ্যে চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে লাভবানও হচ্ছি।
উপজেলা নন্দইল গ্রামের ঘাস চাষী তারিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ধান সহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদে অনেক খরচ হচ্ছে। উৎপাদন খরচ তোলাই মুস্কিল। কিন্তুু নেপিয়ার ঘাস চাষে অনেক লাভ। আবার আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে অন্যান্য ফসলের মত ঘাসের ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি এবার ২ একর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছি। খরচ বাদে প্রায় থেকে ৭লক্ষ টাকা লাভ হবে।
এদিকে গো-খাদ্যের সংকটের কারণে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও বড় বড় খামারীদের খামারের নেপিয়ার ঘাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও পাইকারী দরে কৃষকদের নিকট থেকে ঘাস ক্রয় করে বিভিন্ন জেলার খামারীদের মাঝে বিক্রি করে তারাও লাভবান হচ্ছেন। ঘাস ব্যবসায়ী আঃ হামিদ বলেন, ১৫/২০ হাজার টাকা দিয়ে এক বিঘা জমির ঘাস ক্রয় করে সেগুলো বিভিন্ন জেলার খামারীদের মাঝে বিক্রি করা হয়। তাতে যা লাভ হয় তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলে। তিনি আরো বলেন, খামারিদের মাঝে যেভাবে নেপিয়ার ঘাসের চাহিদা, সেই তুলনায় মাঠে কৃষকের নিকট থেকে ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে এবার উপজেলায় ৫৫ হেক্টর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষাবাদ হয়েছে।
এ উপজেলা দিনদিন নেপিয়ার ঘাস বৃদ্ধি পাওয়াই প্রতিবছর উন্নত জাতের ঘাস চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে জানিয়ে এ প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ নেয়াজ কাযমির বলেন- আগে মাঠে গরু-ছাগলকে মাঠে চলাফেরা করে ঘাস খাওয়ানো হত। বর্তমানে ক্রস জাতের গুরু পালনে আগ্রহী হওয়ায় কারণে সেখানে গরুকে দিনে কমপক্ষে ১৫/২০ কেজি কাঁচা খাওয়া উচিত। সেই কারণে আমরা প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে খামারীদের মাঝে হাব্রিট পাচং জাতের নেপিয়ার ঘাস চাষে উৎসাহিত করছি। পাশাপাশি আগ্রহী খামারী ও কৃষকদের ঘাস চাষে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
মোঃ মাসুদ পারভেজ রানা, করেসপন্ডেন্ট, জাগো২৪.নেট, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) 



















