শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভেড়া পালন ও সবজি চাষে দিনবদলের স্বপ্ন চরবাসীর

তোফায়েল হোসেন জাকির : নদীবেষ্টিত গাইবান্ধায় জেগে ওঠেছে শতাধিক চর। এখানকার অধিকাংশ পরিবার দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস। তবে চরাঞ্চলের ভূমিতে কৃষি অর্থনীতি উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনও শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে উন্নত জাতের ভেড়া পালন ও শাক-সবজি উৎপাদন করে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

সম্প্রতি গাইবান্ধার জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার বেশ কিছু চরাঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার দরিদ্র নারীরা ঝুঁকে পড়ছে ভেড়া পালন ও শাক-সবজি উৎপাদনে। ফ্রেণ্ডশিপ নামের বেসরকারি উন্নয়ন একটি সংস্থার অর্থায়নে চরাঞ্চলবাসীর স্বাবলম্বী করতে কাজ করছে।

স্থানীয়রা জানায়, চরাঞ্চলের জমি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সেই সঙ্গে চরের পরিবেশে ভেড়া পালনের জন্য উপযোগী হওয়ায় চরবাসীদের জন্য কাজ করছে ‘ফ্রেণ্ডশিপ’ সংস্থা। ওই তিন উপজেলার দুই শতাধিক দরিদ্র মানুষকে বিভিন্ন সবজি বীজ ও ভেড়া সরবরাহ করে। যাতে সুবিধাভোগীরা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হতে পারে। এতে এএসডি প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত চরবাসীদের মাঝে ফ্রেণ্ডশিপ বিভিন্ন সবজি ও উচ্চ জাতের মানসম্পন্ন বীজ বিতরণ করেছে।

এরআগে, ক্লাইমেট অ্যাকশন সেক্টরের অধীনে এএসডি প্রকল্পের উদ্যোগে উপকারভোগীদের সফল সবজি চাষ এবং ভেড়া পালনের উপর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

এ প্রকল্প থেকে সহায়তা প্রাপ্তির পর সুবিধাভোগীরা তাদের নিজ নিজ বসতভিটাতে সবজি চাষ এবং প্রকল্প কর্মকর্তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চরের জমিতে ভেড়া পালনে মনোযোগ দেন এবং সফল হন। যার ফলে সবজি চাষ ও ভেড়া পালন থেকে অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জন করছে এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন শুরু করেছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর মাদারবাড়ির নারী সুবিধাভোগী মতিজান বেগম জানান, তার পরিবারের অন্য ৫ সদস্যের সঙ্গে তিনি কষ্টে দিনাতিপাত করছিলেন। তার স্বামী দিনমজুর অর্থাৎ দিন আনে দিন খেতেন। এ অবস্থায় ওই প্রকল্পের সহায়তায় নিজের বসতভিটাতে সবজি চাষ ও খোলা চরে ভেড়া পালন শুরু করেন। ধীরে ধীরে একটি ভেড়া থেকে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬টি। এর মধ্যে চারটি ভেড়া বিক্রি করে তিনি অর্থনৈতিক লাভবান হয়েছেন।

আনজুমান আরা বেগম নামের আরেক সুবিধাভোগি জানান, অন্যান্য সুবিধাভোগীদের মতো তিনিও প্রকল্প থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দামের একটি ভেড়া ও ষোল জাতের সবজির বীজ পেয়েছেন। চরের জমিতে ভেড়া পালন এবং বসতবাড়িতে সবজি চাষের পর ভেড়ার সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি বসতভিটাতেও ব্যাপক হারে লাউসহ সবজি চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন ভেড়ার দাম দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার টাকা।

তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রি করেও ২৪ হাজার টাকা আয় করছি। উপার্জিত অর্থ সংকটময় সময়ে অর্থনৈতিক সমস্যা ছাড়াই পারিবারিক ব্যয় বহন করতে সহায়তা করবে।

এ বিষয়ে এএসডি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম মল্লিক বলেন, মতিজান এবং অনজুমানের মতো আরও অনেক নারী ফ্রেণ্ডশিপের প্রকল্প দ্বারা আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার পরে লাভবান হচ্ছেন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের সর্বাত্নকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

জনপ্রিয়

ভেড়া পালন ও সবজি চাষে দিনবদলের স্বপ্ন চরবাসীর

প্রকাশের সময়: ০২:২৯:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০২২

তোফায়েল হোসেন জাকির : নদীবেষ্টিত গাইবান্ধায় জেগে ওঠেছে শতাধিক চর। এখানকার অধিকাংশ পরিবার দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস। তবে চরাঞ্চলের ভূমিতে কৃষি অর্থনীতি উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনও শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে উন্নত জাতের ভেড়া পালন ও শাক-সবজি উৎপাদন করে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

সম্প্রতি গাইবান্ধার জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার বেশ কিছু চরাঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার দরিদ্র নারীরা ঝুঁকে পড়ছে ভেড়া পালন ও শাক-সবজি উৎপাদনে। ফ্রেণ্ডশিপ নামের বেসরকারি উন্নয়ন একটি সংস্থার অর্থায়নে চরাঞ্চলবাসীর স্বাবলম্বী করতে কাজ করছে।

স্থানীয়রা জানায়, চরাঞ্চলের জমি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সেই সঙ্গে চরের পরিবেশে ভেড়া পালনের জন্য উপযোগী হওয়ায় চরবাসীদের জন্য কাজ করছে ‘ফ্রেণ্ডশিপ’ সংস্থা। ওই তিন উপজেলার দুই শতাধিক দরিদ্র মানুষকে বিভিন্ন সবজি বীজ ও ভেড়া সরবরাহ করে। যাতে সুবিধাভোগীরা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হতে পারে। এতে এএসডি প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত চরবাসীদের মাঝে ফ্রেণ্ডশিপ বিভিন্ন সবজি ও উচ্চ জাতের মানসম্পন্ন বীজ বিতরণ করেছে।

এরআগে, ক্লাইমেট অ্যাকশন সেক্টরের অধীনে এএসডি প্রকল্পের উদ্যোগে উপকারভোগীদের সফল সবজি চাষ এবং ভেড়া পালনের উপর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

এ প্রকল্প থেকে সহায়তা প্রাপ্তির পর সুবিধাভোগীরা তাদের নিজ নিজ বসতভিটাতে সবজি চাষ এবং প্রকল্প কর্মকর্তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চরের জমিতে ভেড়া পালনে মনোযোগ দেন এবং সফল হন। যার ফলে সবজি চাষ ও ভেড়া পালন থেকে অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জন করছে এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন শুরু করেছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর মাদারবাড়ির নারী সুবিধাভোগী মতিজান বেগম জানান, তার পরিবারের অন্য ৫ সদস্যের সঙ্গে তিনি কষ্টে দিনাতিপাত করছিলেন। তার স্বামী দিনমজুর অর্থাৎ দিন আনে দিন খেতেন। এ অবস্থায় ওই প্রকল্পের সহায়তায় নিজের বসতভিটাতে সবজি চাষ ও খোলা চরে ভেড়া পালন শুরু করেন। ধীরে ধীরে একটি ভেড়া থেকে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬টি। এর মধ্যে চারটি ভেড়া বিক্রি করে তিনি অর্থনৈতিক লাভবান হয়েছেন।

আনজুমান আরা বেগম নামের আরেক সুবিধাভোগি জানান, অন্যান্য সুবিধাভোগীদের মতো তিনিও প্রকল্প থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দামের একটি ভেড়া ও ষোল জাতের সবজির বীজ পেয়েছেন। চরের জমিতে ভেড়া পালন এবং বসতবাড়িতে সবজি চাষের পর ভেড়ার সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি বসতভিটাতেও ব্যাপক হারে লাউসহ সবজি চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন ভেড়ার দাম দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার টাকা।

তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রি করেও ২৪ হাজার টাকা আয় করছি। উপার্জিত অর্থ সংকটময় সময়ে অর্থনৈতিক সমস্যা ছাড়াই পারিবারিক ব্যয় বহন করতে সহায়তা করবে।

এ বিষয়ে এএসডি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম মল্লিক বলেন, মতিজান এবং অনজুমানের মতো আরও অনেক নারী ফ্রেণ্ডশিপের প্রকল্প দ্বারা আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার পরে লাভবান হচ্ছেন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের সর্বাত্নকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।