মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ০২:১১ অপরাহ্ন

বোরো ধান চাষাবাদ গাইবান্ধার কৃষকদের বাড়তি খরচ হবে শত কোটি টাকা

তোফায়েল হোসেন জাকির, জাগো২৪.নেট
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩

তোফায়েল হোসেন জাকির: চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধার শুরু হয়েছে চারা রোপনের কাজ। তবে এ কাজের শুরুতে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, ডিজেল, সার-কিটনাশকের দাম বেড়েছে। যার ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো আবাদে প্রায় ১০০ কোটি টাকার উর্দ্ধে বাড়তি খরচ হবে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।

সরেজমিনে গাইবান্ধার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, কৃষকদের বোরো চাষাবাদের ব্যস্ততা। শীতকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে কাঁদা মাটিতে রোপন করছে ধানের চারা। অন্যান্য বছরে এই চাষাবাদের সময় তাদের মুখে হাসি দেখা গেলেও এ বছর রয়েছে মলিন মুখে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, ডিজেল, সার-কিটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর বোরো আবাদের অতিরিক্ত খরচে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, গত বছর বোরো মৌসুমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এ বছরে ১ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৪৫ ভাগ। লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া ওইসব কৃষকের জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎ চালিত গভীর সেচযন্ত্র ২৩৯ টি, অগভীর ৩ হাজার ৫০টি, ডিজেল চালিত অগভীর ২ হাজার ৯৩২ টি, এলএলপি বিদ্যুৎ ১৭ ও সোলার সেচযন্ত্র রয়েছে ৩৩ টি। এসব যন্ত্র দিয়ে বোরো চাষিদের সেচের চাহিদা মেটানো হবে।

কৃষক জহির উদ্দিন জানান, গত বোরো মৌসুমে ১ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করছিলেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছিল ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তা হেক্টর প্রতি ৯০ হাজার টাকার বেশী খরচ হতে পারে। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদের অতিরিক্ত খরচ নিয়ে চরম হিমসিম খাচ্ছেন। কারণ গত বছরে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র মালিককে হেক্টর প্রতি সেচভাড়া দিয়েছিলেন ১২ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু এ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়া সেটি মেশিন মালিক ১৭ হাজার ৩০০ টাকা নিধারণ করেছে। তিনি আরও বলেন, শুধু বিদ্যুতের দামই নয়, সম্প্রতি বীজ, সার-কিটনাশক শ্রমিকের দামও বেড়েছে অনেকটাই। এজন্য সবমিলে এ বছরে হেক্টর প্রতি অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

আরেক কৃষক জলিল উদ্দিন বলেন, প্রত্যেক বছরে বোরো ফসল ঘরে নিয়ে আমার পরিবারের চাহিদা পুরণ করি। কিন্তু এ বছরে সেই কাঙ্খিত আবাদ করা নিয়ে হতাশায় পড়েছি। বোরো আবাদের সবকিছুর উপকরণের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে সার সংকট, বিদ্যুতের লোডসেডিং ও প্রাকৃতি দুর্যোগের প্রভাব পড়লে লোকসানের হিসাব কষতে হবে।

বিদ্যুৎ চালিত অগভীর সেচযন্ত্রের মালিক জামাত আলী বলেন, গত বোরো মৌসুমে গৃহস্থদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ১ হাজার ৬৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ বছরের বিদ্যুৎ ও যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে সেচভাড়াও বেশী নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনও বিদ্যুতের নতুন বিল হাতে পাওয়া যায়নি।

গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিমুল হাসান বলেন, সেচ কার্যে কৃষকের কিছুটা খরচ বাড়লেও তাদের লোকসান হবে না। তাদের ফলন বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। জেলা কৃষি সসম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, বোরো আবাদে কৃষকদের লাভবান করতে ইতোমধ্যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় সমলয় পদ্ধিতে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলে অনেকটাই লাভবান হবেন।

 

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট

কারিগরি সহায়তায় : শাহরিয়ার হোসাইন