তোফায়েল হোসেন জাকির: চলতি বছরের শুরুর দিকে অস্থির পণ্য বাজারে গাইবান্ধায় সচরাচল স্থিতিশীল ছিল আলুর দাম। এখন দফায় দফায় বাড়ছে সেই আলুর দাম। গত তিনদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি আলুর দাম ১০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। এমন পরিস্থিতিতে আলুও যেন ভোক্তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে হঠাৎ করে আলুর মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি গাইবান্ধার পুরাতন বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা গেছে- আলুর ঊর্ধ্বগতি দামের চিত্র। অগ্নিমূল্য নিত্যপণ্যের বাজার তালিকায় হুহু করে যুক্ত হয়েছে আলু। খাবার প্লেটে প্রধান সবজি ওই আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস হয়ে ওঠেছেন ভোক্তারা। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় ভোক্তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে বোবা কান্না।
এই আলুর দামবৃদ্ধির কারণ খোঁজার চেষ্টা করা হলে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বছর জেলার কোল্ড স্টোরগুলোতে পর্যাপ্ত আলু থাকার পরও অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে কেউ বলেছেন অন্যান্য পণ্যের দামবৃদ্ধির প্রভাব, আবার কেউ বলেছেন বাড়তি চাহিদার কথা। এছাড়া সিন্ডিকেটের আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তাই কৃত্রিম সংকট দেখিও আলুর দাম বাড়ছে বলে ভোক্তাদের অভিযোগ।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যেমতে- ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জেলায় ১০ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়। এ থেকে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন। আর বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫৯ মেট্রিকটন। চাহিদাকৃত এসব আলু ছাড়াও জেলার ৫টি কোল্ড স্টোরে আরও মজুদ আছে ২০ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন আলু।
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, মৌসুম চলাকালে ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনে বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করেছে। এখন চাহিদার তুলনায় সেই আলুর বস্তাগুলো হিমাগার থেকে বের না করায় আলুর দাম হু-হু করে বাড়ছে। এতে করে চরম ক্ষব্ধ হচ্ছে ক্রেতারা।
গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজারে আলু কিনতে আসা সাদেকুল ইসলাম বলেন, তরকারির মধ্যে আলুই হচ্ছে প্রধান সবজি। দৈনন্দিন খাবারের সাথে এটি কমবেশি থাকে। এর আগে আলু ছাড়া সব ধরণের সবজির দামবৃদ্ধি হয়। কিন্তু সেই বৃদ্ধির তালিকায় দিনদিন যোগ হচ্ছে আলুও। বর্তমানে বিভিন্ন জাতের আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।
এছাড়া আলুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতকালীন সবজির দামও। বর্তমানে প্রতিকেজি সিম ১১০ থেকে ১২৫ টাকা, মূলা ৫০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা ফুলকপি ৫০ টাকাম বাঁধাকপি ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বটবটি ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১৬০ ও লাউ প্রতি পিস (প্রকার ভেদে) ৪০ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
আরেক ক্রেতা নুরুল ইসলাম আকন্দ জাগো২৪.নেট-কে বলেন, দিনমজুর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার ৫ সদস্যের হাড়িতে প্রত্যেকদিন অন্তত ১ কেজি আলুর চাহিদা রয়েছে। এখন দাম বাড়ার কারণে অর্ধ কেজি করে আলু কেনা হচ্ছে। এভাবে সব ধরণের নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধির ফলে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ছে। এ যেন মড়ার ওপর খড়ার ঘা।
খুচরা বিক্রেতা লাল মিয়া জাগো২৪.নেট-কে বলেন, এ বছরের শুরুতে আলুর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে ছিল। তখন প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায় । এখন ধীরে ধীরে বেড়ে সেই আলু বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এরই মধ্যে আড়তে বেশী দামে আলু কেনার ফলে কিছুটা লাভ রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। হঠাৎ এই আলুর মূল্যবৃদ্ধির কারণে অস্থির হয়ে ওঠেছেন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
সাদুল্লাপুর বাজাররের মমিন আড়তের অদু ব্যাপারী জাগো২৪.নেট-কে বলেন, গাইবান্ধার ধাপেরহাট হিমাগার থেকে আলুর বস্তা ক্রয় করা হচ্ছে। সেখানে প্রচুর আলু রয়েছে। তার পরও কোন কারণ ছাড়াই আলুর দাম বেশি নিচ্ছে। তাই পাইকারী ও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
ধাপেরহাট আরভি কোল্ড স্টোরের ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম জাগো২৪.নেট-কে বলেন, এই হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু মজুদ আছে। ইদানিং আলুর দামবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা অনিয়মিত আলু বের করছেন।
গাইবান্ধা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুস ছালাম জাগো২৪.নেট-কে বলেন, কেউ যেন অতিরিক্ত দামে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করতে না পারে, সে বিষয়ে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।
তোফায়েল হোসেন জাকির, জাগো২৪.নেট 
























