মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এখনো অব্যাহত রয়েছে। চলমান বিক্ষোভে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। এরমধ্যে টানা অষ্টম দিনেও রাজপথে নেমেছেন দেশটির মানুষ। গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রতিবাদকারীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
গতকাল দেশটির বাণিজ্যিক কেন্দ্র ইয়াঙ্গুনে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভে নেমেছেন। রাজধানী নেপিদো, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় ও অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভ করছেন অভ্যুত্থানবিরোধীরা। গত কয়েক দিনে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদও করছেন অনেকে। ইয়াঙ্গুনে একটি প্ল্যাকার্ডে স্লোগান লেখা হয়েছে, রাতে অপহরণ বন্ধ করো।
সামরিক সরকার ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রায় ৩০০ এমপি। জাতিসংঘকে এ লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে এই এমপিরা অভিযোগ করে বলেছেন, ‘মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।’ এর আগে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার দূত বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর তাজা বুলেট ব্যবহারের প্রমাণ আছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। রাজপথে নেমে আসছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভ দমনে পুলিশও কঠোর হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সেনা অভ্যুত্থানের দিনেই নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিসহ ঊর্ধ্বতন নেতাদের গ্রেপ্তারের পর বহু বিক্ষোভকারীকেও আটক করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর ৩৫০ জনের বেশি কর্মকর্তা, অ্যাক্টিভিস্ট ও বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত কয়েকজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। সামরিক সরকারের সমর্থক একজন চিকিৎসকের গ্রেপ্তারের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। এ চিকিৎসক সেনা সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাতের অন্ধকারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককে।
বন্দিদের নিয়ে কাজ দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান রক্তপাতহীন হলেও গণবিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগ করছে জান্তা। বিক্ষোভে পুলিশ প্রথমে জলকামান এবং পরে রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। গত মঙ্গলবার এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়। ওইদিনই প্রথম বিক্ষোভে রক্ত ঝরেছে। রাজধানী নেপিডোর বিক্ষোভে মাথায় গুলিবিদ্ধ নারীর চিকিৎসা যে হাসপাতালে হয়েছে সেখানকার এক চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, এক্স-রে রিপোর্ট অনুযায়ী ওই নারীর মাথায় ‘তাজা গুলিবিদ্ধ হয়েছে’। রাবার বুলেট বিদ্ধ আরও তিনজনের চিকিৎসা চলছে।
এছাড়াও, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাতে চিকিৎসা পেশায় জড়িতদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে এবং আন্দোলনে জড়িত থাকা নিয়ে তাদের জেরা করা কিংবা আটক করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফেসবুকে শেয়ার হওয়া কয়েকটি ভিডিওতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর বচসার দৃশ্যও দেখা গেছে।
জাগো২৪.নেট, আন্তর্জাতিক ডেস্ক 

























