মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চুরমার মায়ের স্বপ্ন

তোফায়েল হোসেন জাকির: দরিদ্র পরিবারের সন্তান নাজমুল হোসেন (২৫)। তার রিকশাচালক বাবা হামিদুল ইসলাম হাইদুল এক বছর আগে মারা গেছেন। তখন মা গোলেনুর বেগম ঠিকভাবে সংসার চালাতে পারছিলেন না। এ পরিস্থিতিতে সংসারের হাল ধরেন নাজমুল। শুরু করেন গার্মেন্টসের চাকরি। এরই মধ্যে দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে। এই আন্দোলনে নাজমুলও অংশগ্রহণ করেন। সেখানই পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি। এরপর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নাজমুল।

নিহত নাজমুল ইসলামের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে। খোঁজ নিতে বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালের দিকে ওই বাড়িতে যাওয়া হয়। সেখানে দেখা যায় – নাজমুলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছেন মা গোলেনুর। ছেলে হারানোর শোক আর সংসার চালানোর চিন্তায় যেন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে তার। কান্না করতে করতে হঠাৎ মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। কোনোভাবেই থামাছে না এই মায়ের আর্তনাদ। এমনভাবে ছেলের লাশ দেখতে হবে তা কখনও ভাবেননি তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জীবিকার তাগিদে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করছিলেন নাজমুল হোসেন। সারাদেশ যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে উত্তাল, তখন নাজমুল হোসেনও এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরই মধ্যে গত ৪ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন নাজমুল। সেই গুলি ঢুকে তার পেটের ভেতর। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যার পর মারা যায় নাজমুল। এরপর ধার-দেনা করে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এরপর সোমবার (১২ আগস্ট) গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক শোকাহত পরিবারটিকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। এই টাকা দিয়ে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) শহীদ নাজমুল হোসেনের রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করে স্বজনরা।

নিহত নাজমুল হোসেনের মা গোলেনুর বেগম কান্নাজড়ি কণ্ঠে বলেন, আমার চার শতক বসতভিটা ছাড়া আর কোনো সহায়-সম্বল নেই। একমাত্র ছেলে ছিল নাজমুল। বাবাহারা দু’মেয়েকে অতি কষ্টে বিয়ে দিয়েছি। স্বপ্ন ছিল- ছেলেটা চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরাবে। এরই মধ্যে ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এখন আমার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। এখন কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করব, সেই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে।

তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রাষ্ট্রীয় মার্যাদা দিতে হবে। তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়াসহ সহযোগিতা করতে হবে। তবে এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, নিহত নাজমুল হোসেনের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতেও পরিবারটির খেয়াল রাখা হবে।

জনপ্রিয়

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চুরমার মায়ের স্বপ্ন

প্রকাশের সময়: ০৬:৪৫:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৪

তোফায়েল হোসেন জাকির: দরিদ্র পরিবারের সন্তান নাজমুল হোসেন (২৫)। তার রিকশাচালক বাবা হামিদুল ইসলাম হাইদুল এক বছর আগে মারা গেছেন। তখন মা গোলেনুর বেগম ঠিকভাবে সংসার চালাতে পারছিলেন না। এ পরিস্থিতিতে সংসারের হাল ধরেন নাজমুল। শুরু করেন গার্মেন্টসের চাকরি। এরই মধ্যে দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে। এই আন্দোলনে নাজমুলও অংশগ্রহণ করেন। সেখানই পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি। এরপর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নাজমুল।

নিহত নাজমুল ইসলামের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে। খোঁজ নিতে বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালের দিকে ওই বাড়িতে যাওয়া হয়। সেখানে দেখা যায় – নাজমুলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছেন মা গোলেনুর। ছেলে হারানোর শোক আর সংসার চালানোর চিন্তায় যেন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে তার। কান্না করতে করতে হঠাৎ মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। কোনোভাবেই থামাছে না এই মায়ের আর্তনাদ। এমনভাবে ছেলের লাশ দেখতে হবে তা কখনও ভাবেননি তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জীবিকার তাগিদে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করছিলেন নাজমুল হোসেন। সারাদেশ যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে উত্তাল, তখন নাজমুল হোসেনও এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরই মধ্যে গত ৪ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন নাজমুল। সেই গুলি ঢুকে তার পেটের ভেতর। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যার পর মারা যায় নাজমুল। এরপর ধার-দেনা করে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এরপর সোমবার (১২ আগস্ট) গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক শোকাহত পরিবারটিকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। এই টাকা দিয়ে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) শহীদ নাজমুল হোসেনের রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করে স্বজনরা।

নিহত নাজমুল হোসেনের মা গোলেনুর বেগম কান্নাজড়ি কণ্ঠে বলেন, আমার চার শতক বসতভিটা ছাড়া আর কোনো সহায়-সম্বল নেই। একমাত্র ছেলে ছিল নাজমুল। বাবাহারা দু’মেয়েকে অতি কষ্টে বিয়ে দিয়েছি। স্বপ্ন ছিল- ছেলেটা চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরাবে। এরই মধ্যে ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এখন আমার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। এখন কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করব, সেই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে।

তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রাষ্ট্রীয় মার্যাদা দিতে হবে। তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়াসহ সহযোগিতা করতে হবে। তবে এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, নিহত নাজমুল হোসেনের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতেও পরিবারটির খেয়াল রাখা হবে।