মো. রফিকুল ইসলাম: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় দীর্ঘ ৮ বছর ধরে পড়ে আছে ভুল্লি নদীর ওপরে ভাঙ্গা ভুল্লি সেতুটি। এ সেতুর পাশ দিয়ে বাঁশের সাঁকোই লোকজনের চলাচলের একমাত্র ভরসা। উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের ভুল্লি বাজারের ভুল্লি নদীর ওপরে এ ভুল্লি সেতু। ২০১৭ সালের বন্যায় সেতুটির দুই পাশের রাস্তা ভেঙ্গে যায়। এরপর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। সেই থেকে প্রতিবছর ইউনিয়নের লোকজন ভাঙ্গা সেতুর পাশে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করে আসছেন। এ বাঁশের সাঁকো দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার মানুষ হেঁটে, রিকশাভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করছেন। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর একটি শাখা নদী হচ্ছে এ ভুল্লি নদী। নদীটি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরের নিকটবর্তী স্থান থেকে উৎপত্তি। এ ভুল্লি নদীটি পূর্বপাশে নীলফামারীর খোকশাবাড়ি ও পশ্চিমপাশে খানসামা উপজেলার পূর্ব বাসুলী গ্রাম অতিক্রম করে দুই জেলাকে বিভক্ত করেছে।
জানা গেছে, ৮ বছর পূর্বে বন্যায় সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর চলাচলের জন্য স্থানীয়রা চাঁদা তুলে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। প্রায় দেড় বছর পূর্বে চলাচলের সময় এ বাঁশের সাঁকো থেকে মোটরসাইকেলসহ পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান এক ব্যক্তি। তারপরেও এখানে সেতু তৈরির কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। এ নদীর ওপর ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নীলফামারী সদর ও খানসামা উপজেলার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। ছোট এ সাঁকোটি দিয়ে স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবি, কৃষক-শ্রমিকসহ সকল পেশাজীবি মানুষকে চলাচলে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল পরিবহন করতেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয় আনোয়ার হোসেন বলেন, সেতুখান ভাঙ্গি যাওয়ায় হামারলার খুবে অসুবিধা হইছে। এ্যাইঠে ম্যাল্লা এ্যাক্সিডেন্ট হইছে। অনেকে সাঁকো থাকি পড়ি যায়া আহতও হইছে। হামার এই সেতুটার খুব দরকার। সরকারের নিকট আবেদন করি, তাড়াতাড়ি যেন বিরিজটা করি দ্যান।
মফিজউদ্দিন বলেন, এ বাঁশের সাঁকো থেকে প্রায়শই গবাদিপশু ও মানুষ নদীতে পড়ে যায়। অনেক সময় রাতে চলাচল করতে গিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। কখন জানি দুর্ঘটনায় পতিত হই। গ্রামের মানুষের জন্য সেতুটা মেরামত করা খুবই প্রয়োজন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনেক কম উপস্থিত হয়ে থাকে। তাদেরকে অন্তত দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট দ্রুত ব্রিজটি তৈরির জন্য আবেদন করছি। একাধিক ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেন, সরকার রাস্তাঘাটের এতো উন্নয়ন করছে। সব রাস্তায় সেতু হয়। কিন্তু খানসামা উপজেলাবাসীর জন্য একটি সড়ক হলেও তাতে আজ সেতুর অভাবে যাতায়াতে কষ্ট করতে হচ্ছে। অথচ প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে হাজারো মানুষ চলাচল করে থাকে। সেতুটি মেরামত কিংবা নতুন একটি সেতু নির্মাণের দাবি করেন তাঁরা।
আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালের বন্যায় সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় সর্বসাধারণকে চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতি বছরই টিআর, কাবিখা দিয়ে এ সাঁকো তৈরি করতে হয়। মানুষের দূর্ভোগ লাঘবের জন্যেই সাঁকো দেই। সেতুটি নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করছি।
উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা শাহ মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, এ সেতুটি ত্রাণের। যা ২০১৭ সালের বন্যায় ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সেখানে যে পরিমাণের ব্রিজ লাগত সেই রেঞ্জের ব্রিজ ছিল না। তারা ১৫ মিটারের ব্রিজ করেছিল। প্রকৃত পক্ষে ৬০ মিটারের ব্রিজ প্রয়োজন। যেটা পরবর্তীতে আমরা ১০০ মিটারের আওতায় আনতে চেষ্টা করছি। আশা করছি, খুব শীঘ্রই সেতুটি নির্মাণ করা হবে।
© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | জাগো২৪.নেট