মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিটরুট চাষে কৃষক লুলুর বাজিমাত

নিভৃত অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক নেছার সরকার লুলু। কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে অনেকটা পরিচিত তিনি। নানান জাতের শাক-সবজি উৎপাদনই নেশা-পেশা তার। এরই মধ্যে চলতি রবিতে আবাদ করেছেন ভিনদেশি সবজি ‘বিটরুট’। পরীক্ষামূলভাবে বিটরুট চাষে সফল হয়েছেন তিনি। পাচ্ছেন আশানুরূপ ফলন ও ভালো দাম। ইতোমধ্যে সারা ফেলছে অন্যান্য কৃষকের মাঝে। ভোক্তার চাহিদা থাকায় খুব খুশি এই উদ্যোক্তা লুলু।

সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের রাঘবেন্দপুর কৃষিমাঠে দেখা গেছে- বিটরুট ক্ষেতের অপরূপ দৃশ্য। সবুজ পাতার উঁকিতে মাটির নিচে লুকিয়ে আছে গোলাকৃতির রক্তিম এই সবজি। থাইল্যান্ডের বিটরুট এখন নিজ এলাকায় আবাদ হওয়ার খবরে উৎসুক জনতা একনজর দেখতে ভির করছেন ক্ষেতে। আর কেউ কেউ মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করছেন ছবি ও ভিডিও। আবার অনেকে কিনেও নিচ্ছন পুষ্টিগুণের এই বিটরুট।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইদিলপুর ইউনিয়নের কাঁঠাল লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার একমাত্র ছেলে নেছার সরকার লুলু। তিনি লেখাপড়ায় হাইস্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেনি। পেশা হিসেবে বেছে নেন কৃষি কাজ। এরপর বাবার ৪ বিঘা ও বন্ধকী আড়াই বিঘাসহ মোট সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উৎপাদন করে আসছেন। এসব ফসলের ওপর চলে তার সংসার।

এরই ধারাবাহিকতায় নাছের সরকার লুলু ইউটিউবে দেখতে পান থাইল্যাণ্ডের সবজি বিটরুট আবাদের দৃশ্য। এ থেকে নিজেও পরিকল্পনা নেন এই সবজি আবাদের। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে যশোর জেলা থেকে মফিজল নামের এক কৃষকের কাছ থেকে ২০ গ্রাম বীজ ২৫০ টাকায় সংগ্রহ করেন। এরপর গেল ডিসেম্বর শেষ সপ্তাহের দিকে বপণ করে বীজতলায়। তা গজিয়ে ওঠার পর জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪০০ চারা রোপণ করা হয় জমিতে। আর সেই চারার মাটির নিচে এখন দেখা দিয়েছে স্বপ্নের বিটরুট। একেকটি সবজির ওজন প্রায় সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। এতে সার-সেচসহ অন্যান্য খরচ প্রায় আড়াই হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ফসল বিক্রি শুরু করেছেন ১০০ টাকা কেজি দামে। ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন কৃষক নাছের সরকার লুলু।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, বিটরুট খেলে মানবদেহে দ্রুত হজমে সাহায্য করে। যা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টিগুণ রয়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও ক্যানসার রোগের ঝুঁকি কমায় এই বিটরুট।

স্থানীয় কৃষক ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহারুল ইসলাম বলেন, অনেক আগে থেকে জানি যে, বিটরুট চাষ হয় থাইল্যান্ডে। কিন্তু সেই সবজি এখন আবাদ করছেন লুলু। ফলনও হয়েছে বাম্পার। দেখে অনেকটা ভালো লেগেছে। সামনের বছরে আমিও এই সবজির আবাদ করব।

উদ্যোক্তা নাছের সরকার লুলু বলেন, আমি বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষাবাদ করি। হঠাৎ ইউটিউবে বিটরুট চাষ পদ্ধতি দেখতে পাই। এ থেকে উৎসাহিত হয়ে খুব খোঁজাখুঁজি করে যশোর জেলা থেকে বীজ সংগ্রহের মাধ্যমে আবাদ করেছি। কিন্তু এই আবাদে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ চেয়েও তা পাইনি। তবুও হাল ছাড়িনি। ইউটিউব দেখে-দেখে দৃঢ় মনোবলে আবাদ করেছি। ফলন ও দাম ভালো পাচ্ছি। আগামী বছরে দুই বিঘা জমিতে বিটরুট চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।

সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম জানান, এ উপজেলায় প্রথম বিটরুট আবাদ করেছে কৃষক লুলু। যা খুবই লাভজনক ফসল। দোআঁশ ও এঁটেল মাটিতে বিটরুট চাষে যে কেউ লাভবান হতে পারবেন।

জাকির/জাগো২৪

 

জনপ্রিয়

বিটরুট চাষে কৃষক লুলুর বাজিমাত

প্রকাশের সময়: ০৬:১৭:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

নিভৃত অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক নেছার সরকার লুলু। কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে অনেকটা পরিচিত তিনি। নানান জাতের শাক-সবজি উৎপাদনই নেশা-পেশা তার। এরই মধ্যে চলতি রবিতে আবাদ করেছেন ভিনদেশি সবজি ‘বিটরুট’। পরীক্ষামূলভাবে বিটরুট চাষে সফল হয়েছেন তিনি। পাচ্ছেন আশানুরূপ ফলন ও ভালো দাম। ইতোমধ্যে সারা ফেলছে অন্যান্য কৃষকের মাঝে। ভোক্তার চাহিদা থাকায় খুব খুশি এই উদ্যোক্তা লুলু।

সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের রাঘবেন্দপুর কৃষিমাঠে দেখা গেছে- বিটরুট ক্ষেতের অপরূপ দৃশ্য। সবুজ পাতার উঁকিতে মাটির নিচে লুকিয়ে আছে গোলাকৃতির রক্তিম এই সবজি। থাইল্যান্ডের বিটরুট এখন নিজ এলাকায় আবাদ হওয়ার খবরে উৎসুক জনতা একনজর দেখতে ভির করছেন ক্ষেতে। আর কেউ কেউ মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করছেন ছবি ও ভিডিও। আবার অনেকে কিনেও নিচ্ছন পুষ্টিগুণের এই বিটরুট।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইদিলপুর ইউনিয়নের কাঁঠাল লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার একমাত্র ছেলে নেছার সরকার লুলু। তিনি লেখাপড়ায় হাইস্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেনি। পেশা হিসেবে বেছে নেন কৃষি কাজ। এরপর বাবার ৪ বিঘা ও বন্ধকী আড়াই বিঘাসহ মোট সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উৎপাদন করে আসছেন। এসব ফসলের ওপর চলে তার সংসার।

এরই ধারাবাহিকতায় নাছের সরকার লুলু ইউটিউবে দেখতে পান থাইল্যাণ্ডের সবজি বিটরুট আবাদের দৃশ্য। এ থেকে নিজেও পরিকল্পনা নেন এই সবজি আবাদের। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে যশোর জেলা থেকে মফিজল নামের এক কৃষকের কাছ থেকে ২০ গ্রাম বীজ ২৫০ টাকায় সংগ্রহ করেন। এরপর গেল ডিসেম্বর শেষ সপ্তাহের দিকে বপণ করে বীজতলায়। তা গজিয়ে ওঠার পর জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪০০ চারা রোপণ করা হয় জমিতে। আর সেই চারার মাটির নিচে এখন দেখা দিয়েছে স্বপ্নের বিটরুট। একেকটি সবজির ওজন প্রায় সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। এতে সার-সেচসহ অন্যান্য খরচ প্রায় আড়াই হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ফসল বিক্রি শুরু করেছেন ১০০ টাকা কেজি দামে। ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন কৃষক নাছের সরকার লুলু।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, বিটরুট খেলে মানবদেহে দ্রুত হজমে সাহায্য করে। যা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টিগুণ রয়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও ক্যানসার রোগের ঝুঁকি কমায় এই বিটরুট।

স্থানীয় কৃষক ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহারুল ইসলাম বলেন, অনেক আগে থেকে জানি যে, বিটরুট চাষ হয় থাইল্যান্ডে। কিন্তু সেই সবজি এখন আবাদ করছেন লুলু। ফলনও হয়েছে বাম্পার। দেখে অনেকটা ভালো লেগেছে। সামনের বছরে আমিও এই সবজির আবাদ করব।

উদ্যোক্তা নাছের সরকার লুলু বলেন, আমি বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষাবাদ করি। হঠাৎ ইউটিউবে বিটরুট চাষ পদ্ধতি দেখতে পাই। এ থেকে উৎসাহিত হয়ে খুব খোঁজাখুঁজি করে যশোর জেলা থেকে বীজ সংগ্রহের মাধ্যমে আবাদ করেছি। কিন্তু এই আবাদে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ চেয়েও তা পাইনি। তবুও হাল ছাড়িনি। ইউটিউব দেখে-দেখে দৃঢ় মনোবলে আবাদ করেছি। ফলন ও দাম ভালো পাচ্ছি। আগামী বছরে দুই বিঘা জমিতে বিটরুট চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।

সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম জানান, এ উপজেলায় প্রথম বিটরুট আবাদ করেছে কৃষক লুলু। যা খুবই লাভজনক ফসল। দোআঁশ ও এঁটেল মাটিতে বিটরুট চাষে যে কেউ লাভবান হতে পারবেন।

জাকির/জাগো২৪